গ্যাসের নিম্নচাপ

সুতা ও কাপড় উৎপাদন সক্ষমতা কমেছে ৭৫%

নিজস্ব প্রতিবেদক

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাধখোলায় স্থাপিত সুতা উৎপাদনকারী কারখানা ইসরাক স্পিনিং মিলস লিমিটেড। উৎপাদন যন্ত্র পরিচালনায় জেনারেটর ব্যবহার হয় কারখানাটিতে। যার অনুমোদিত গ্যাসের চাপ ১৫ পিএসআই (প্রতি বর্গফুটে গ্যাসের চাপ) এপ্রিল রাত থেকে হঠাৎ করে গ্যাসের চাপ অনেক কমে যায়। যদিও এর আগে থেকেই নির্ধারিত চাপের গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন ছিল না। সমস্যার প্রভাবে উৎপাদন যন্ত্র ৪০-৫০ শতাংশ বন্ধ রেখেই কারখানা চালাতে হচ্ছিল। কিন্তু এপ্রিলের পর থেকে ৭৫ শতাংশের বেশি যন্ত্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

শুধু শ্রীপুরই না, অতিসম্প্রতি গাজীপুর মহানগরসহ শ্রীপুর এলাকায় অবস্থিত টেক্সটাইল স্পিনিং, উইভিং ফ্যাব্রিক প্রসেসিং বা সুতা-কাপড় উৎপাদনকারী কারখানাগুলোয় গ্যাসের চাপ অতিমাত্রায় কমে গেছে। ইসরাকের মতো ভুক্তভোগী আরেকটি কারখানা হলো মোশাররফ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড। এসব কারখানার অনুমোদিত চাপ ১৫ পিএসআই হলেও ক্ষেত্রবিশেষে হার পিএসআইয়েরও নিচে নেমে গেছে।

খাতসংশ্লিষ্ট শিল্প মালিক সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) বলছে, সুতা-কাপড় উৎপাদনকারী অত্যাধুনিক কারখানাগুলোর অধিকাংশই ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার লক্ষ্যে ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশন চালু থাকে। প্রক্রিয়ায় জ্বালানি হিসেবে মূলত ব্যবহার হয় গ্যাস। কিন্তু গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় কারখানার উৎপাদন যন্ত্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

উদ্ভূত সমস্যার কথা জানিয়ে এপ্রিল তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আলী ইকবাল মো. নুরুল্লাহ বরাবর একটি চিঠি দিয়েছে বিটিএমএ। সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, অনেক কারখানা নিজস্ব খরচে অবকাঠামো নির্মাণপূর্বক ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশনের জন্য অত্যাধুনিক জেনারেটর অন্যান্য যন্ত্রের সমন্বয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন করে মিল পরিচালনা করে আসছে। মিল কর্তৃপক্ষগুলোর আশঙ্কা, অবস্থা চলতে থাকলে মিল বন্ধ করা ছাড়া তাদের কোনো উপায় থাকবে না।

চিঠিতে আরো বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের মাধখোলা এলাকায় অবস্থিত টেক্সটাইল, স্পিনিং, উইভিং, ডায়িং, প্রিন্টিং ফিনিশিং মিলসহ আরো অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের অত্যন্ত লো প্রেসারের কারণে তাদের স্থাপিত মেশিনারিজ ক্ষমতা বা মেশিনারিজের ৪০-৫০ শতাংশ বন্ধ রেখে মিলগুলো চালু রাখে। 

বিটিএমএর তথ্যমতে, গাজীপুরের মাধখোলাসহ আশপাশ এলাকায় অবস্থিত মিলগুলোর গ্যাসের লো-প্রেসার অনিয়মিত সরবরাহ পরিস্থিতি শুরু হয়েছে ২০১৮ সালে। ওই সময় ধনুয়া নদীর তলদেশ দিয়ে সঞ্চালিত গ্যাসের মূল পাইপলাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা পরবর্তী সময়ে যথাযথভাবে প্রতিস্থাপন হয়নি। পরিপ্রেক্ষিতে গ্যাসের কম চাপের কারণে মিলগুলো তাদের পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহার করতে না পারায় বর্তমানে চরম আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

বিটিএমএ বলছে, ঈদুল ফিতর আসন্ন। বর্তমান পরিস্থিতিতে মিলগুলো বন্ধ থাকলে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন, মজুরি বোনাস প্রদান করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কাও রয়েছে।

এদিকে বিটিএমএর তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গ্যাস সরবরাহ সংকট শুধু গাজীপুর-সংশ্লিষ্ট শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় নয়, সংকট মোকাবেলা করছেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, নরসিংদীর মাধবদী এলাকার সুতা-কাপড় পোশাক পণ্যের উৎপাদকরা। গ্যাস সংকটে অন্তত ৪০টি শিল্প-কারখানা এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কারখানা মালিকদের অভিযোগ, প্রায় এক মাস ধরে গ্যাসের তীব্র সংকট চললেও সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এসব এলাকায় গ্যাস সংকটে ধুঁকছে এমন উল্লেখযোগ্য কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে মিথিলা গ্রুপ, গাজী গ্রুপ, পারটেক্স গ্রুপ, এনজেড গ্রুপ, রবিনটেক্স গ্রুপ, ফকির গ্রুপ, এসপি কেমিক্যাল, নান্নু স্পিনিং, ভাই ভাই স্পিনিং, সানজানা ফ্যাব্রিকস, সিম ফ্যাব্রিকস, পদ্মা ব্লিচিং। বিদ্যমান গ্যাস সংকটের সমাধান না হলে আরো শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিটিএমএর নেতারা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন