ইস্টার্ন ব্যাংকের সাফল্য পদ্মা-বেসিকে আসবে কি

হাছান আদনান

দেশে নাম পরিবর্তন করে বিধ্বস্ত ব্যাংক পুনর্গঠনের উদ্যোগ প্রথম নেয়া হয় ১৯৯২ সালে। প্রতারণার দায়ে বিশ্বব্যাপী নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংক অব ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনাল (বিসিসিআই) চারটি শাখা নিয়ে বাংলাদেশেও কার্যক্রম ছিল ব্যাংকটির। বিসিসিআইয়ের নাম পরিবর্তন করে গঠন করা হয় ইস্টার্ন ব্যাংক। সরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের অর্থে শেয়ার কেনার পাশাপাশি গ্রাহকদের আমানতের অর্থও শেয়ারে রূপান্তর করা হয়। সময়ের বিবর্তনে ইস্টার্ন ব্যাংক হয়ে উঠেছে দেশের বেসরকারি খাতের অন্যতম সেরা ব্যাংক।

নাম পরিবর্তন করে পুনর্গঠনের পর ইস্টার্ন ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে পারলেও ব্যর্থ হয়েছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। প্রথমে আল-বারাকা ব্যাংক থেকে নাম পরিবর্তন করে ওরিয়েন্টাল ব্যাংক হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু লুণ্ঠনের ভার বইতে না পেরে প্রায় দেউলিয়া হয়ে যায় ব্যাংকটি। পরবর্তী সময়ে আবারো নাম পরিবর্তন করে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক নামে পুনর্জীবন দেয়া হয় ব্যাংকটিকে। কিন্তু এক যুগ পার করেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের।

লুণ্ঠিত বিধ্বস্ত ব্যাংকের তালিকায় গত এক দশকে যুক্ত হয়েছে সরকারি-বেসরকারি আরো দুটি ব্যাংকের নাম। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের ফারমার্স ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড নামে পুনর্জীবন দেয়া হয়েছে। আর সরকারি খাতের সেরা প্রতিষ্ঠান বেসিক ব্যাংক লুণ্ঠনের শিকার হয়ে নিবুনিবু করছে। দুই ব্যাংককে বাঁচিয়ে রাখতে নানামুখী ছাড় দিয়ে চলছে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক। বেসিক ব্যাংকে ঢালা হচ্ছে সরকারি কোষাগারের অর্থ। আর পদ্মা ব্যাংকে অর্থ দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে। এর পরও বিধ্বস্ত দুটি ব্যাংককে দিতে হচ্ছে নিত্যনতুন ছাড়। মওকুফ করতে হচ্ছে জরিমানার অর্থ। এত কিছুর পরও ব্যাংক দুটিকে নিয়ে স্বস্তিতে নেই সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এক যুগ পেরিয়েও ৭৮ শতাংশ খেলাপি ঋণ নিয়ে ধুঁকছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। একই পরিস্থিতি বেসিক ব্যাংকেরও। সরকারি ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ৫১ শতাংশ এখনো খেলাপি। আর পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬০ শতাংশের বেশি। তিনটি ব্যাংকই খেলাপি ঋণের বোঝা টানতে গিয়ে মূলধনও খুইয়েছে। পুনর্গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছর লোকসান গুনে চলেছে তিনটি ব্যাংকই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুনর্গঠনের পর ইস্টার্ন ব্যাংক যে প্রক্রিয়ায় পথ চলেছে, ব্যাংকগুলো সে পথে চলেনি। বিধ্বস্ত ব্যাংক টেনে তোলার প্রথম শর্ত হলো পরিচালন ব্যয় হ্রাস। কিন্তু এদিক থেকে ব্যর্থ হয়েছে তিনটি ব্যাংকই। উল্টো বেসিক পদ্মা ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফলে ব্যাংক দুটির অভ্যন্তরীণ ক্ষতও বেড়ে চলছে।

মৌলিকত্ব ঠিক না করে বিধ্বস্ত ব্যাংকে অর্থ ঢেলে কোনো লাভ হবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর . মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, পুনর্গঠনের পর ইস্টার্ন ব্যাংক এখনো সফল কেস। কিন্তু আইসিবি ইসলামিক, পদ্মা কিংবা বেসিক ব্যাংকের ক্ষেত্রে তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের অনিয়মের মাত্রা অনেক গভীর। দুটি ব্যাংকের ভিতও শক্তিশালী ছিল না। বেসিক ব্যাংকের জন্ম হয়েছিল উদ্যোক্তা তৈরির জন্য। কিন্তু লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করে সফল ব্যাংকটিকে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে। যে মাত্রার অসুস্থতা ব্যাংক খাতে সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর করতে হলে পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থারই সার্জারি করতে হবে। একই সঙ্গে ব্যাংক খাতে মার্জার-অ্যাকুইজিশনেরও কার্যকর প্রয়োগ ঘটাতে হবে।

১৯৭৬ সালে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে ব্যাংক অব ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনাল (বিসিসিআই) বহুজাতিক ব্যাংকটির কার্যক্রম ছিল বিশ্বের ৭০টির বেশি দেশে। কিন্তু প্রতারণাসহ নীতিবহির্ভূত কার্যক্রমের কারণে ১৯৯২ সালে বন্ধ হয়ে যায় বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম ব্যাংকটি। বাংলাদেশেও ব্যাংকটির লাইসেন্স প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। সে সময় সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে ১৯৯২ সালের ১৬ আগস্ট বিসিসিআই ব্যাংকের মালিকানা অধিগ্রহণ করে সৃষ্টি হয় ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড।

বিসিসিআই ব্যাংকের দায়-সম্পদ ক্ষতি গ্রহণ করে যাত্রা করা ইস্টার্ন ব্যাংকের শাখা ছিল চারটি। ওই সময় ব্যাংকটির অনুমোদিত তহবিল ছিল ১০০ কোটি টাকা। সরকার, দেশের অন্যান্য ব্যাংক এবং বিসিসিআইয়ের আমানতকারী তিন ধরনের শেয়ারহোল্ডার শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে তহবিলে ৬০ কোটি টাকার জোগান দেয়। বিসিসিআই ব্যাংকের মালিকানা গ্রহণের সময় অধিগ্রহণ ক্ষতি বাবদ ৩১৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বহন করতে হয়েছিল ইস্টার্ন ব্যাংককে। যদিও পুনর্গঠনের পর ব্যাংকটির আমানতকারী বা শেয়ারহোল্ডারধারীরা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হননি। উল্টো ব্যাংকটির লভ্যাংশে বা শেয়ার বিক্রি করে সব শেয়ারধারীই লাভবান হয়েছেন। গত বছর শেষে ইস্টার্ন ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকায়। এর মধ্যে ৬১০ কোটি টাকা খেলাপি হলেও শতাংশের বিচারে তা মাত্র দশমিক ৬৮ শতাংশ। মূলধন পরিস্থিতি, মুনাফা, লভ্যাংশসহ মৌলিক সূচকগুলোয় ইস্টার্ন ব্যাংকের বর্তমান অবস্থান সামনের সারিতে।

ইস্টার্ন ব্যাংকের বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ক্ষেত্রে। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক সৌদি আরবের দেল্লাহ আল-বারাকা গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে ১৯৮৭ সালে দেশে কার্যক্রম শুরু করেছিল আল-বারাকা ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। বেসরকারি খাতের ব্যাংক ২০০৩ সালে নাম পরিবর্তন করে দি ওরিয়েন্টাল ব্যাংক লিমিটেডে রূপান্তর হয়। কিন্তু চরম অব্যবস্থাপনা, জালিয়াতি সীমাহীন দুর্নীতির কারণে ধসে পড়ে ব্যাংকটি। আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় ২০০৬ সালের জুন ব্যাংকটির পর্ষদ ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অপসারণ পর্ষদ ভেঙে দিয়ে ওরিয়েন্টাল ব্যাংককে পুরোপুরি অধিগ্রহণ করে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে প্রায় দেউলিয়া ব্যাংকটির অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করা হয়।

পরবর্তী সময়ে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ওরিয়েন্টাল ব্যাংককে মালয়েশিয়ার আইসিবি গ্রুপের কাছে বিক্রি করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক নামে কার্যক্রম শুরু করে ব্যাংকটি। পুনর্গঠনের এক যুগ পার হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ব্যাংকটি। ৮৫৬ কোটি টাকা বিতরণকৃত ঋণের ৬৭১ কোটি টাকা খেলাপি। এর সঙ্গে হাজার ৬২২ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি ধারাবাহিক লোকসান নিয়ে ধুঁকছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।

অনিয়ম-দুর্নীতি আর লুণ্ঠনের ভার বইতে পারছিল না ফারমার্স ব্যাংক। যাত্রার মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই প্রায় ধসে পড়েছিল ব্যাংকটি। ধারাবাহিকভাবে গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৭ সালে ফারমার্স ব্যাংকে হস্তক্ষেপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুনর্গঠন করা হয় ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ, অপসারণ করা হয় ব্যবস্থাপনা পরিচালককে। বিপর্যস্ত ব্যাংকটিকে টেনে তুলতে এগিয়ে আসে অর্থ মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে সহযোগীর ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সরকারের সিদ্ধান্তে ফারমার্স ব্যাংকের ৬৮ শতাংশ মালিকানা কিনে নেয় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রধান চার ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এজন্য ঢালতে হয়েছে ৭১৫ কোটি টাকার পুঁজি। বেঁচে থাকতে নাম পরিবর্তন করে ফারমার্স থেকে ব্যাংকটি পদ্মা হয়েছে। কিন্তু গত তিন বছরে ব্যাংকটিতে সফলতা এসেছে সামান্যই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে পদ্মা ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে হাজার ৪৫৪ কোটি টাকাই ছিল খেলাপির খাতায়। সে হিসাবে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ৬১ দশমিক ৬০ শতাংশ। পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি হওয়া ঋণের মধ্যে হাজার ১১৮ কোটি টাকাই মন্দ মানের। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপের আগে গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে ব্যর্থ হচ্ছিল ফারমার্স ব্যাংক। একই সঙ্গে সিআরআর এসএলআর সংরক্ষণেও ব্যাংকটি ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হচ্ছিল। সম্প্রতি ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসএলআর সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা থেকে পদ্মা ব্যাংককে মুক্তি দেয়া হয়। এর ফলে ৮৯ কোটি টাকার জরিমানা মওকুফ পেয়েছে ব্যাংকটি। রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক আইসিবি থেকে ৭১৫ কোটি টাকা মূলধন জোগান দেয়ার পরও ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে পদ্মা ব্যাংক ৩০৯ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। ২০১৯ সালে ২৯৮ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে ব্যাংকটি। ২০২০ সালেও ১৫৭ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে পদ্মা ব্যাংক। লোকসানের অর্থ ব্যাংকটির মূলধন থেকেই ক্ষয় হচ্ছে।

১৬৫ কোটি টাকা মূলধন জোগান দিয়ে পদ্মা ব্যাংকের মালিকানায় যুক্ত হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। ব্যাংকটির শীর্ষ নির্বাহী মো. আতাউর রহমান প্রধান পদাধিকারবলে পদ্মা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন। গত তিন বছরে ব্যাংকটির উন্নতির বিষয়ে আতাউর রহমান প্রধান বণিক বার্তাকে বলেন, এমন কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি নেই, যা ফারমার্স ব্যাংকে হয়নি। যে প্রক্রিয়ায় গ্রাহকদের ঋণ দেয়া হয়েছে, সেটি কোনো ব্যাংকিংয়ের মধ্যেই পড়ে না। সঠিকভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, ফারমার্স ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ ঋণই খেলাপি। তবে নাম পরিবর্তনসহ বিভিন্নমুখী কার্যক্রমের কারণে গত তিন বছরে পরিস্থিতির অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

দেশের ব্যাংক খাতের স্বার্থেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পদ্মা ব্যাংকের মালিকানায় গিয়েছে বলে মন্তব্য করেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আতাউর রহমান প্রধানের ভাষ্য হলো, ব্যাংকটি দেউলিয়া হয়ে গেলে দেশের ব্যাংক খাতের ওপর মানুষের আস্থার ঘাটতি হতো। এজন্যই সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা পদ্মা ব্যাংকের মালিকানায় গিয়েছি। রাতারাতি ব্যাংকটির সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতি করা সম্ভব নয়। ব্যাংকটির বিষয়ে গ্রাহকদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। আস্থার সংকটও অনেকটা কেটে গেছে। এখন পর্যন্ত যতটুকু পরিবর্তন হয়েছে, তাতে আর কোনো ধাক্কা না খেলে দু-তিন বছরের মধ্যে পদ্মা ব্যাংক পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

পুনর্গঠনের পর থেকে পদ্মা ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করছেন এহসান খসরু। ব্যাংকটির বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, দু বছর আগে গ্রাহকরা ফারমার্স ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নেয়ার জন্য মুখিয়ে ছিল। কিন্তু এখন আর সে পরিস্থিতি নেই। ২০১৯ ২০২০ সালে আমরা গ্রাহকদের হাজার ১২৫ কোটি টাকার আমানত পরিশোধ বা নবায়ন করেছি। তার পরও মুহূর্তে পদ্মা ব্যাংকের কাছে হাজার ৯০০ কোটি টাকার বেশি আমানত আছে। গত দুই বছরে আমরা হাজার ৩৮৬ কোটি টাকার নতুন আমানত পেয়েছি। ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। চ্যালেঞ্জে আমরা অনেকটাই সফল হয়েছি।

এহসান খসরু জানান, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে পদ্মা ব্যাংকের ঋণ আমানতের অনুপাত (এডিআর) ছিল ১২৬ শতাংশ। বর্তমানে রেশিও ৯০ শতাংশের কাছাকাছি নেমে এসেছে। আমাদের খেলাপি ঋণ ৮০ শতাংশের বেশি ছিল। নগদ আদায় পুনঃতফসিলের মাধ্যমে পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৫৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে হার ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। ২০২০ সালে খেলাপি থেকে ১৪২ কোটি টাকা নগদ আদায় করা হয়েছে। ৮৪৪ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নিয়মিত হয়েছে।

ইস্টার্ন ব্যাংক আজকের অবস্থানে আসার জন্য তিন দশক সময় নিয়েছে উল্লেখ করে এহসান খসরু বলেন, বিসিসিআইয়ের ঋণ খেলাপি ছিল না। কিন্তু ফারমার্স ব্যাংকের সিংহভাগ ঋণই আমরা খেলাপি পেয়েছি। পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পদ্মা ব্যাংকের সময় লাগবে।

বাংলাদেশ স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড কমার্স (বেসিক) ব্যাংক লিমিটেডের যাত্রা ১৯৮৯ সালে। প্রতিষ্ঠার পরের দুই দশক দেশের সেরা ব্যাংক হিসেবেই বিকাশ হয়েছিল বেসিক ব্যাংকের। ২০০৯ সাল পর্যন্ত বেসিক ব্যাংককে তুলনা করা হতো বৈশ্বিক জায়ান্ট স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের সঙ্গে। এরপর অনিয়ম-দুর্নীতি লুণ্ঠনের ভারে বিধ্বস্ত হয়ে খাদের কিনারে দাঁড়িয়েছে বেসিক ব্যাংক। গত আট বছরে বেসিক ব্যাংক নিট লোকসান দিয়েছে হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। সময়ে ব্যাংকটিকে বাঁচিয়ে রাখতে রাজস্ব থেকে হাজার ৩৯০ কোটি টাকা জোগান দিয়েছে সরকার। তার পরও হাজার ৮০০ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে ব্যাংকটি। পাশাপাশি হাজার ২৮৮ কোটি টাকা সঞ্চিতি ঘাটতিও রয়েছে বেসিক ব্যাংকের। সব মিলিয়ে লুণ্ঠনকৃত অর্থ বাদ দিয়েই গত আট বছরে বেসিক ব্যাংকের প্রত্যক্ষ ক্ষতির পরিমাণ ১৪ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। লুণ্ঠনের পর এখন পর্যন্ত ব্যাংকটিকে টেনে তুলতে নেয়া প্রায় সব পদক্ষেপই ব্যর্থ হয়েছে। সহসাই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, এমন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন