প্রাক-বাজেট ওয়েবিনারে বক্তারা

দেশের জিডিপিতে করের অবদান বাড়ানো প্রয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা . মসিউর রহমান দেশের জিডিপিতে করের অবদান বাড়ানো প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ট্যাক্সের হার নির্ধারণ সরকারের ব্যয়ের বিষয়ে সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে, সেই সঙ্গে নাগরিকদের ওপর আরোপিত ট্যাক্স সেই নাগরিকের কাছে গ্রহণযোগ্য কিনা সে বিষয়ে নজর দেয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন পর্যায়ে মূসক আদায়ের ফলে অনেক ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে এর হার বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে ঘন ঘন করের হার বাড়ানো-কমানো ঠিক নয়।

বলেছেন, প্রবৃদ্ধি উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখতে হবে এবং এটিকে সব জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। শুল্ক বা করের হার গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে না থাকলে তা ব্যবসা-বাণিজ্যিক কার্যক্রম ব্যাহত করবে।

গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল এবং চ্যানেল ২৪ কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনা: অর্থবছর ২০২১-২২ শীর্ষক ওয়েবিনারে কথা বলেন তিনি।

. মসিউর রহমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত না করে কী হারে রাজস্ব বাড়ানো যায় তার একটি দিকনির্দেশনা সরকারকে প্রদানের আহ্বান জানান। উপদেষ্টা বলেন, -১০ বছরের জন্য একটি টেকসই সহনশীল কর কাঠামো দেশে বিনিয়োগ সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ওয়েবিনারে . মসিউর রহমান ছাড়াও ব্র্যাকের চেয়ারপারসন . হোসেন জিল্লুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।

স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, সরকার ব্যবসাবান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থা, শিল্পায়নের বিকাশ এবং উচ্চতর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে যেতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গুরুত্ব বিবেচনায় বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা পূরণে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যেমন; আয়কর মূল্য সংযোজন কর, আর্থিক খাত, শিল্প বাণিজ্য এবং জ্বালানি, যোগাযোগ স্বাস্থ্য অবকাঠামো খাত প্রভৃতি খাতকে বাজেটে গুরুত্ব প্রদান করা প্রয়োজন।

. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বাজেট শুধু কর আহরণের বিষয় নয়, এটি সরকারের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের একটি রূপরেখা। বর্তমানে আমরা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করছি, যেটা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে এবং বাজেটে করোনা পরিস্থিতি উত্তরণের একটি সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকতে হবে, সেই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টিও বাজেটে গুরুত্ব দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, দেশের এসএমই খাতকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে এবং এসএমই খাতের জন্য আর্থিক সহায়তা নিশ্চিতকল্পে মাইক্রো ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউট (এমএফআই)-গুলোকে বিবেচনা করা যেতে পারে এবং প্রণোদনা প্যাকেজ কীভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছানো যায়, সেলক্ষ্যে একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। তৈরি পোশাক রেমিট্যান্সের পর আমাদের প্রবৃদ্ধির নিয়ামকগুলো কী হবে, সেগুলো চিহ্নিত করতে হবে।

দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে আমাদের একটি যুগান্তকারী পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করে সরকার বেসরকারি খাতকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান . হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য খাত নিয়েও চিন্তা করতে হবে এবং বিশেষ করে গ্রামীণ পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকল্পে বেসরকারি বিনিয়োগ খুবই জরুরি।

ওয়েবিনারে চারটি খাতের ওপর সরকারি বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করে তাদের মতামত প্রদান করেন। আর্থিক খাত সেশনের আলোচনায় আইপিডিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের সিইও নাসের এজাজ বিজয়, নগদের সিইও রাহেল আহমেদ এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম অংশগ্রহণ করেন।

মমিনুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে বন্ড মার্কেট উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জন্য ব্যাংকের ওপর চাপ কমানো সম্ভব হবে।

নাসের এজাজ বিজয় বলেন, এসএমইদের ঋণসহায়তা পেতে হলে একটি স্কিম থাকা প্রয়োজন। তিনি ভূমির মৌজা ভ্যালু কমানোর প্রস্তাব করেন, সেই সঙ্গে রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণের জন্য সহায়তা আরো বাড়ানোর আহ্বান জানান। রাহেল আহমেদ বলেন, ডিজিটাল লেনদেন কার্যক্রমে প্রণোদনা দিতে হবে এবং ডিজিটাল লেনদেনে মোবাইল অপারেটরদের যে চার্জ আছে তা কমানো প্রয়োজন, সেই সঙ্গে স্মার্টফোন আমদানি উৎপাদনে কর অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব করেন। আসিফ ইব্রাহীম বলেন, তালিকাভুক্ত অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার কমানো প্রয়োজন এবং লিস্টেড কোম্পানির করপোরেট কর হার কমানো প্রয়োজন। তিনি এসএমই কোম্পানিগুলোকে স্টক মার্কেটে আসার জন্য তালিকাভুক্ত হওয়ার পাঁচ বছর পর্যন্ত ১০ শতাংশ হারে কর সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব করেন।

শিল্প বাণিজ্য সেশনের আলোচনায় বাংলাদেশ সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইনাম আহমেদ, বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল হক, বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন . মো. মাসুদুর রহমান অংশগ্রহণ করেন।

এছাড়া ট্যাক্সেশন ভ্যাট সেশনের আলোচনায় কেপিএমজির সিনিয়র পার্টনার আদিব হোসেন খান, এফসিএ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সদস্য (কাস্টমস পলিসি আইসিটি) সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া, সদস্য (ভ্যাট নীতি) মো. মাসুদ সাদিক এবং সদস্য (কর নীতি) মো. আলমগীর হোসেন; অবকাঠামো (জ্বালানি, লজিস্টিক স্বাস্থ্য) সেশনের আলোচনায় ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফাইজুর রহমান, প্রাইভেট জেড অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এএসএম মাইনুদ্দিন মোনেম এবং বুয়েটের পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক . মোহাম্মদ তামিম অংশগ্রহণ করেন।

মুক্ত আলোচনায় বিল্ডের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান শিল্প খাতে গবেষণাকাজে ব্যবহূত বরাদ্দে কর অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব করেন। এছাড়া উত্তরা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মাতিউর রহমান আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি সমাপনী বক্তব্যে বলেন, করোনা মহামারীর কারণে সংবাদপত্র মারাত্মক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, সংবাদপত্র শিল্প প্রায় ৩৭ শতাংশ কর দিয়ে থাকে, যার মধ্যে করপোরেট কর ৩২ দশমিক শতাংশ এবং নিউজ প্রিন্ট আমদানি শুল্ক শতাংশ। তিনি নিউজপেপার আমদানি শুল্ক শূন্য হারে নামিয়ে আনার আহ্বান জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন