রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, রাবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরখননের মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। প্রকল্পের শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে একাধিকবার খননকাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করছেন না অভিযুক্ত ইজারাদার মাসুদ রানা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। প্রশাসনের এমন নিস্ক্রিয়তায় চরম ক্ষোভ হতাশা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের মার্চে শহীদ শামসুজ্জোহা হলের পূর্বপাশের প্রায় ১০ বিঘা জমিতে পুকুরখননের দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে সর্বোচ্চ দর হেঁকে চার বছরের জন্য প্রকল্পটির ইজারা পান বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বুধপাড়ার বাসিন্দা মতিহার থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিনের ভাই মাসুদ রানা।

কৃষি প্রকল্প সূত্র জানায়, গত বছরের ২১ জানুয়ারি কৃষি প্রকল্পের ১১৯তম সভায় এবং মার্চ সিন্ডিকেট সভায় ক্যাম্পাসে পুকুরখনন প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। পরবর্তী সময়ে ২১ সেপ্টেম্বর ১৭টি শর্তে দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেখানে ১৩ নম্বর শর্তে পুকুরের পাড় বাঁধাইয়ের পর অতিরিক্ত মাটি সর্বোচ্চ ৩০০ গজ দূরে ফেলে রাখার শর্তারোপ করা হয়। ওই মাটি কৃষি প্রকল্পের আওতায় থাকবে বলে জানানো হয়।

তবে শর্ত ভঙ্গ করে গত ২৭ মার্চ থেকে খননকৃত পুকুরের মাটি ট্রাক ভর্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নিয়ে যেতে থাকেন মাসুদ রানা।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩১ মার্চ ১০ এপ্রিল পৃথক দুটি চিঠিতে শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে পুকুরখনন বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

নির্দেশ উপেক্ষা করে খননকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন অভিযুক্ত মাসুদ রানা। একই সঙ্গে পুকুরের খননকৃত মাটি পার্শ্ববর্তী একটি ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ প্রশাসনের।

গতকাল দুপুরে পুকুরখনন প্রকল্পের স্থানে একটি এক্সক্যাভেটর ১৭টি ট্রাক্টর অবস্থান করতে দেখা যায়। ট্রাক্টরগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন সুইপার কলোনি বুধপাড়ার রাস্তা ধরে মাটি বহন করতে দেখা গেছে।

সেখানে কর্মরত এক শ্রমিক জানান, মাটিগুলো পার্শ্ববর্তী বাবুর ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শর্ত ভঙ্গ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে মাটি স্থানান্তরের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মাসুদ রানা বলেন, নিয়ম মেনেই মাটি বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শর্ত ভঙ্গের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি প্রকল্পের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি উপ-উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ক্যাম্পাসে শর্তসাপেক্ষে পুকুর খনন করতে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই শর্ত ভঙ্গ করে বেপরোয়াভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে মাটি স্থানান্তর করে যাচ্ছেন মাসুদ রানা। আমরা তাকে মৌখিকভাবে দুবার চিঠি দেয়ার মাধ্যমে খননকাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছি। তিনি নির্দেশ উপেক্ষা করে খননকাজ মাটি স্থানান্তর অব্যাহত রেখেছেন।

তিনি আরো বলেন, বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অতি দ্রুত কৃষি প্রকল্পের একটি সভা আহ্বান করা হবে। এছাড়া আমি বিষয়টি উপাচার্য মহোদয়কে লিখিতভাবে জানিয়েছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন