নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড

পঞ্চগড়ে ১০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, পঞ্চগড়

পঞ্চগড়ে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) গ্রাহকদের বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি টাকার কাছাকাছি। এর মধ্যে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বকেয়া বিলের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ বিল বাকি রয়েছে পঞ্চগড় পৌরসভায়। নেসকোর হিসাব অনুযায়ী, পৌরসভায় বকেয়ার পরিমাণ প্রায় কোটি টাকা।

সাধারণ গ্রাহকদের অভিযোগ, বছরের পর বছর মোটা অংকের বকেয়া বিল আদায়ে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে নেসকো। অন্যদিকে আবাসিক এলাকায় মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণীর গ্রাহকদের এক মাস বকেয়া থাকলেই সংযোগ বিচ্ছিন্নের হুমকি দিয়ে নানা রকম হয়রানি করা হচ্ছে।

স্থানীয় তুলার ডাঙ্গার বিদ্যুৎ গ্রাহক শাহানশাহ বলেন, বিল পরিশোধ করেছি, তার পরও মিটার রিডিংয়ের জটিলতার কারণে বারবার অতিরিক্ত বিল দিতে হচ্ছে। আশপাশের বেশ কয়েকটি বাড়িতে এভাবেই অতিরিক্ত বিলের রসিদ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতি মাসে যত ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করি, তারচেয়ে কম ইউনিটের বিলের রসিদ দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে বছরের যেকোনো একটি মাসে হঠাৎ করে বড় অংকের বিলের কাগজ ধরিয়ে দেয়া হয়। সে সময় গ্রাহকরা সেই বড় অংকের বিলটি পরিশোধ করতে পারেন না। ওই বকেয়ার জের ধরেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার হুমকি দেয় নেসকোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

পঞ্চগড় সদরের নেসকোর গ্রাহক তানজিরুল ইসলাম বলেন, নেসকো খামখেয়ালিপনা শুরু করেছে। আমার মিটারের রিডিংয়ের চেয়ে অতিরিক্ত বিলের রসিদ দিয়েছে। আবার কেউ এক-দুই মাস বিল বাকি রাখলে তার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। কিন্তু বছরের পর বছর যারা লাখ লাখ টাকা বকেয়া রেখেছে, তাদের ধরতে পারছে না।

নেসকো সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে জেলায় নেসকোর গ্রাহকদের কাছে বকেয়া প্রায় ১০ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ বিল বাকি রয়েছে পঞ্চগড় পৌরসভায়। নেসকোর হিসাব অনুযায়ী, পৌরসভায় বকেয়ার পরিমাণ প্রায় কোটি টাকা। দীর্ঘদিন ধরে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছেন না বলেও তাদের অভিযোগ। এর পরই রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। জেলা শহরের এসব প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ বিল সর্বনিম্ন লাখ থেকে ২০ লাখ পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত শতাধিক প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। গত দুই মাসে অংক আরো বেড়েছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান এখনো চলছে মিটার ছাড়াই।

বড় বকেয়ার তালিকায় রয়েছে সরকারি বাসভবন প্রতিষ্ঠানের নামও। সড়ক জনপথ বিভাগের আবাসিকে বকেয়া রয়েছে প্রায় লাখ টাকা, গণপূর্তের আবাসিকে লাখ, জেলা শহরের উপজেলা ট্যাক্স অফিসে বকেয়া রয়েছে লাখ ৭৭ হাজার, জেলা জুডিশিয়াল জজ হাউজে ৮৬ হাজার, জেলা ক্রীড়া সংস্থায় লাখ ৫৭ হাজার, অফিসার্স ট্রেনিং কমপ্লেক্সের ডিসি কলোনিতে লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এশিয়া ডিস্টিলারিজে লাখ গ্রিন এনার্জি টি ফ্যাক্টরিতে সাড়ে লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে।

এসব প্রতিষ্ঠানের বকেয়া বছরের পর বছর পড়ে থাকলেও তা উত্তোলন করতে পারেনি নেসকো। স্থানীয় গ্রাহকদের অভিযোগ, নেসকোর কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করে এভাবেই দিব্যি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে চলেছে এসব প্রতিষ্ঠান।

দারুল উলুম মদিনাতুল ইসলাম মাদ্রাসার মুহতামিম সাইফুর রহমান বলেন, আমাদের মাদ্রাসাই চলছে টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে। শিক্ষার্থীদের কাছে নেয়া সামান্য বেতন দিয়েই মাদ্রাসার সব কাজ চলে। আমাদের অন্য কোনো আয়ের উৎস না থাকায় বকেয়া পড়তে পড়তে বিদ্যুৎ বিল পর্যায়ে এসেছে। আমরা চাই, সরকার যেন মসজিদ-মাদ্রাসার বিদ্যুৎ বিল মওকুফের ব্যবস্থা করেন।

পঞ্চগড় পৌরসভার সচিব মজিবর রহমান বলেন, নেসকো যতটা বকেয়ার কথা বলছে তা ঠিক নয়। আমরা অন্য পৌরসভাগুলোতেও খবর নিয়েছি। তাদের তুলনায় আমাদের বিদ্যুৎ বিল বেশি করা হচ্ছে। মিটারেও সমস্যা রয়েছে। আমরা বিষয়টি নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে বসার কথা রয়েছে। সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা বকেয়া বিল পরিশোধ করতে পারছি না।

নেসকো পঞ্চগড়ের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আতিফুর রহমান বলেন, আমি যোগদান করার আগেই এসব বকেয়া পড়ে গেছে। মিটার ছাড়াই চলত, এমন ৫৩টি প্রতিষ্ঠানে মিটার লাগানোর ব্যবস্থা করেছি। অনেক বাধা এসেছে। পৌরসভার বিল নিয়ে একটু জটিলতা তৈরি হয়েছে। তারা মিটার ছাড়াই অনেক দিন বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছে। সেটি আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। এছাড়া যাদের বড় বকেয়া রয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত শ্রেণীর গ্রাহকদের হয়রানির কথা অস্বীকার করেছেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন