চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত টানা ১০ মাসের মতো বৈশ্বিক খাদ্যের দাম বেড়েছে। ২০১৪ সালের পরে বর্তমানে সর্বোচ্চে খাদ্যের দাম। ভেজিটেবল অয়েল, মাংস ও দুগ্ধপণ্যের দাম বৃদ্ধি বৈশ্বিক খাদ্যসূচকে বড় ভূমিকা পালন করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি (এফএও) সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এমনটা উঠে এসেছে। খবর রয়টার্স।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বৈশ্বিক খাদ্য মূল্যসূচকে প্রতি মাসের খাদ্যদ্রব্যের দামের পরিবর্তন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এফএও বলছে, দানাদার শস্য, তেলবীজ, ডেইরি পণ্য, মাংস ও চিনির দাম বৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে গত মার্চে খাদ্য মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১১৮ দশমিক ৫ পয়েন্ট। গত ফেব্রুয়ারিতে এ সূচক কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে ১১৬ দশমিক ১ পয়েন্ট দাঁড়ায়।
রোমভিত্তিক এফএও এক বিবৃতিতে জানায়, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী শস্য উৎপাদনের বার্ষিক রেকর্ড ছুঁয়েছে। চলতি বছরেও খাদ্যশস্য উৎপাদন আরো বাড়বে।
এফএওর তথ্যমতে, দানাদার শস্যের মাসওয়ারি সূচকের পতন হয়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। এর আগের আট মাস ধরে বৃদ্ধির পরে মার্চে এর বড় ধরনের পতন পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে গত বছরের মার্চের তুলনায় দানাদার শস্যের সূচক এখনো ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ ওপরে রয়েছে।
প্রধান শস্যগুলোর মধ্যে গমের রফতানি মূল্য সবচেয়ে কমেছে। মার্চে গমের রফতানি মূল্য কমেছে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। আগের বছরের করোনার ব্যাপক প্রভাবের কারণে ২০২১ সালে খাদ্যশস্য সরবরাহ এবং উৎপাদন বাড়াতে জোর দেয়ার ফলে শস্যটির রফতানি কমেছে বলে মনে করছে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) খাদ্য মূল্যসূচকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈশ্বিক পণ্যবাজারে গত বছর সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল করোনা মহামারী। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণে গভীর সংকটে পড়েছে পণ্যবাণিজ্য। মন্দার ঝুঁকিতে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। এমন সংকটকালীন মুহূর্তেও বছরজুড়ে চাঙ্গা ছিল খাবারের দাম। এ ধারাবাহিকতায় পরপর দুই বছর তুলনামূলক কম থাকার পর চলতি বছরেও বাড়তি দামে খাবার কিনছে বিশ্ববাসী।
এদিকে শস্যের ক্ষেত্রে রফতানি মূল্যসূচক কমলেও বেড়েছে ভেজিটেবল অয়েলের। মার্চে ৮ শতাংশ বেড়েছে ভেজিটেবল অয়েলের মূল্যসূচক। এর মাধ্যমে ২০১১ সালের জুনের পরে সর্বোচ্চ বেড়েছে ভেজিটেবল অয়েলের মূল্য। পাম, সয়া, সরিষা ও সূর্যমুখী তেলের মূল্যবৃদ্ধি ভেজিটেবল অয়েলের মূল্যসূচক বাড়াতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছে এফএও।
অন্যদিকে দুগ্ধপণ্যের দাম বেড়েছে টানা ১০ মাস। একটানা মূল্যবৃদ্ধির ফলে মার্চে দুগ্ধপণ্যের বৈশ্বিক মূল্যসূচক বেড়েছে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। এফএও বলছে, বিশেষ করে গুঁড়ো দুধের দাম বৃদ্ধি এ খাতের মূল্যসূচক বাড়িয়েছে। সরবরাহ সীমিত হয়ে যাওয়ায় এশিয়ায় চড়া দামে গুঁড়ো দুধের আমদানি বেড়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে চীনের পণ্যটির আমদানি বৃদ্ধি পায়।
এফএওর তথ্যমতে, মাংসের সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে অন্যান্য সূচকের মতো এর সূচক বাড়েনি। বরং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মাংসের মূল্যসূচক কিছুটা নিচে রয়েছে। এছাড়া মাসওয়ারি চিনির দাম কমেছে ৪ শতাংশ। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ ওপরে রয়েছে চিনির দাম।