দুই দশকে বেড়েছে দেশের পাঁচ শহরের তাপমাত্রা

সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ঢাকায়, কম রাজশাহীতে

জেসমিন মলি

নগরায়ণের ফলে গত দুই দশকে দেশের বড় পাঁচ শহরে তাপমাত্রা বেড়েছে। রাজধানী ঢাকা ছাড়া তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া অন্য চারটি শহরের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী সিলেট। সাম্প্রতিক এক গবেষণার তথ্য বলছে, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় ঢাকায় দশমিক ৭৪ ডিগ্রি, চট্টগ্রামে দশমিক ৯২, খুলনায় দশমিক ২৭, সিলেটে দশমিক ১০ রাজশাহীতে শূন্য দশমিক ৭৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে। আবার ঢাকায় যেসব স্থানে উচ্চ ঘনবসতি রয়েছে সেখানকার তাপমাত্রা বাড়ার হার ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সারফেস আরবান হিট আইল্যান্ড ইনটেনসিটি ইন ফাইভ মেজর সিটিজ অব বাংলাদেশ: প্যাটার্নস, ড্রাইভার অ্যান্ড ট্রেন্ডস শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেশের বড় শহরগুলোতে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার এমন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া কানাডার ছয়জন গবেষক।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, গত দুই দশকে ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি আর তুলনামূলক কম বেড়েছে রাজশাহীর তাপমাত্রা। জনজীবনে তাপমাত্রা বাড়ার বিরূপ প্রভাব এরই মধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। তাপমাত্রার ভিন্নতায় দেখা দিচ্ছে রোগবালাইয়ের প্রকোপ। এক সময় ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ না থাকলেও এখন তা নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে গবেষক দলের একজন অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড প্লানেটারি সায়েন্সেস বিভাগের আশরাফ দেওয়ান বণিক বার্তাকে জানান, ২০০০ থেকে শুরু করে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময়ের অর্থাৎ দুই দশকের স্যাটেলাইটের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষণাকর্মটি করা হয়েছে। গবেষণায় যে পাঁচ শহরের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে, তার সবগুলোতেই তাপমাত্রা গ্রামের তুলনায় বেড়েছে। তাপমাত্রা বাড়ার কারণ হিসেবে গবেষক জানান, গত দুই দশকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার নগরায়ণের ফলে কংক্রিটের বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরির পরিমাণও কয়েক গুণ বেড়েছে। ফলে এসব শহরের তাপমাত্রা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরায়ণের ফলে শহরে ক্রমাগত কৃষিজমির পরিমাণ কমছে। একই সঙ্গে কমছে সবুজ আচ্ছাদিত জায়গাও। অধিক জনসংখ্যার চাপে নির্মাণ করতে হচ্ছে বহুতল ভবনসহ নানা অবকাঠামো। এসব অবকাঠামো নির্মাণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যেসব আনুষঙ্গিক উপাদান ব্যবহার করা হয়, তা তাপ অসংবেদনশীল। ফলে অধিকাংশ অবকাঠামো দিনের বেলা উত্তপ্ত থাকে, আবার রাতে যে হারে ঠাণ্ডা হওয়ার কথা তা না হয়ে তাপ ধরে রাখে। উদ্বৃত্ত তাপই আশপাশের পরিবেশের সঙ্গে মিশে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

ঢাকাসহ অন্য চারটি শহরে ভূমি ব্যবহারের যথাযথ নীতিমালা না মেনে গড়ে উঠেছে বহুতল আবাসিক বাণিজ্যিক ভবন। বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে ওঠা অবকাঠামোর অধিকাংশই অপরিকল্পিত। ঢাকা শহরে দিন দিন কমছে গাছপালা খোলা জায়গার পরিমাণ। একই অবস্থা অন্য চার শহরেরও।

ঢাকা শহরের উন্নয়নে কার্যকর কোনো নীতিমালা না থাকায় যেখানে-সেখানে গড়ে ওঠা অবকাঠামোর ফলে ভূমির যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। ১৯৫৯ সালে মাস্টারপ্ল্যানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে শহর। নিয়ন্ত্রণে শৈথিল্যের কারণে শহরের অবকাঠামো উন্নয়নে সে প্ল্যানও অনুসরণ করা হয়নি। ওই সময়ের তুলনায় এখন জনসংখ্যা বেড়েছে ৩০ গুণ। সে অনুযায়ী মাস্টারপ্ল্যান আধুনিকায়ন করা হয়নি, যার প্রভাব পড়েছে উন্নয়নে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের নগরায়ণ জনসংখ্যার তুলনায় ঢাকা, চট্টগ্রাম বা খুলনার বার্ষিক বৃদ্ধির হার গড়ে ২০০ শতাংশেরও বেশি বলে বিভিন্ন গবেষণায় তুলে ধরা হয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে জনজীবনে অস্বস্তির সঙ্গে নিয়ে আসছে নানা ধরনের রোগবালাইও। ২০০০ সালের আগে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ না থাকলেও এখন তা নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডেঙ্গু বিস্তারের কারণ হিসেবে উষ্ণায়নের পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে স্থপতি মাহফুজুল হক জগলুল বলেন, আমাদের শহরগুলোতে জনঘনত্ব তুলনামূলক বেশি। ফলে জনসংখ্যার চাপ সামলাতে প্রয়োজনেই আমাদের বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ করতে হয়। চাইলেই এসব অবকাঠামো নির্মাণে যে ধরনের উপকরণ ব্যবহার করা হয়, তা বদলে ফেলা সম্ভব নয়। আবার ক্রমাগত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে, সেটিও দুশ্চিন্তার বিষয়। কারণে উষ্ণায়ন কমাতে নগরায়ণ করতে হবে পরিকল্পনা অনুযায়ী। একই সঙ্গে বাড়াতে হবে সবুজে আচ্ছাদিত জায়গার পরিমাণ। নির্মাণের বিধিবিধান মেনে স্থপতিরা অবকাঠামোর ডিজাইন করে দেন, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। দেখা যায়, যে পরিমাণ জায়গা ছাড়ার কথা ছিল বা যতটুকু সবুজ জায়গা রাখার কথা ছিল তা করা হয়নি। সেজন্য তদারকি বাড়াতে হবে, যাতে নির্মাণে নিয়মকানুন যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন