রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি দিনের নায়ক ওয়াসিম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু ঘটে। চিত্রনায়ক ওয়াসিমের মৃত্যুর খবর বণিক বার্তাকে নিশ্চিত করেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও নায়ক জায়েদ খান। তিনি বলেন, অনেক দিন ধরেই ওয়াসিম ভাই বার্ধক্যজনিত নানা রোখে ভুগছিলেন। তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তবে তিনি কভিডে আক্রান্ত ছিলেন না। আমরা তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। আপনারা সবাই ওয়াসিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে ওয়াসিমের ছেলে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মানুষের ভালোবাসায় আমার বাবা চিত্রনায়ক ওয়াসিম। বাবা যেখানেই গেছেন সেখাই সম্মান পেয়েছেন। এ সম্মান দেয়ার জন্য বাবার ভক্ত ও দেশবাসীসহ সবার কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা কৃতজ্ঞ।’ গতকাল বাদ জোহর চিত্রনায়ক ওয়াসিমের জানাজা হয়েছে গুলশানের আজাদ মসজিদ ও বনানী কবরস্থানে। এরপর বেলা ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে বনানী কবরস্থানেই তার দাফন সম্পন্ন হয়।
দেড় শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করা এ অভিনেতা ১৯৫০ সালের ২৩ মার্চ চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি বডি বিল্ডিংয়ের জন্য ‘মিস্টার ইস্ট পাকিস্তান’
খেতাব অর্জন করেছিলেন। ১৯৭২ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তার। আর নায়ক হিসেবে যাত্রা হয় ১৯৭৪ সালে মহসিন পরিচালিত ‘রাতের পর দিন’
সিনেমার মাধ্যমে। এরপর ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া এসএম শফী পরিচালিত ‘দ্য রেইন’
সিনেমা তাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। তারপর লম্বা সময় ধরে লাইট-ক্যামেরার সামনে ছিলেন তত্কালীন বডি বিল্ডার খ্যাত এ অভিনেতা। ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রে শীর্ষ নায়কদের একজন ছিলেন তিনি। ফোক ফ্যান্টাসি আর অ্যাকশন ছবির অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনেতা ছিলেন তিনি। ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা অভিনয় করেছেন ওয়াসিম। শাবানা, ববিতা, কবরী, সুচরিতা, অঞ্জু ঘোষের বিপরীতে অভিনয় করেছেন তিনি। ওয়াসিম অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’,
‘রাতের পর দিন’,
‘দোস্ত দুশমন’,
‘দ্য রেইন’,
‘রাজদুলারী’,
‘বাহাদুর, ‘মানসী’,
‘সওদাগর’,
‘নরম গরম’
ইত্যাদি।
দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের মাতম থামছেই না। একের পর এক কিংবদন্তি শিল্পী চলে যাচ্ছেন না ফেরার দেশে। কভিডের এমন ভয়াবহ প্রভাব সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পড়বে এটা যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না নাটক কিংবা চলচ্চিত্র অঙ্গনের মানুষ। তারা শুধু প্রার্থনা আর ভালোবাসায় স্তব্ধ হয়ে আছেন। কেউ কিছুই যেন বলতে পারছেন না। এ শোক কাটিয়ে কবে আবার বিনোদন দুনিয়া স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য ফিরে পাবে তা নিশ্চিত করে কেউই জানেন না।