গম সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কায় নাটোরের খাদ্য বিভাগ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, নাটোর

খোলাবাজারে গমের দামের সঙ্গে সরকার নির্ধারিত দামের ব্যবধান মাত্র টাকা। পরিবহন খরচসহ হিসাব করলে খাদ্যগুদামে গম সরবরাহ করলে লোকসানে থাকেন কৃষক। তাই সরকারের কাছে গম বিক্রিতে অনীহা দেখা দিয়েছে নাটোরের কৃষকদের মাঝে। ফলে চলতি মৌসুমে সরকারিভাবে গম সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

নাটোরে সম্প্রতি প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে অভ্যন্তরীণ গম সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। ২৮ টাকা কেজি দরে গম সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করেন নাটোর- আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল। অনুষ্ঠানে নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রবীন্দ্র লাল চাকমা, নাটোর খাদ্য গোডাউন কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সময় একজন কৃষকের কাছ থেকে এক টন গম সংগ্রহ করেন তারা।

তবে সরকারি মূল্যে এবং খোলাবাজারে গমের দামে বেশি পার্থক্য না থাকায় গত বছরের মতো এবারো গম সংগ্রহ অভিযান মুথ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছর গমের বাজারমূল্য বেশি থাকায় লক্ষ্যমাত্রার এক ভাগ গমও সংগ্রহ করতে পারেনি নাটোর খাদ্য বিভাগ।

সূত্র জানায়, নাটোর সদর উপজেলায় হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে এবার গমের আবাদ হয়। উপজেলায় সাড়ে আট হাজার টন গম উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদিত গমের বেশির ভাগ বিক্রি হয় শহরতলির তেবাড়িয়া হাটে।

সেখানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত হাটে প্রতি কেজি গম বিক্রি হয়েছে ২৭ থেকে সাড়ে ২৭ টাকা। অর্থাৎ প্রতি মণ হাজার ৮০ থেকে হাজার ১০০ টাকা। কিন্তু সরকারিভাবে গমের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ২৮ টাকা। সে হিসাবে প্রতি মণের দাম আসে হাজার ১২০ টাকা। খাদ্যগুদাম পর্যন্ত গম আনতে কৃষকের পরিবহন খরচ গুনতে হয়। ফলে খোলাবাজারে গমের দাম বেশি পাবেন কৃষক। লোকসানের আশঙ্কায় তারা খাদ্যগুদামে গম দিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। বাজারে দাম আরো বাড়লে সংগ্রহ অভিযান মুখ থুবড়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে জেলা খাদ্য বিভাগ।

জেলা খাদ্য অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ২৮ টাকা কেজি দরে জেলায় গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হাজার ৮০২ টন। এর মধ্যে নাটোর সদরে ৮১১ টন, নলডাঙ্গায় ৩৬২ টন, সিংড়ায় ২৪৫ টন, গুরুদাসপুরে ৫৬৭ টন, বড়াইগ্রামে হাজার ৩১৮ টন, লালপুরে হাজার ২৪০ টন এবং বাগাতিপাড়ায় হাজার ২৫৯ টন গম সংগ্রহ করার কথা রয়েছে। প্রত্যেক কৃষক তিন টনের বেশি গম সরবরাহ করতে পারবেন না। উদ্বোধনী দিনে হাজার ২০০ কেজি গম সরবরাহ করেছেন কৃষক।

বিষয়ে সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি এলএসডি) মো. মফিজ উদ্দিন বলেন, গত বছর এক ছটাক গমও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। গত বছরও সরকারিভাবে ২৮ টাকা কেজিপ্রতি গমের দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কিন্তু বাজারে গমের দাম ছিল এর চেয়ে বেশি। তাই জেলার কৃষকরা খাদ্যগুদামে গম সরবরাহ করেননি। ফলে গম সংগ্রহ অভিযান সফল হয়নি। এবারো বাজার এবং সরকারের বেঁধে দেয়া দামের মধ্যে খুব একটা ফারাক নেই। সেক্ষেত্রে গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মফিজ উদ্দিন বলেন, আমরা লক্ষ্যমাত্রার পুরোটা সংগ্রহ করতে না পারলেও কিছুটা করতে পারব। সরকারের বেঁধে দেয়া দামে গম সংগ্রহের চেষ্টা করছি।

নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদুল ইসলাম বলেন, সরকারিভাবে প্রতি কেজি গমের মূল্য ধরা হয়েছে ২৮ টাকা। কিন্তু বাজারে ২৭ থেকে সাড়ে ২৭ টাকা প্রতি কেজি গমের দাম। ফলে কৃষকরা খাদ্যগুদামে গম দিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন