মালয়েশিয়ায় নিজেদের টেলিকম ব্যবসা একীভূত করতে যাচ্ছে নরওয়েভিত্তিক টেলিনর গ্রুপ ও মালয়েশিয়াভিত্তিক আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ। এ ব্যাপারে দুই প্রতিষ্ঠানের আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে। একীভূত হওয়া কোম্পানিতে টেলিনর ও আজিয়াটার ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ করে শেয়ার থাকবে। তবে আজিয়াটা ও মালয়েশিয়ার স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সম্মিলিত শেয়ার ধারণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫১ শতাংশে এবং তারাই নতুন কোম্পানিটির নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে। একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার বিষয়টি গতকাল টেলিনর ও আজিয়াটার পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় আজিয়াটা মালিকানাধীন মোবাইল অপারেটর হচ্ছে সেলকম আজিয়াটা বারহাদ। আর টেলিনর এশিয়ার মালিকানাধীন অপারেটর ডিজিকম বারহাদ। এ দুই অপারেটর একীভূত হয়ে সেলকম ডিজি বারহাদ নামে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। একীভূত কোম্পানিটি বুর্সা মালয়েশিয়ায় তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে থাকবে। এটি মালয়েশিয়ার পুঁজিবাজারের অন্যতম বৃহৎ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। বাজার মূলধনের দিক দিয়েও এক্সচেঞ্জটির শীর্ষ কোম্পানিতে পরিণত হবে সেলকম ডিজি বারহাদ। চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যে দুই প্রতিষ্ঠান সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে চুক্তি চূড়ান্ত করতে কাজ করবে। একীভূত হওয়ার পরও গ্রাহকদের কাছে অপারেটর ব্র্যান্ড বেছে নেয়ার সুযোগ থাকবে এবং সেলকম ও ডিজি ব্র্যান্ডের কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে।
একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় আজিয়াটা নতুন ইস্যু করা ডিজির শেয়ার গ্রহণ করবে। একীভূতকরণের নগদ মূল্য ২০০ কোটি মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, বাংলাদেশী টাকায় যা ৪ হাজার ৯৮ কোটি। এর মধ্যে ১৭০ কোটি রিঙ্গিত বা ৩ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা ডিজির পক্ষ থেকে নতুন ঋণ হিসেবে আসবে আর টেলিনরের পক্ষ থেকে দেয়া হবে ৩০ কোটি রিঙ্গিত বা ৬১৪ কোটি টাকা।
একীভূত কোম্পানিটি মূল্য, রাজস্ব আয় ও মুনাফার দিক দিয়ে মালয়েশিয়ার টেলিযোগাযোগ খাতের শীর্ষ সেবা প্রদানকারী কোম্পানিতে পরিণত হবে। একীভূতকরণের পর কোম্পানিটির রাজস্ব আয় দাঁড়াবে ১ হাজার ২৪০ কোটি রিঙ্গিত বা ২৫ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। আর গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়াবে ১ কোটি ৯০ লাখে।
একীভূতকরণ প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে টেলিনর এশিয়ার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়ুর্গেন সি অ্যারেনজ রসট্রাপ বলেন, এশিয়ার বাজারে আমাদের উপস্থিতি জোরদার করতে একত্রে কাজ করার এ সিদ্ধান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মালয়েশিয়ার প্রযুক্তিগত চাহিদা পূরণ এবং সমাজ ও শিল্প বিকাশে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য এ পদক্ষেপ দরকার ছিল। আমরা নতুন কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে আজিয়াটার সঙ্গে কাজ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
দুই পক্ষের সম্মতিক্রমে একীভূত নতুন কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে ইজাদ্দিন ইদ্রিস, ভাইস চেয়ারম্যান ইয়ুর্গেন সি অ্যারেনজ রসট্রাপ, সিইও ইদহাম নবাবী এবং ডেপুটি সিইও হিসেবে আলবার্ন মার্টিকে মনোনীত করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন সাপেক্ষে একীভূতকরণ প্রক্রিয়া কার্যকর হবে। তবে একীভূতকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে এ আলোচনা এখনই কোনো চুক্তির নিশ্চয়তা দিচ্ছে না বলে জানিয়েছে দুই পক্ষই।
আজিয়াটার পর্ষদ চেয়ারম্যান গাজ্জালি শেখ আব্দুল খালিদ একীভূতকরণের বিষয়ে বলেন, সম্ভাবনাময় এ একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার এতদূর পর্যন্ত আসতে পেরে আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট। দুই প্রতিষ্ঠানের একীভূতকরণের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার বৃহৎ টেলিকম অপারেটরে পরিণত হবে।
মালয়েশিয়ায় টেলিনর ও আজিয়াটার টেলিকম ব্যবসা একীভূত হলেও বাংলাদেশে এ দুই বহুজাতিক টেলিকম জায়ান্টের ব্যবসা একীভূত করার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। বাংলাদেশ টেলিনরের মালিকানাধীন গ্রামীণফোন সবচেয়ে বড় টেলিকম অপারেটর হিসেবে ব্যবসা করছে। আর আজিয়াটার মালিকানাধীন রবি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম টেলিকম অপারেটর। দুই কোম্পানিই দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত।
মালয়েশিয়ার টেলিকম ব্যবসা একীভূতকরণের কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে কিনা জানতে চাইলে রবি আজিয়াটার কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ সাহেদ আলম বণিক বার্তাকে বলেন, আজিয়াটা গ্রুপের ব্যবসায় একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার প্রভাব পড়বে। তবে বাংলাদেশে গ্রামীণফোন ও রবির টেলিকম ব্যবসা আলাদাই থাকছে। দুই গ্রুপের একীভূতকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা চলাকালীন বাংলাদেশে দুই কোম্পানির একীভূতকরণের বিষয়ে কথা হয়েছিল, যদিও পরবর্তী সময়ে আর সেটি এগোয়নি।