টানা তিনদিনের মতো দেশে ভাঙল কভিড-১৯ রোগে মৃতের সংখ্যার রেকর্ড। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এমন পরিস্থিতিতে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে আগামীকাল থেকে সাতদিনের জন্য সারা দেশে চলাচলে বিধিনিষেধ বা কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এসব বিধিনিষেধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত এ লকডাউন কার্যকর থাকবে। জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব অফিস ও গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। তবে শর্তসাপেক্ষে খোলা থাকবে শিল্প-কারখানা। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষের বাড়ি থেকে বের হওয়ার ওপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এসব বিধিনিষেধ কঠোরভাবে পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অথবা বিভাগের সচিবদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ২৫৫টি পরীক্ষাগারে ৩৪ হাজার ৯৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৭ হাজার ২০১ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত করা গেছে। সর্বশেষ ৮৩ জনসহ এ পর্যন্ত সারা দেশে কভিড-১৯ রোগে মারা গেছে ৯ হাজার ৮২২ জন। আর আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৫৭।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে এটাও বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কর্মস্থল বা নিজ কাজের এলাকায় অবস্থান করতে হবে। বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দরসংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
আদালতগুলোর জন্য কোনো নির্দেশনা প্রজ্ঞাপনে নেই। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমা ও তারাবি নামাজের জামাতের বিষয়ে নির্দেশনা দেবে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
লকডাউন চলাকালে সব ধরনের পরিবহন বন্ধ থাকবে। অর্থাৎ সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ রাখা হবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না। আইন-শৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা, যেমন কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কভিড-১৯ টিকা দেয়া, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, স্থল, নদী ও সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাকসেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজ ব্যবস্থাপনায় খোলা থাকবে দেশের শিল্প-কারখানাগুলো। এক্ষেত্রে শ্রমিকদের কারখানায় আনা-নেয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে প্রতিষ্ঠানগুলো। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যেমন ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে, চিকিৎসা নিতে, মরদেহ দাফন বা সত্কার ইত্যাদি কাজ ছাড়া কোনোভাবেই কেউ বাড়ির বাইরে যেতে পারবে না। কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা নেয়ার জন্য বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে।
খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা ও রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কেবল খাবার বিক্রি ও সরবরাহ করতে পারবে। কিন্তু সেখানে বসে কেউ খাবার গ্রহণ করতে পারবে না। শপিং মলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে। কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবসায়ীরা সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত খোলা জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করতে পারবেন। পুরো বিষয়টি দেখভাল করবে বাজার কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন।
এছাড়া বোরো ধান কাটার জরুরি প্রয়োজনে কৃষি শ্রমিক পরিবহনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সমন্বয় করবে। সারা দেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আদেশ করতে পারবেন।
এর আগে ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে সাতদিনের লকডাউন বা বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। জরুরি প্রয়োজনে সীমিত পরিসরে অফিস চালু রেখে এ বিধিনিষেধের মেয়াদ ১১ এপ্রিল রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে। এ নিয়ে ৪ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরপর তা ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।