প্রথম দিনেই বাতিল সাত বিশেষ ফ্লাইট

ভোগান্তি বিদেশগামী কর্মীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

লকডাউনের মধ্যেই গতকাল (শনিবার) থেকে বিশেষ ফ্লাইট চালু হয়েছে প্রবাসী কর্মী অধ্যুষিত পাঁচ দেশে। তবে প্রথম দিনেই বিঘ্ন ঘটে উদ্যোগে। সৌদি কর্তৃৃপক্ষের অনুমতি পেতে দেরি স্বল্প সময়ের নোটিসে যাত্রী না পাওয়ায় গতকালই বাতিল হয়েছে সাতটি বিশেষ ফ্লাইট। ফলে বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে ভোগান্তিতে পড়েন এসব ফ্লাইটের মাধ্যমে বিদেশ যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা ৮২০ জন প্রবাসী কর্মী। নির্ধারিত ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিক্ষোভ করেন বিদেশগামী কর্মীরা। এছাড়া সোনারগাঁও হোটেলের সৌদি এয়ারলাইনসের অফিসের সামনে অপেক্ষারত প্রবাসীরাও বিক্ষোভ করেন। তবে সন্ধ্যায় সৌদি কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়ার পর জেদ্দাগামী নির্ধারিত ফ্লাইটসহ বাতিল হওয়া কয়েকটি ফ্লাইট চালু করে বিমান।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাঁচটি ফ্লাইট ছিল। এর মধ্যে চারটি বাতিল হয়েছে। বাতিল হওয়া ফ্লাইটের মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবের দাম্মামে একটি, রিয়াদে একটি, দুবাইয়ে দুটি ফ্লাইট। প্রথম বাতিল হওয়া বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইনসের রিয়াদগামী ফ্লাইট (বিজি-৫০৩৯) সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। ওই ফ্লাইটের যাত্রী ছিলেন ৩১৪ জন। এয়ারলাইনসের নির্দেশনা অনুসারে ঘণ্টা আগে রাত ১টার মধ্যেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসেছিলেন যাত্রীরাও। কিন্তু ফ্লাইটটি বাতিল হয়েছে। কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে রাতে প্রবাসী কর্মীরা বিক্ষোভ করেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। পরে এসব যাত্রীকে হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করে বিমান। পরবর্তী সময়ে বেলা ২টা ৫০ মিনিটের সৌদিগামী ফ্লাইটও বাতিল হয়। ফ্লাইটটির যাত্রী ছিলেন ১৫১ জন। এছাড়া যাত্রী কম থাকায় দুবাইয়ের ফ্লাইট দুটি বাতিল করা হয়।

বিমানের জনসংযোগ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার প্রসঙ্গে জানান, সৌদি আরবে বিশেষ ফ্লাইট নামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। তবে অনুমতি না পাওয়ায় ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। তিনি বলেন, বিশেষ ফ্লাইট চালুর ঘোষণার পর সব যাত্রীকে মোবাইলে বার্তা পাঠানো হলেও আজ (শনিবার) দুবাইয়ের দুটি ফ্লাইটের জন্য মাত্র ২২ জন ২৫ জন যাত্রী নিশ্চিত করেছে। যাত্রী কম থাকায় ফ্লাইটটি বাতিল হয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের এয়ারলাইনস ফ্লাই দুবাইয়ের দুটি ফ্লাইটও গতকাল বাতিল হয়েছে। আর ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসও দুবাইগামী একটি ফ্লাইট বাতিল করেছে। তবে ওমানের বাজেট এয়ারলাইনস সালাম এয়ার গতকাল ঢাকায় এসে যাত্রী নিয়ে গেছে।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম জানানপ্রথম দিনে দুবাইয়ের একটি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। মাত্র ২০ জনের মতো যাত্রী পাওয়া গেছে। এখানে শুধু যাত্রী থাকলেই হচ্ছে না, করোনা টেস্টের রিপোর্টও লাগবে। লকডাউনে অনেকে আসতেও পারছেন না। সব মিলিয়ে যাত্রী সংকট আছে। তিনি বলেন, সপ্তাহে নয়টি ফ্লাইট ঢাকা থেকে দুবাই, সাতটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে মাসকাট, চারটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে দোহা একটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরে পরিচালনা করা হবে।

এদিকে গতকাল বিকালে সৌদি এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট ছিল। কিন্তু ফ্লাইটটি আদৌ যাবে কিনা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত না করায় ভোর থেকেই রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় সোনারগাঁও হোটেলের সৌদি এয়ারলাইনসের অফিসের সামনে অপেক্ষা করতে থাকেন প্রবাসীরা। অপেক্ষারত সৌদিগামী যাত্রীরা বলেন, আজ সৌদি এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট ছিল; সেটি ছাড়বে কিনা, তারা যেতে পারবেন কিন্তু বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য এখানে অপেক্ষা করছেন। এখন পর্যন্ত সৌদি এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষের কেউ তাদের বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেনি। তারা অপেক্ষায় আছেন।

তবে সৌদি এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপক (বুকিং অ্যান্ড সেলস) জাহিদুল ইসলাম জানান, আজ (রোববার) থেকে সৌদি এয়ারলাইনসের ফ্লাইট চলবে। ১৪ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত যাদের টিকিট ছিল, তাদের নতুন টিকিট দেয়া হবে। ২০ তারিখের পরের টিকিটধারীদের বিষয়ে পরে জানানো হবে।

প্রসঙ্গত, প্রবাসী কর্মীদের কর্মস্থলে ফেরা নিশ্চিত করতে গতকাল সকাল ৬টা থেকে পাঁচটি দেশে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) পাঁচটি দেশ হচ্ছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার সিঙ্গাপুর। শুধু প্রবাসী কর্মীরা এসব ফ্লাইটে যেতে পারবেন। আর দেশে এলে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে প্রবাসী কর্মীদের।

পাঁচ দেশে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ১২টি এয়ারলাইনসকে অনুমতি দিয়েছে বেবিচক। এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস, ওমান এয়ার, সালাম এয়ার, কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস, ইতিহাদ, এয়ার অ্যারাবিয়া, এয়ার অ্যারাবিয়া আবুধাবি, ফ্লাই দুবাই সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন