বিটিসিএল

এসটিএনপিতে অনিয়ম-দুর্নীতি অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিজিটাল কানেক্টিভিটি শক্তিশালীকরণে সুইচিং ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পে (এসটিএনপি) অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সেসব দুর্নীতি অনিয়ম খতিয়ে দেখতে এরই মধ্যে মাঠেও নেমেছে দুদক। দুদকের সহকারী পরিচালক নারগিস সুলতানাকে অভিযোগটি অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা অভিযোগসংশ্লিষ্ট বেশকিছু তথ্য চেয়ে এরই মধ্যে বিটিসিএলে চিঠিও দিয়েছেন।

দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, ডাক টেলিযোগাযোগ বিভাগ, টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর বিটিসিএলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে ডিজিটাল কানেক্টিভিটি শক্তিশালীকরণ প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদকের অভিযোগে যাদের নাম এসেছে তারা হলেন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নুর-উর-রহমান, টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহসিনুল আলম, ডাক টেলিযোগাযোগ বিভাগের যুগ্ম প্রধান মো. মোছলেহ উদ্দিন, বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রফিকুল মতিন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে দুদকের সহকারী পরিচালক নারগিস সুলতানা বণিক বার্তাকে জানান, অভিযোগটি অনুসন্ধানে বেশকিছু নথিপত্র চেয়ে বিটিসিএলের এমডিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে সেসব নথিপত্র এখনো পাওয়া যায়নি। করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় যাতায়াতের বিধিনিষেধ রয়েছে। কারণে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও সেসব এখনো পাওয়া যায়নি বা তাদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। চাহিত তথ্য রেকর্ডপত্র পাওয়া গেলে তা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখা হবে। এরপর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ হবে।

২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি একনেকে অনুমোদন পায় ডিজিটাল কানেক্টিভিটি শক্তিশালীকরণে সুইচিং ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন (এসটিএন) শীর্ষক প্রকল্প। একই বছরের ১০ জুন দরপত্র দলিল দাপ্তরিক প্রাক্কলিত ব্যয় প্রস্তুতের জন্য কমিটি গঠন করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাঁচটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। সাত সদ্যস্যের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে এক্স-ফারকে একমাত্র যোগ্য সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ঘোষণা করে। তবে পুনঃদরপত্র আহ্বান কেন্দ্র করে কমিটির সদস্যদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয়। কমিটিতে থাকা বিটিসিএলসহ সরকারি কর্মকর্তারা পুনঃদরপত্র আহ্বানের সুপারিশ করেন। অভিযোগ রয়েছে, এক্ষেত্রে মূল্যায়ন প্রতিবেদনের বেশ কয়েকটি পৃষ্ঠা নম্বর হাতে কেটে অতিরিক্ত দুই পাতা সংযোজন করেন তারা। কাটছাঁটের বিষয়টি গোপন করতে বোর্ডসভায় মূল্যায়ন প্রতিবেদন ছাড়া শুধু কার্যপত্র উপস্থাপন করা হয়। সভায় বহিঃসদস্যরা দরপত্র বাতিলের বিপক্ষে বিটিসিএলসহ সরকারি কর্মকর্তারা বাতিলের পক্ষে মত দেন। পরের বোর্ডসভায় দরপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে ক্রয় আইন, বিধি দরপত্র দলিলের শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে। এরপর দরপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করে একমাত্র যোগ্য প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে আপিল নিষ্পত্তির আগেই গত বছরের নভেম্বরে পুনঃদরপত্র আহ্বান করে বিটিসিএল। পুনঃদরপত্রের ভিত্তিতে জিটিইকে কার্যাদেশ দেয়ার সুপারিশ করা হয়। তবে পরবর্তী সময়ে সেটিও বাতিল করে বিটিসিএল কর্তৃপক্ষ।

বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রফিকুল মতিন বলেন, দুদকের অভিযোগে বোর্ড সদস্য হিসেবে আমিসহ আরো কয়েকজনের নাম এসেছে। প্রকল্পে কোনো ধরনের কাজই হয়নি। আবার নতুন করে টেন্ডার হয়েছে। প্রকল্পটির টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি।

এর আগে টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে বিভিন্ন জেলার মধ্যে ২০১৬ সালে স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক স্থাপনের প্রকল্পেও বিটিসিএল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

প্রসঙ্গত, গত ২০ জানুয়ারি স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক: অনিয়মে বাস্তবায়ন হয়নি বিটিসিএলের তিন প্রকল্প শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বণিক বার্তা। এতে প্রকল্পটির প্রথম দফায় আহ্বান করা দরপত্র প্রক্রিয়ার নানা অনিয়ম তুলে ধরা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন