কভিড-১৯ সংকট

মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে ছিটকে পড়ছে লাখ লাখ মানুষ

বণিক বার্তা ডেস্ক

কয়েক দশকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রবণতাগুলোর একটি ছিল বিশ্বজুড়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থান। উন্নয়নশীল দেশগুলোয় ক্রমবর্ধমান আয় প্রতি বছর লাখ লাখ দরিদ্র মানুষকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে আসীন করেছে। এক্ষেত্রে বহুজাতিক সংস্থাগুলোর ব্যবসায়িক পরিকল্পনা এবং পেশাদার বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও কৌশলগুলোও সহায়তা করেছে। ফলে আশা করা হচ্ছিল, বিশ্বজুড়ে গোষ্ঠী ক্রমেই বৃদ্ধি পাবে। তবে কভিড-১৯ মহামারী সব পূর্বাভাসকে পাল্টে দিয়েছে। নব্বইয়ের দশকের পর প্রথমবারের মতো গত বছর বিশ্বজুড়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণী সংকুচিত হয়েছিল। পাশাপাশি বেড়ে গেছে ধনী-দরিদ্রদের অর্থনৈতিক ব্যবধান। পিউ রিসার্চ সেন্টারের সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় তথ্য উঠে এসেছে। খবর ব্লুমবার্গ।

২০২০ সালে যুক্তরাজ্য জার্মানির মোট জনসংখ্যার সমানসংখ্যক প্রায় ১৫ কোটি মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে দরিদ্র শ্রেণীতে চলে গেছে। এক্ষেত্রে আর্থসামাজিক অগ্রগতি ভেঙে পড়ায় দক্ষিণ এশিয়া সাব-সাহারান আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি মানুষ দরিদ্র হয়েছে। চলতি বছরও ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বজায় থাকায় এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির হ্রাস অব্যাহত থাকবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বৈশ্বিক মধ্যবিত্ত শ্রেণী সংজ্ঞায়িত করার প্যারামিটারগুলোও দীর্ঘকাল ধরেই বিতর্কিত। বিষয়টি নিয়ে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গবেষণা করছে পিউ রিসার্চ সেন্টার। প্রতিদিন ১০ দশমিক শূন্য ডলার থেকে শুরু করে ২০ ডলার পর্যন্ত আয় করাদের মধ্যবিত্ত হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে সংস্থাটি। পিউর বিশ্লেষণে প্রতিদিন ২০ দশমিক শূন্য ডলার থেকে শুরু করে ৫০ ডলার পর্যন্ত উপার্জন করাদের একটি পৃথক উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন থিংক ট্যাংক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের মতো অন্যান্য প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন ১০ থেকে ১০০ ডলার পর্যন্ত আয় করাদের মধ্যবিত্ত হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে।

পিউ রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে মধ্যবিত্ত উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণী মিলিয়ে প্রায় ১৫ কোটি মানুষ শ্রেণী থেকে ছিটকে পড়েছে। এর মধ্যে ভারতে ৩২ শতাংশ, দক্ষিণ এশিয়ায় ২৫ শতাংশ, সাব-সাহারান আফ্রিকায় ১১ শতাংশ, মধ্যপ্রাচ্য উত্তর আফ্রিকায় ১০ শতাংশ, লাতিন আমেরিকা ক্যারিবিয়ানে শতাংশ, পূর্ব এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শতাংশ, চীনে শতাংশ এবং ইউরোপ কেন্দ্রীয় এশিয়াতে শতাংশ কমেছে। এছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই কমেছে শতাংশ। দেশগুলোই মোট হ্রাসের ১৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে। 

মধ্যবিত্ত শ্রেণী কমার পাশাপাশি কভিড-১৯ সংকট ধনী-দরিদ্র দেশগুলোর ব্যবধানও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ধনী দেশগুলো যেভাবে দ্রুতগতিতে টিকাদান কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, সেদিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে দরিদ্র দেশগুলো। জীবনধারণে সর্বদা লড়াই করা মধ্যবিত্ত শ্রেণী বিগত বছরগুলোর তুলনায় এখন অনেক বেশি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি। পিউর সংজ্ঞা অনুসারে, বিশ্বের মধ্যবিত্তদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ বসবাস করা চীন মহামারীজনিত সংকট থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধার করবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে অন্য অনেক উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতি সংকোচনের মুখোমুখি হচ্ছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বিশ্ব অর্থনীতির পূর্বাভাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, ২০২৩ সালে মহামারী দীর্ঘায়িত না হলেও বিশ্ব অর্থনীতি শতাংশ সংকুচিত হবে। কারণ হিসেবে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানটি বলছে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ যেভাবে বিপুল পরিমাণ ব্যয় করছে, সেভাবে উন্নয়নশীল বিশ্বের সরকারগুলো ব্যয় করতে পারছে না।

ব্লুমবার্গ ইকোনমিকসের পূর্বাভাস অনুসারে, চলতি বছর ভারতের যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে, এটা মহামারীপূর্ব সময়ের পূর্বাভাসের তুলনায় দশমিক শতাংশ কম। ইন্দোনেশিয়ার উৎপাদন কভিডপূর্ব সময়ের তুলনায় দশমিক শতাংশ কম। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র কভিডপূর্ব সময়ের কেবল দশমিক শতাংশ পিছিয়ে থাকবে।

বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কারমেন রেইনহার্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, মহামারীর আগে ব্যাংকগুলো গ্রাহক ক্ষুদ্র ব্যবসায় যে পরিমাণ ঋণ দিত, এখন দেয়া হচ্ছে না। সুতরাং ঋণ কমে যাওয়ায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দীর্ঘায়িত হতে পারে। তিনি বলেন, কয়েকটি দেশের সরকার যেকোনো সময় মুদ্রানীতি কঠোর করতে পারে। ঋণ সরবরাহেও সরকারগুলো সহায়তা বন্ধ করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে বৈষম্য আরো বেড়ে যাবে। যেমন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত থাকলেও আগেভাগে মুদ্রানীতি কঠোর করায় ব্রাজিলের মতো দেশগুলোয় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে খাবারের দাম। সব মিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি এখন দুই ভাগে বিভক্ত। দীর্ঘ সময়েই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমি মনে করি, ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। ক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন