চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ

শ্রমঘন সাত অঞ্চলে নজরদারি জোরদার

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা সংক্রমণ রোধে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। তবে সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সচল থাকবে শিল্প-কারখানা। কভিডকালে সচল কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ হচ্ছে কিনা তা বিশেষ নজরদারির মাধ্যমে নিশ্চিতে কার্যক্রম রয়েছে শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের। আসন্ন কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে কার্যক্রম আরো জোরদার করতে শ্রমঘন অঞ্চলগুলোকে অগ্রাধিকার দেবে মন্ত্রণালয়।

গত বছরের মার্চে সাধারণ ছুটির নামে অঘোষিত লকডাউন চলাকালেও শর্তসাপেক্ষে সচল ছিল রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা। ওই সময় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে নিয়োজিত ছিল শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সংস্থা। মন্ত্রণালয়ের ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির দিকনির্দেশনা অনুযায়ী শিল্প-কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়েছিল। চলতি বছর সরকার ঘোষিত চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধের ক্ষেত্রে নজরদারি জোরদার করা হচ্ছে। গতকাল দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

সূত্র জানিয়েছে, শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে সম্ভাব্য সংকট মোকাবেলায় শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি গতকাল এক ভার্চুয়াল সভা করেছে। সরকার-মালিক-শ্রমিক পক্ষের সমন্বয়ে গঠিত ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভায় কারখানা সচল রাখলেও শ্রমিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গুরুত্ব দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে শ্রমঘন অঞ্চলগুলোকেই অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রাথমিক অবস্থায় শ্রমঘন গুরুত্বপূর্ণ সাত এলাকাঢাকা, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, খুলনা চট্টগ্রাম নজরদারিতে অগ্রাধিকার পাবে।

শিল্প পুলিশের তথ্যমতে, দেশের শিল্প খাত নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় কেন্দ্রীভূত। আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা ময়মনসিংহ ছয় শিল্প এলাকায় একক খাতভিত্তিক কারখানার সংখ্যা বেশি। এসব এলাকায় শুধু পোশাক খাতের কারখানা আছে হাজার ৮৯৩টি। খাতেরই ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বস্ত্র শিল্পের কারখানা আছে ৩৮৯টি। এছাড়া বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আওতায়ও আছে বস্ত্র পোশাক খাতের কারখানা। এভাবে ছয় শিল্প এলাকায় মোট হাজার ৬০২টির মধ্যে পোশাক খাতকেন্দ্রিক মোট কারখানার সংখ্যা হাজার ৩৭২। কারখানাগুলোয় ৪০-৪১ লাখ শ্রমিক কাজ করেন।

সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে কারখানায় স্বাস্থ্যবিধির পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ সম্ভব হয় না। এর আলোকে এবার বিশেষভাবে কারখানায় প্রবেশের সময়সূচি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য বলা হয়েছে। উৎপাদন প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পৃক্ত বিভাগগুলোর শ্রমিকদের প্রবেশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সময়সূচি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। উৎপাদনের শুরুতেই কাটিং বিভাগের শ্রমিকদের প্রয়োজন হয়, তাই বিভাগের শ্রমিকদের কারখানায় প্রবেশ করার সময় নির্ধারিত থাকবে সবার আগে। এরপর পর্যায়ক্রমে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন বিভাগের শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করবেন। কারখানায় প্রবেশের সময়ের সঙ্গে মিল রেখেই নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে শ্রমিকদের আবাসন কারখানার পার্শ্ববর্তী স্থানগুলোতেই। ফলে শ্রমিকদের জন্য গণপরিবহনের তেমন প্রয়োজন পড়বে না। যাদের প্রয়োজন হবে তাদের কারখানা কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যাতায়াতের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। এক্ষেত্রে পরিবহনেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বাধ্যবাধকতা থাকছে মালিকদের জন্য।

সভার নির্দেশনা অনুযায়ী, শ্রমিকদের কভিড-১৯ পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে কারখানা কর্তৃপক্ষকে। কেউ আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতে হবে। সংশ্লিষ্ট শ্রম কর্মকর্তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। এছাড়া শ্রমিকদের টিসিবির মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে। স্বামী-স্ত্রী দুজনই কারখানার কর্মী হলে তাদের সন্তানদের সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করবে জেলা প্রশাসন। এতে সহযোগিতা দেবে শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি।

শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গতকালের সভায় মালিক প্রতিনিধিরা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন। অন্যদিকে শ্রমিক প্রতিনিধিরা গার্মেন্ট শ্রমিকদের কারখানায় আনা-নেয়া, শিফটিং ডিউটি, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা পরিবহন শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তার বিষয়ে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।

শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সভায় প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম অধিদপ্তরের সারা দেশের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ২৩ কমিটিকে শ্রমিকদের সুরক্ষায় কঠোরভাবে কাজ করতে হবে। মালিক-শ্রমিক সবাই মিলে শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে উন্নয়নের চাকা সচল রাখতে হবে। করোনাকালে কর্মহীন শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেয়া আর্থিক সহায়তার সুবিধার কথা বিবৃতিতে তুলে ধরা হয়।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ এপ্রিল থেকে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ চলাকালে উৎপাদনে থাকা সব শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কর্তৃপক্ষ। কারখানা পর্যায়ে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে আরো আন্তরিক হতে হবে। একই সঙ্গে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যদের সর্বোচ্চ তত্পর হতে হবে। আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিশ্চিত করা পর্যায়ক্রমে ছুটির বিষয়ে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির আরো একটি সভা আহ্বান করা হবে বলে তিনি জানান।

এদিকে রফতানিমুখী পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠনগুলো এরই মধ্যে সচল কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে সদস্যদের প্রতি কঠোর দিকনির্দেশনা দিতে শুরু করেছে। গতকাল সদস্যদের প্রতি বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে নিট পোশাক পণ্য প্রস্তুত রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ। সংগঠনটি বলছে, কারখানার বিভিন্ন সেকশনে কর্মরত শ্রমিকদের প্রবেশ করার বের হওয়ার ক্ষেত্রে পৃথক সময় নির্ধারণ করা যেতে পারে। উৎপাদন ক্ষেত্র পরিচালনায় সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের দিকনির্দেশনা দিয়ে সদস্য কারখানা কর্তৃপক্ষদের সংগঠনটি বলেছে, দূর থেকে আসা শ্রমিক কর্মকর্তাদের কারখানার নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে যাতায়াত নিশ্চিত করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন