নওগাঁয় অর্জিত হয়নি ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, নওগাঁ

রোপা-আমন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি নওগাঁ জেলা খাদ্য অধিদপ্তর। কারণ হিসেবে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে স্থানীয় বাজারে ধান-চালের দাম বেশি, মিলারদের অসহযোগিতা দাম বৃদ্ধিকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, খাদ্য উৎপাদনে সমৃদ্ধ উত্তরের জেলা নওগাঁয় এবার কয়েক দফা বন্যায় রোপা-আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এর প্রভাব পড়ে বাজারে। বাজারে ধান-চালের দাম বেড়ে যায়। ফলে কৃষক ব্যবসায়ীরা গুদামে ধান-চাল দেয়নি।

নওগাঁ খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রোপা-আমন মৌসুমে জেলায় ৩৭ টাকা কেজি দরে সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার ২১৭ টন ৩৬ টাকা কেজি দরে আতপ চাল হাজার টন। এছাড়া ২৬ টাকা কেজি দরে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বরাদ্দ ছিল ১২ হাজার ১৭৮ টন। গত বছরের নভেম্বর ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। বছরের ১৫ মার্চ সংগ্রহ শেষ হয়। ২০৬টি সেদ্ধ চালকল এবং আটটি আতপ চালকল সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে হাজার ৫২৫ টন সেদ্ধ চাল এবং ৩৮৪ টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া দশমিক ৫২০ টন ধান সংগ্রহ করা হয়।

নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আশরাফুজাম্মান বলেন, দুটি কারণে ধান-চাল সংগ্রহ করা হয়। একটি হচ্ছে, কৃষকদের ন্যায্য মূল্য প্রদান এবং অন্যটি নিরাপত্তা মজুত গড়ে তোলা। সরকারিভাবে যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, তার থেকে খোলাবাজারে ধান-চালের দাম বেশি ছিল। কারণে এবার আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। বিদেশ থেকে সরকারি-বেসরকারিভাবে চাল আমদানি শুরু করা হয়েছে। আমরা আশা করছি অনতিবিলম্বে আমাদের নিরাপত্তা মজুদ গড়ে উঠবে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত চার দফা বন্যায় জেলায় রোপা-আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে ধান উৎপাদনের পরিমাণ কম হয়। বাজারে ধানের আমদানি কম হওয়ায় দামও ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ফলে বেশি দামে ধান কিনে চাল উৎপাদন করতে খরচ বেশি পড়ে। যেখানে খোলাবাজারে মোটা চালের দাম ছিল ৪০-৪২ টাকা। সেখানে সরকার নির্ধারিত মূল্য ৩৭ টাকা।

কৃষকরা বলছেন, বছর বাজারে ধানের দাম ছিল বেশি। প্রতি মণ মোটা ধানের দাম হাজার ২০০ টাকার ওপর। ২৬ টাকা কেজি দরে কার্ডধারী প্রতিজন কৃষকের বরাদ্দ এক টন। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে সামান্য কম হলেও নানা জটিলতায় গুদামে ধান দিতে আগ্রহী না কৃষকরা।

মহাদেবপুর উপজেলার তাতারপুর গ্রামের কৃষক হোসেন আলী নাটশাল গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম বলেন, খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে শুকানো, ফ্যানিং করা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, ময়েশ্চারসহ নানা রকম ঝামেলা পোহাতে হয়। ধান দেয়ার পরও টাকা উঠাতে গিয়ে ধাপে ধাপে বিড়ম্বনা। খোলাবাজারে ঝামেলা ছাড়াই বিক্রি করা যায়।

এছাড়া খোলাবাজারের তুলনায় সরকার নির্ধারিত মূল্য কম হওয়ায় চুক্তি অনুসারে লোকসানেও সরকারকে চাল দিচ্ছেন অনেক ব্যবসায়ী।

নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, খোলাবাজারে ধান-চালের দাম বেশি থাকায় অনেক মিল মালিক চুক্তিবদ্ধ হয়নি। আবার অনেকে লোকসান করে গুদামে চাল দিয়েছে। যেহেতু রোপা-আমন মৌসুমে সিংহভাগ মিলার সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়নি। আগামীতে যদি সরকার অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে আবারো চাল সংগ্রহ করতে চায়, তাহলে নতুন করে সবার সঙ্গে চুক্তি করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন