মিয়ানমারে কোর্টমার্শালে ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড

শান প্রদেশে সেনাচৌকিতে কয়েকটি মিলিশিয়া দলের সম্মিলিত হামলা

বণিক বার্তা ডেস্ক

মিয়ানমারে ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা। এক সেনা কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ  ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে কোর্টমার্শালে তাদের দণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির সামরিক বাহিনীর মালিকানাধীন মিয়াওয়াদ্দি টিভি স্টেশনে প্রচারিত এক সংবাদে তাদের মৃত্যুদণ্ডের কথা প্রথম জানানো হয়। এদিকে মিয়ানমারে গণতন্ত্রের দাবিতে বিক্ষোভ এখন ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে বলে দাবি করছে দেশটির সামরিক জান্তা। যদিও গতকালও বিক্ষোভকারীদের সমর্থক সশস্ত্র সংগঠনগুলোর এক পুলিশ চৌকিতে হামলার ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ১০ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। খবর সিএনএন ব্যাংকক পোস্ট।

মিয়াওয়াদ্দি টিভির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে গত ২৭ মার্চে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে। ওইদিন ইয়াঙ্গুনের নর্থ ওক্কালাপা এলাকায় সেনাবাহিনীর এক ক্যাপ্টেন তার এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সময় অভিযুক্ত ১৯ জন তাদের ওপর হামলা চালিয়ে সবকিছু লুটে নেয়। সময় ওই সেনা কর্মকর্তা তার বন্ধুর ওপর নির্যাতন চালায় হামলাকারীরা। এতে সেনা কর্মকর্তার বন্ধুটির মৃত্যু ঘটে।

ইয়াঙ্গুনের বেশ কয়েকটি এলাকায় বর্তমানে সামরিক আইন জারি করা রয়েছে। কারণে বেসামরিক আদালতের বদলে কোর্টমার্শালে ১৯ জনের বিচার করা হয় বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

টেলিভিশন চ্যানেলটিতে আরো জানানো হয়, ১৯ জনের মধ্যে দুজনকে আটক করতে পেরেছে নিরাপত্তা বাহিনী। বাকি ১৭ জন এখনো পলাতক।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করে, দেশটিতে গণতন্ত্রের দাবিতে বিক্ষোভ এখন ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। কারণ দেশটির জনগণ এখন শান্তি চাইছে।

তবে ওইদিনই ইয়াঙ্গুনের নিকটবর্তী বাগো শহরে অভ্যুত্থানবিরোধী এক বিক্ষোভের ওপর রাইফেল গ্রেনেড নিয়ে হামলা চালায় তাতমাদোর (মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর আনুষ্ঠানিক নাম) সৈন্যরা। ঘটনায় অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের মরদেহ একটি প্যাগোডার মধ্যে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। মিয়ানমার নাউ নিউজ মকুন জানিয়েছে, ওই ঘটনায় অন্তত ২০ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি আরো অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে। তবে মুহূর্তে মৃতের সঠিক সংখ্যাটি বলা প্রায় অসম্ভব। কারণ সেনাবাহিনী বর্তমানে প্যাগোডার নিকটবর্তী এলাকা পুরোপুরি ঘিরে রেখেছে।

এদিকে দেশটির জাতিগত মিলিশিয়ারা এরই মধ্যে গণতন্ত্রের সমর্থনে তাতমাদোর ওপরে হামলা জোরদার করেছে। মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলে কয়েকটি জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনের এক সম্মিলিত বাহিনী গতকাল এক পুলিশ চৌকিতে হামলা চালায়। ঘটনায় অন্তত ১০ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।

শান প্রদেশের নাউংমোনে গতকাল হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, আরাকান আর্মি, তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মির সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি দল হামলা চালায়।

স্থানীয় শান নিউজ জানিয়েছে, ঘটনায় অন্তত ১০ পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে শোয়ে ফি মিয়ায় নামে আরেকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সংখ্যা ১৪ জনেরও বেশি। বিষয়ে সামরিক জান্তার মুখপাত্রদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো কিছু বলা হয়নি।

শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে তাতমাদোর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সামরিক জান্তা দুই বছরের মধ্যে দেশটিতে নির্বাচন আয়োজন করবে। যদিও এর আগে ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা দখলের সময় তাতমাদো বলেছিল, এক বছরের মধ্যেই দেশটিতে নির্বাচন দেয়া হবে।

তাতমাদোর ক্ষমতা দখলের পর থেকে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অন্তত ৬০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। পর্যন্ত আটক হয়েছে প্রায় হাজার ৮০০ বিক্ষোভকারী।

সামরিক জান্তার মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিন তুন এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সময় সৈন্যদের বিক্ষোভকারীদের ওপর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

সময় মিয়ানমারের নির্বাচিত নেতা অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ তোলেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, বিদেশী অর্থায়নে বিক্ষোভ পরিচালিত হচ্ছে। তবে এর সপক্ষে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি তিনি।

অন্যদিকে অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) নামে একটি সংস্থা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ৬১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৪৮ জন শিশুও রয়েছে।

নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছেন মিয়ানমারে নিযুক্ত ১৮টি দেশের রাষ্ট্রদূত। বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা তাদের সাহস আত্মসম্মানবোধের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

এতে আরো বলা হয়, স্বাধীন, ন্যায়পরায়ণ, শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক মিয়ানমারের প্রতি এখনো যাদের বিশ্বাস রয়েছে, তাদের সে আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতি আমরা একযোগে সমর্থন জানাচ্ছি। এখানে সহিংসতা থামাতে হবে। সব রাজবন্দির মুক্তি দিতে হবে এবং গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইজারল্যান্ড কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ একযোগে বিবৃতিতে সই করে।

বিষয়ে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার মুখপাত্র মিন তুনের বক্তব্য হলো, প্রতিবেশী বড় দেশসহ রাজনীতিতে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের মতামত সুপারিশের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। সময় মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই, এমন তথ্যকে ভুয়া খবর বলে দাবি করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন