লকডাউনে সচল থাকছে রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় কঠোর লকডাউনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। লকডাউন চলাকালীন পোশাকসহ রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা সচল থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল এক ভার্চুয়াল সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বরাতে তথ্য জানান রফতানিমুখী শিল্পসংশ্লিষ্ট মালিক সংগঠনগুলোর নেতারা।

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় প্রথম ধাপে এক সপ্তাহের লকডাউন গতকাল শেষ হয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয় আজ আগামীকালও লকডাউনের ধারা অব্যাহত থাকবে। ঘোষণার আগেই বলা হয়েছিল ১৪ এপ্রিল থেকে আরো কঠোর লকডাউন দেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ১৪ তারিখের আগে বিষয়ে জারি হতে পারে প্রজ্ঞাপন। তবে ঘোষণার আগেই রফতানিমুখী শিল্পোদ্যোক্তারা তত্পর ছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় কঠোর লকডাউনে কারখানা সচল রাখার বিষয়ে আশ্বাস গতকাল আদায় করেছেন তারা।

এপ্রিল সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ শেষে ১৪ এপ্রিল থেকে বাস্তবায়ন হবে আরো কঠোর লকডাউন। ওইদিন থেকেই রফতানিমুখী শিল্পমালিকরা কারখানা কঠোরতার আওতামুক্ত রাখার প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করছিলেন। নিয়ে গতকাল এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে লকডাউনে কারখানা সচল রাখার দাবি জানান সংগঠনগুলোর নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট কে আজাদ প্রমুখ।

রফতানিমুখী পোশাক বস্ত্র খাতের তিন সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ বিটিএমএসহ গতকালের যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজনে ছিল রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) গতকাল দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলনের পর বেলা ৩টায় এক ভার্চুয়াল সভা করেন সংগঠনের নেতারা। সভায় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনিই লকডাউন চলাকালীন কারখানা সচল রাখা হবে এমন আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন রফতানিকারক সংগঠনগুলোর নেতারা।

সভা শেষে বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ১৪ এপ্রিল থেকে সম্পূর্ণ লকডাউনে গেলেও শিল্প-কারখানা চলবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান মোহাম্মদ হাতেম। পরে বিকেএমইএ পরিচালক ফজলে শামীম এহসান জানান, ব্যাংক বন্ধ থাকবে, তবে সব কারখানা নির্মাণকাজ চালু থাকবে।

সভা প্রসঙ্গে পোশাক শিল্প মালিকদের আরেক সংগঠন বিজিএমইএ নেতা (প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট) ফারুক হাসান গণমাধ্যমকে জানান, লকডাউনে পোশাক এবং রফতানিমুখী কারখানা বন্ধের সংকট এড়াতে একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সংসদ সদস্য সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, আবদুস সালাম মুর্শেদী বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান এবং বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন। তারা প্রধানমন্ত্রীসহ মুখ্য সচিব মন্ত্রিপরিষদ সচিবের প্রতি কারখানা সচল রাখার অনুরোধ জানিয়ে বিষয়ে কার্যকর আলোচনা করেছেন।

গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি উল্লেখ করে ফারুক হাসান আরো জানান, যৌথ পরিশ্রমের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে কভিড-১৯ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। সিদ্ধান্তটি হলো লকডাউনে রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা সচল থাকবে। এটি একটি বড় সাফল্য উল্লেখ করে ফারুক হাসান জানান, আমি বিজিএমইএর সব সদস্যকে অনুরোধ জানাব, তারা যেন কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেন।

গতকাল যৌথ সংবাদ সম্মেলনের সভাপতি বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, আমাদের ক্রয়াদেশগুলো অনেক আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে এবং সে অনুযায়ী উৎপাদন জাহাজীকরণ কার্যক্রম পূর্বনির্ধারিত থাকে। তাই লকডাউন কার্যকর হলে খাতে নতুন করে ক্রয়াদেশ বাতিলসহ নানা বিপর্যয়ের ঝুঁকি রয়েছে। সেই সঙ্গে সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত হলে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জট, কনটেইনার জট অন্যান্য বিপত্তি যুক্ত হবে, যার জের পরবর্তী কয়েক মাস শিল্পকে টানতে হবে। উপরন্তু বস্ত্র তৈরি পোশাক খাতকে লকডাউনের আওতায় আনা হলে প্রতিযোগী দেশগুলোর কাছে বাজার হারানোর সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। কারণ অন্য কোনো দেশে লকডাউনের কারণে তাদের শিল্প বন্ধ থাকার খবর আমাদের কাছে নেই। যৌথ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের কাছে আমাদের বিনীত আবেদন, সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক খাতসহ বস্ত্র খাতের অন্যান্য সহযোগী শিল্পগুলোকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখুন।

গত বছর মার্চে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয় বাংলাদেশে। মার্চের মধ্যভাগ থেকে কিছু রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা কর্তৃপক্ষ নিজ থেকেই কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে। ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি বা অঘোষিত লকডাউন শুরু হলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। পরে শর্ত মেনে রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা সচল রাখতে শুরু করেন কারখানা মালিকরা। অর্থনীতির গতি ফেরাতে প্রায় দুই মাস পর লকডাউন প্রত্যাহার হয়। কিন্তু ততদিনে স্থবিরতার প্রভাব পড়তে শুরু করে অর্থনীতিতে।

প্রায় এক বছর পর গত মার্চের শেষে কভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। এরই মধ্যে মৃত্যু সংক্রমণ শনাক্তের নতুন রেকর্ড হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত চলমান ছিল লকডাউন। আরো কঠোর লকডাউনের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে। পরিস্থিতিতে কারখানা সচল রাখা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা মালিকরা। স্বাস্থ্যবিধি মানা সাপেক্ষে কারখানা সচল রেখেই দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা করতে চাইছেন তারা। নতুন প্রণোদনার দাবি তুলতে শুরু করেছেন অনেকে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন