বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এশিয়ার ইস্পাত রফতানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা

বণিক বার্তা ডেস্ক

ইউরোপ মার্কিন খনিগুলোর স্বল্পতার কারণে সম্প্রতি ২০০৮ সালের পর সর্বোচ্চে রয়েছে ইস্পাতের দাম। ফলে অঞ্চলগুলোতে এশিয়া থেকে ইস্পাত আমদানির সম্ভাবনা বাড়ছে। এমনকি চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত উৎপাদন বৃদ্ধির আগে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হওয়ারও সম্ভাবনা নেই। ফলে বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এশিয়া থেকে রফতানি বৃদ্ধির সুযোগ আরো বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। খবর এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্লাটস।

বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের মিডওয়েস্ট হট রোলড কয়েলের দাম ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। একই সঙ্গে উত্তর ইউরোপে বেড়েছে ৩৬ দশমিক শতাংশ পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের বাজারে ইস্পাত সরবরাহের সময়ও বেড়েছে। ফলে অনেক কারখানাই প্রথম প্রান্তিকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইস্পাত মজুদ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সমস্যা উত্তরণে চলতি গ্রীষ্মে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইস্পাত আমদানির কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে ইস্পাত সরবরাহের ঝুঁকি কিছুটা কমে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে হঠাৎ করেই চাহিদার তুলনায় জোগান কমে যাওয়ায় ইস্পাতের দাম বাড়তে থাকে। একই সময়ে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও চরমভাবে সেমিকন্ডাক্টর সংকটে ভুগছিল। ইউরোপেও ইস্পাতের চাহিদা দ্রুতই বৃদ্ধির ফলে জোগান নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে ইস্পাতের দাম আরো বৃদ্ধির আশা করছেন বিশ্লেষকরা। তবে বছরজুড়ে কভিড-১৯ টিকার সরবরাহ বৃদ্ধিতে লকডাউন শিথিল করার ফলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হলেই দরবৃদ্ধির আশা পূর্ণ হবে বলেও মত বিশ্লেষকদের।

দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রে ইস্পাত রফতানিতে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক ছাড় পাওয়ার ফলে দেশটিতে আরো বেশি পরিমাণ ইস্পাত রফতানির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। জাপান শুল্ক ছাড় পেলেও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির ইস্পাত রফতানিও বৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে। জাপানের অর্থনীতি, ব্যবসা শিল্প মন্ত্রণালয়ের পূর্বাভাস বলছে, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির ইস্পাত রফতানি বাড়বে ২১ শতাংশ পর্যন্ত, যা সাত মিলিয়ন মিটার পরিমাণ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।

এদিকে ইস্পাতের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে নিজেদের উৎপাদন রফতানি বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিয়েছে চীন। ফলে বিশ্ববাজারে চীনের ইস্পাত শিল্প আবারো প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান দখল করতে যাচ্ছে বলে জানান বিশ্লেষকরা।

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্লাটসের মতে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের ইস্পাত রফতনি বেড়েছে ২৪ শতাংশ পর্যন্ত, যা পরিমাণে ১৭ দশমিক ৬৮৩ মিলিয়ন মিটার। তবে পরিমাণ প্রতি মাসে দশমিক মিলিয়ন মিটারে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে চীন। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্লাটসের বিশ্লেষকদের মতে, চীন বছরে অন্তত ৬৫ মিলিয়ন মিটার ইস্পাত রফতানির লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে। চীনের চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রা গত বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি, যা ১১ মিলিয়ন মিটার পরিমাণের কাছাকাছি।

যদিও চীন ইস্পাত রফতানি বন্ধের উদ্দেশ্যে তার উৎপাদন কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তবে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশটি সে সিদ্ধান্ত স্থগিত করার মতো পদক্ষেপ নিতে পারে। চীন তার বর্তমান উৎপাদন ১৩ শতাংশ কমিয়ে আনলেও বিশ্ববাজারে ইস্পাত রফতানিতে বেশ ভালো প্রভাব রাখতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে ইস্পাতের এমন দরবৃদ্ধি আকর্ষণ করেছে এশিয়ার দেশ ভারতকেও। দেশটি ইস্পাত রফতানিতে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার লক্ষ্য হাতে নিয়েছে বলে জানা যায়। ভারতের যৌথ পরিকল্পনা কমিটির তথ্যমতে, গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারতের ইস্পাত রফতানি বেড়েছে ৪৯ দশমিক শতাংশ, যা পরিমাণে ১৫ দশমিক মিলিয়ন মিটার। গত বছর মহামারীজনিত অর্থনৈতিক মন্দার ফলেও চীন ভিয়েতনামে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ইস্পাত রফতানি করেছে ভারত। চলতি বছর দেশটির উৎপাদকরা ইউরোপের বাজারকে লক্ষ্য করে বিপুল পরিমাণ উৎপাদন রফতানির লক্ষ্য হাতে নিয়েছে।

বছরের শুরুতে উত্তর ইউরোপে হার্ডনেস রকওয়েল সির দাম মিটারপ্রতি ৬৫ ডলার ছিল, যা ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারের তুলনায় বেশি। এপ্রিল নাগাদ দাম মিটারপ্রতি ৩০০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছে। ফলে ইউরোপের বাজারে চলতি বছর ৪০ হাজার মিটার ইস্পাত রফতানির লক্ষ্য হাতে নিয়েছে ভারত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন