প্রিন্স ফিলিপ যেভাবে জেমস বন্ডকে বাঁচিয়েছিলেন

ফিচার ডেস্ক

ডিউক অব এডিনবরা প্রিন্স ফিলিপ শুক্রবার প্রয়াত হয়েছেন। ইংল্যান্ডের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী প্রিন্স ফিলিপ উইন্ডসর ক্যাসেলে ৯৯ বছর বয়সে মারা গেছেন। নানা কারণেই প্রিন্স ফিলিপ ব্রিটিশ গণমাধ্যমে আলোচনায় ছিলেন। বিভিন্ন কারণে তাকে স্মরণ করা হচ্ছে। অথচ যে বিষয়টি তুলনামূলকভাবে তেমন আলোচনায় নেই, কিন্তু বিরাট ঘটনা তা হলো তিনি একবার জেমস বন্ডকে বাঁচিয়েছিলেন।

১৯৬৪ সালে মুক্তি পায় শন কনোরি অভিনীত জেমস বন্ড ফিল্ম গোল্ডফিঙ্গার। কিন্তু ছবিটি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আটকে গিয়েছিল সেখানকার সেন্সর বোর্ডের বাধার কারণে। চলচ্চিত্রের জন্য দুনিয়ার অন্যতম বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র আর সেখানেই যদি ছবি চলতে না পারে তাহলে তো যেকোনো প্রযোজকেরই মাথায় হাত! গোল্ডফিঙ্গার প্রযোজনা করেছিল ব্রিটিশ কোম্পানি এয়োন প্রডাকশনস। ছবিটিকে বাঁচাতে তারা শরণাপন্ন হয়েছিল ব্রিটিশ রাজপরিবারের।

গোল্ডফিঙ্গারের একটি উল্লেখযোগ্য নারী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অনর ব্ল্যাকম্যান। আমেরিকার সেন্সর বোর্ডের মূল আপত্তি ছিল গোল্ডফিঙ্গারে ব্ল্যাকম্যানের চরিত্রটি নিয়ে। ১৯৬৪ সালে ফেব্রুয়ারিতে লন্ডনের একটি অনুষ্ঠানে প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল ব্ল্যাকম্যানের। তারা একসঙ্গে ক্যামেরার সামনে পোজও দিয়েছিলেন। পরদিন সব পত্রিকায় প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে ব্ল্যাকম্যানের ছবি ছাপা হয়েছিল। গোল্ডফিঙ্গারের প্রযোজক অ্যালবার্ট আর ব্রোকোলি সেদিনকার ব্রিটিশ পত্রিকাগুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে উড়ে গেলেন। পত্রিকাগুলো হাজির করলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্সর বোর্ডের সদস্য জিওফ্রে শার্লকের সামনে। এতে কাজ হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা একমত হলেন যে গোল্ডফিঙ্গার ছবিটিকে ছাড়পত্র দেয়া যায়। কারণ শত হোক ডিউক অব এডিনবরা নিশ্চয়ই অশালীন কোনো চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রীর সঙ্গে স্বেচ্ছায় ছবি তুলতে যাবেন না।

অবশেষে গোল্ডফিঙ্গার যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে মুক্তি পায় এবং দেশটিতে তখনকার দিনেই কোটি মার্কিন ডলার আয় করে। এভাবেই প্রিন্স ফিলিপ সেদিন জেমস বন্ডকে বাঁচিয়েছিলেন। অনেকে মনে করেন, বন্ড চরিত্রটির সঙ্গে প্রিন্স ফিলিপের বেশ মিল আছে। ব্রিটিশ অভিনেত্রী জোয়ানা লামলে একসময় বলেছিলেন, স্পোর্টসম্যান সামরিক কর্মকর্তা সুদর্শন প্রিন্স ফিলিপকে জেমস বন্ডের চরিত্রে অভিনয় করালে দারুণ হতো। লামলে বলেছিলেন, আমার মনে হয় তিনি (প্রিন্স ফিলিপ) একটি অসাধারণ চরিত্রতিনি ঘোড়ায় চড়েন, জাহাজে পাল তোলেন, গাড়ি চালান, মাছ ধরেন, সাঁতার কাটেন। তিনি সত্যিই জেমস বন্ড হতে পারেন। তিনি নৌবাহিনীর কমান্ডারও ছিলেনকমান্ডার বন্ডও হতে পারতেন।

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ প্রিন্স ফিলিপ ছিলেন জেমস বন্ড সিরিজের ছবিগুলোর প্রিমিয়ারের নিয়মিত দর্শক।

বন্ড হওয়া না হলেও হলিউডে প্রিন্স ফিলিপের উপস্থিতি বেশ প্রবল। একদিনে তিনি নিজে যেমন অনেক প্রামাণ্যচিত্রে মুখ দেখিয়েছেন তেমনি অনেক ছবি টেলিভিশন প্রোগ্রামে তার চরিত্রে দেখা গেছে অনেক অভিনেতাকে।

কিছুদিন আগে নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় সিরিজ দ্য ক্রাউন- প্রিন্স ফিলিপের চরিত্রে দেখা গেছে দুজন ব্রিটিশ অভিনেতাকে। ২০০৬ সালে দ্য কুইন ছবিতে ফিলিপের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আমেরিকান অভিনেতা জেমস ক্রমওয়েল।

প্রিন্সেস ডায়ানাকে নিয়ে নির্মিত একাধিক ছবি বা সিরিজে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে পাওয়া গেছে প্রিন্স ফিলিপকে। ১৯৮২ সালের টিভি ফিল্ম দ্য রয়াল রোমান্স অব চার্লস অ্যান্ড ডায়ানায় স্টিউয়ার্ট গ্রংগারকে দেখা যায় ডিউক অব এডিনবরার চরিত্রে। একই বছরের আরেকটি টেলিভিশন ছবি চার্লস অ্যান্ড ডায়ানা: রয়াল লাভ স্টোরিতে ফিলিপের চরিত্রে অভিনয় করেন ক্রিস্টোফার লি।

 

সূত্র: এসকয়ার ম্যাগাজিন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন