সেতুর প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামত হয়নি সাত মাসেও

আসন্ন বর্ষায় বড় ক্ষতির আশঙ্কা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া

গত বর্ষার শেষ দিকে গড়াই নদের ওপর শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতুর প্রতিরক্ষা বাঁধে বড় ধরনের ধসের ঘটনা ঘটে। বাঁধ ধসের ঘটনাস্থলের ৯০ মিটারের মধ্যেই রয়েছে ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মূল সেতু। আগামী দুমাসের মধ্যেই আসছে বর্ষা। কিন্তু বাঁধটি সাত মাসেও মেরামত করা হয়নি। এখনো প্রাক্কলনই তৈরি হয়নি, তবে সার্ভে চলছে। চিঠিপত্র চালাচালি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এদিকে বর্ষা এলে ভাঙা বাঁধে আবার ভাঙনের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা। অন্যদিকে এত স্বল্প সময়ে একটি ভাঙন রক্ষাকারী বাঁধে ধসের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট অনেক প্রকৌশলী।

এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আখতার অ্যাসোসিয়েট সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায়। সেতুর দৈর্ঘ্য ৬০৪ মিটার, প্রস্থ দশমিক মিটার। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৭৮ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে সেতুটি উদ্বোধন করা হয়।

সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত কুষ্টিয়া এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, গত বছরের অক্টোবরের শুরুতে ধস নামে সেতুটির প্রতিরক্ষা বাঁধে। এলজিইডি বলছে, অদূরেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদীখননের কাজ চলছিল। ড্রেজিং করার ফলে পানির নিচে ঘূর্ণি সৃষ্টি হওয়ায় ধসের ঘটনা ঘটে। ড্রেজিংয়ের কাজ অন্যত্র সরিয়ে নিলেও বাঁধের ভাঙন বাড়তে থাকে। বর্ষা শেষে দেখা যায়, বাঁধের প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশি ব্লক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে সেতু থেকে ধসকবলিত স্থানের দূরত্ব মাত্র ৯০ মিটার।

ধস পরিদর্শন করেছেন কুষ্টিয়া এলজিইডির এমন কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, ব্লকগুলো একটি অন্যটির সঙ্গে সংযুক্ত। এগুলোর বন্ধন ছুটে গেছে। সামনে ভারি বর্ষণ হলে ভাঙন বাড়তে শুরু করবে। এটি সেতুর কাছে চলে যাবে। ফলে বাঁধ সেতুতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

কুষ্টিয়ার একটি বেসরকারি কনসালট্যান্সি ফার্মের এক প্রকৌশলী অভিযোগ করে বলেন, বাঁধ নির্মাণের সময় ব্লকগুলো সঠিকভাবে বসানো হয়নি। ধসে যাওয়া ব্লকের নিচে কোনো জিও ব্যাগ স্থাপন করা হয়নি। শুধু বালির ওপর একটি সিনথেটিক অ্যাপ্রোন দিয়ে ব্লক বসানো হয়েছিল। কারণেই কয়েক বছরের মধ্যেই বাঁধ ধসে গেছে। এদিকে দ্রুত বর্ষা চলে আসায় আশঙ্কা বাড়ছে। কারণ এখন শুরু করলেও কাজ শেষ হবে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। কারণ জুনের আগেই বর্ষা শুরু হবে।

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুলের বাড়ি বাঁধের অন্য প্রান্ত হরিপুরে। তিনি বলেন, যে কারণে বাঁধের ব্লক ধসেছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। তার ভিত্তিতে এখনই মেরামত করতে হবে। ধসের জায়গাটিতেই শুধু ব্লক দিলে হবে না। ব্লকগুলোর বাঁধন আলগা হয়ে গেছে কিনা দেখা দরকার আছে। তা না হলে আগামী বর্ষায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। প্রতিরক্ষা বাঁধের ধস সেতুর দিকে আসতে পারে বলেও মনে করছেন তিনি।

এলজিইডির কুষ্টিয়া নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুর রহমান মণ্ডল বলেন, আমরা কাজ করি। গত সপ্তাহেও সার্ভে টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তিনি বলেন, বর্ষায় ধস হওয়ায় পানি নেমে যাওয়ার জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম। ঢাকা অফিস থেকে ডিজাইন সেলের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম এর আগে পরিদর্শন করেছেন। সে সময় নদীতে পানি থাকায় তিনি বলে যানপানি একেবারে নেমে গেলে মেরামত প্রকল্পের প্রাক্কলন করে পাঠাতে। প্রাক্কলন পাঠানো হয়েছে। প্রাক্কলন পেলে হেড অফিসের ডিজাইন সেল থেকে বিশেষজ্ঞ এসে দেখে তা অনুমোদন করবেন। প্রক্রিয়া শেষ করতে দেরি হয়ে যাবে কিনাএমন প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী জাহিদুর রহমান বলেন, বর্ষার আগেই যাতে সব কাজ শেষ করা যায় সে চেষ্টাই চলছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন