লকডাউনেও চলবে আট ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পের কাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামীকাল দেশজুড়ে শুরু হচ্ছে কঠোর লকডাউন। লকডাউনের মধ্যেও অব্যাহত থাকবে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ দেশের আটটি ফাস্টট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পের নির্মাণকাজ। গত রোববার অনুষ্ঠিত ফাস্টট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং টাস্কফোর্সের সভায় চলমান করোনা মহামারী লকডাউনের মধ্যেও প্রকল্পগুলোর কাজ অব্যাহত রাখার ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কাজ চালু রাখার ক্ষেত্রে প্রকল্পের কর্মীদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালনের নির্দেশনাও দিয়েছে টাস্কফোর্স।

ফাস্টট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণকাজ। প্রকল্প কার্যালয়ের তথ্য বলছে, নির্মাণকাজের সার্বিক অগ্রগতি ৮৪ দশমিক শতাংশ। এর মধ্যে মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি ৯২ দশমিক ৫০ শতাংশ, নদী শাসনকাজের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। আগামী বছরের জুনের মধ্যে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা রয়েছে।

চলমান লকডাউনের মধ্যেও প্রকল্পের কাজ স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, করোনার সংক্রমণ এড়াতে পুরো প্রকল্প এলাকা লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। নির্মাণকাজে সম্পৃক্ত শ্রমিক প্রকৌশলীরা কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করছেন। ভাইরাসের কারণে যেন সেতুর নির্মাণকাজ বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি। আশা করছি, তেমন কোনো সমস্যা হবে না।

অন্যদিকে প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের। দুই ইউনিটবিশিষ্ট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্টের প্রথম ইউনিট চলতি বছরের শেষ দিকে এবং দ্বিতীয় ইউনিট আগামী বছরের প্রথম দিকে উৎপাদনে যাওয়ার কথা রয়েছে।

ফাস্টট্র্যাকভুক্ত প্রকল্প ঢাকার প্রথম মেট্রোরেলের (এমআরটি লাইন-) নির্মাণকাজের অগ্রগতি প্রায় ৬২ শতাংশ। এর মধ্যে প্রথম ভাগ উত্তরা-আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি ৮৩ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের অগ্রগতি ৫৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

তবে করোনার মধ্যে কাজ চালিয়ে গেলেও কেবল চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন মেট্রোরেল প্রকল্পের ৪৮ জন কর্মী। ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে মেট্রোরেলের অর্ধেক অংশ চালু করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।

৫০ শতাংশের বেশি অগ্রগতি হয়েছে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়াল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পে। ফাস্টট্র্যাকভুক্ত যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের আরেক প্রকল্প পদ্মা সেতু রেলসংযোগের অগ্রগতি ৩৭ শতাংশের উপরে। একইভাবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের অগ্রগতি ৩৫ শতাংশ, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৮০ শতাংশের মতো কাজ শেষ হয়েছে। অন্যদিকে ২০২৬ সাল নাগাদ নির্মাণাধীন মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর পুরোপুরি চালুর প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত বছরের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর সবকটি প্রকল্পের কাজই বিঘ্নিত হয়েছে। কর্মী প্রয়োজনীয় নির্মাণ উপকরণের সংকট দেখা দেয় কমবেশি সবকটি প্রকল্পে। তবে করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে এবার বেশ সতর্কতা অবলম্বন করে কাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে। সরকারের ফাস্টট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং টাস্কফোর্সও প্রকল্পগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রকল্পগুলোর অনুকূলে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করার নির্দেশনাও দিয়েছে টাস্কফোর্স।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন