ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া ৬৬ কোম্পানি ও ফান্ড

দরপতন ঠেকাতে সার্কিট ব্রেকারের নিম্নসীমা কমাল বিএসইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১১০টি কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের বাজারমূল্য ফ্লোর প্রাইস স্পর্শ করার কারণে অনেকদিন ধরেই দৈনিক লেনদেনে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সিকিউরিটিজ নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিল। স্থবিরতা কাটাতে গত সপ্তাহের বুধবার ১১০টির মধ্যে ৬৬টি কোম্পানি ফান্ডের ক্ষেত্রে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অবশ্য পরদিন ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া ৬৬টি কোম্পানির মধ্যে ৬১টির বাজারদর কমে যায়। এর প্রভাবে দরপতন হয় অন্যান্য কোম্পানির শেয়ার ফান্ডের ইউনিটেও। এর পরিপ্রেক্ষিতে দরপতন ঠেকাতে এবার ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া ৬৬টি কোম্পানির শেয়ার ফান্ডের ইউনিটের ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকারের নিম্নসীমা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শতাংশ নির্ধারণ করেছে বিএসইসি।

গতকাল সার্কিট ব্রেকারের নিম্নসীমা কমানোর বিষয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে একটি আদেশ জারি করে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিএসইসির আদেশে বলা হয়, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ারদরের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) ৬৬টি কোম্পানির আগের দিনের সমাপনী মূল্য বা রেফারেন্স মূল্যের ভিত্তিতে দর পরিবর্তনের নিম্নসীমা শতাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ এই ৬৬টি কোম্পানির শেয়ার মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট দর একদিনে সর্বোচ্চ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারবে। অবশ্য সার্কিট ব্রেকারের উচ্চসীমা এবং ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর জারি করা -সংক্রান্ত আদেশের অন্যান্য শর্ত অপরিবর্তিত থাকবে। এর ফলে এই কোম্পানিগুলোর শেয়ার মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট একদিনে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারবে। অবিলম্বে নির্দেশনা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বিএসইসি।

ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে রয়েছে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল  সার্ভিসেস, আরএন স্পিনিং মিলস, বাংলাদেশ সার্ভিসেস, আইএফআইএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড, জাহিন স্পিনিং, রিং শাইন টেক্সটাইলস, অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজ, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ফিনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, নূরানী ডায়িং অ্যান্ড সোয়েটার, রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস, এসইএমএল এফবিএলএসএল গ্রোথ ফান্ড, এভিন্স টেক্সটাইলস, প্যাসিফিক ডেনিমস, মেট্রো স্পিনিং, কাট্টলী টেক্সটাইল, ফার কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, দেশবন্ধু পলিমার, ইয়াকিন পলিমার, সাফকো স্পিনিং মিলস, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, বিচ হ্যাচারি, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, হামিদ ফেব্রিকস, প্রাইম টেক্সটাইল স্পিনিং মিলস, সায়হাম কটন মিলস, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস, গোল্ডেন হারভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, এএফসি এগ্রো বায়োটেক, বেঙ্গল উইন্ডসর থার্মোপ্লাস্টিক, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, আর্গন ডেনিমস, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, শাশা ডেনিমস, সুহূদ ইন্ডাস্ট্রিজ, এসকোয়ার নিট কম্পোজিট, ভিএফএস থ্রেড ডায়িং, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস, কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিলস, মিউচুয়ার ট্রাস্ট ব্যাংক, ওইমেক্স ইলেকট্রোড, রূপালী ব্যাংক, সায়হাম টেক্সটাইল মিলস, সোনারগাঁও টেক্সটাইলস, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল, নাভানা সিএনজি, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স, উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস, উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি, খুলনা পাওয়ার, নাহি অ্যালুমিনিয়াম কম্পোজিট প্যানেল, দুলামিয়া কটন স্পিনিং মিলস, সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল এমএল ডায়িং লিমিটেড।

কমিশনের ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর জারি করা আদেশ অনুসারে, শেয়ারদর ২০০ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ হারে সার্কিট ব্রেকার প্রযোজ্য হবে। শেয়ারদর ২০০ টাকার ওপর হলে এবং ৫০০ টাকা পর্যন্ত দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার থাকবে। ৫০০ টাকার বেশি এবং হাজার টাকা পর্যন্ত শেয়ারদর থাকলে সেক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকার হবে দশমিক শতাংশ। শেয়ারদর হাজার টাকার বেশি এবং হাজার টাকা পর্যন্ত দশমিক ২৫ শতাংশ হারে সার্কিট ব্রেকার আরোপ করা হবে। শেয়ারদর টাকার ওপরে থাকলে এবং হাজার টাকা পর্যন্ত সার্কিট ব্রেকার হবে শতাংশ। আর শেয়ারদর হাজার টাকার বেশি হলে দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্কিট ব্রেকার আরোপ করা হবে। আইপিওর শেয়ার লেনদেনের প্রথম দিন ইস্যুমূল্যের ওপর ৫০ শতাংশ হারে সার্কিট ব্রেকার প্রযোজ্য হবে। দ্বিতীয় দিন আগের দিনের সমাপনী দরের ওপর ৫০ শতাংশ হারে সার্কিট ব্রেকার প্রযোজ্য হবে। আর তৃতীয় দিন থেকে অন্যান্য কোম্পানির শেয়ারের মতো স্ল্যাবভিত্তিক সার্কিট ব্রেকার প্রযোজ্য হবে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের মার্চে দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে টানা দরপতন দেখা দেয় পুঁজিবাজারে। এক পর্যায়ে হাজার ৬০০ পয়েন্টে নেমে যায় ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স। দরপতন ঠেকাতে সে সময় তালিকাভুক্ত কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ারদরের সর্বনিম্ন সীমা বেঁধে দেয় বিএসইসি, যা ফ্লোর প্রাইস হিসেবে পরিচিত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন