কভিডের নতুন ঢেউ নিয়ে যা ভাবছেন টেলিভিশন সংশ্লিষ্টরা

চলমান লকডাউনে সীমিত পরিসরে শুটিং চলছে, কিন্তু একবারেই যদি বন্ধ হয়ে যায় শুটিং? সেক্ষেত্রে পুরো ইন্ডাস্ট্রির আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা কেমন? সংশ্লিষ্টরা কী ভাবছেন বিষয়ে?এমন সব প্রশ্নের উত্তর জানতেই টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির প্রযোজক অনুষ্ঠানপ্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় বণিক বার্তার পক্ষ থেকে। তাদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি জানাচ্ছেন কুদরত উল্লাহ

দেশে চলছে এক সপ্তাহের লকডাউন। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক সিনেমার শুটিং। স্টার সিনেপ্লেক্স তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছে। নামমাত্র খোলা আছে দেশের সিনেমা হলগুলো। নেই কোনো দর্শক। সবাই যেন করোনার তাণ্ডবের নতুন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। সংক্রমণ কমাতে সরকার বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু চাইলেও সবার পক্ষে ঘরে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। জীবন-জীবিকার জন্য অনেককেই বাইরে বের হতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন খাতের মতো দেশের বিনোদনজগৎও আছে শঙ্কায়। মাছরাঙা টেলিভিশনের অনুষ্ঠানপ্রধান আরিফ রহমান বলেন, ঈদের অনুষ্ঠানমালার জন্য যেসব অনুষ্ঠান আমরা প্রচার করি, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নাটক। বর্তমানে লকডাউন চলছে সাতদিনের। এই সাতদিন থেকে যদি ১৫ দিনও হয় তাহলে তেমন একটা ক্ষতির আশঙ্কা নেই। কিন্তু যদি এক মাস কিংবা তার চেয়ে বেশি সময় লকডাউন থাকে এবং শুটিং যদি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হবে। কারণ গতবারও ঠিক কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছিল। সেক্ষেত্রে এবারের লকডাউনে এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুটিং চলছে। তার পরও যদি বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে এখনই বলা যাচ্ছে না ঠিক কী পরিমাণ ক্ষতি হবে। আমরা চাই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যেন সবাই ঠিকঠাকভাবে শুটিং সম্পূর্ণ করতে পারে। পুরোপুরি লকডাউনে শুধু আমার ক্ষতি হবে না, ক্ষতি হবে পুরো মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রির। এখানে অনেক মানুষের কর্মক্ষেত্র, তাদের পরিবার আছে। তাই শুটিং যদি একবারে এক মাসের জন্য বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সবারই সমস্যা। ইন্ডাস্ট্রি সচল থাকার ওপরই নির্ভর করে সংশ্লিষ্টদের জীবন-জীবিকা। মহামারীর কারনে গত বছরের লকডাউনে ইন্ডাষ্ট্রির সামগ্রিক ভাবে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণটা নেহায়েত কম ছিল না। প্রসঙ্গে টেলিভিশন প্রডিউসার অ্যাসোয়িসেন অব বাংলাদেশের (টেলিপ্যাব) সভাপতি অভিনেতা ইরেশ যাকের বণিক বার্তাকে বলেন, আসলে গত বছরও কিন্তু ঠিক সময়টাতে লকডাউন চলছিল। শুটিং একেবারে বন্ধ ছিল। ফলে পুরা ইন্ডাস্ট্রিরই কিন্তু প্রায় ২৫০ কোটি টাকা কিংবা তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। টেলিভিশনের সঙ্গে জড়িত সবাই কিন্তু মোটামুটি ভালোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পরিবারের কোনো সদস্য যখন টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেন তখন সেই ব্যক্তির কিন্তু একটি পরিবার আছে, যার ইনকামে তার পুরো পরিবারের আর্থিক জোগান দেয়। এখন বছরও যদি পুরোপুরি লকডাউনে শুটিং বন্ধ হয়ে যায় তাহলে বছরও ঠিক আগের মতোই ক্ষতি হবে কিংবা এর বেশিও হতে পারে। তাই সবকিছু ব্যালান্স করেই আমাদের কভিড মোকাবেলা করতে হবে। নয়তো এবার আরো বেশি ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।

গত বছরের লকডাউনের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে অনেকে বছর ঈদের অনুষ্ঠানের শুটিং একটু আগেভাগেই সেরেছেন। এনটিভির অনুষ্ঠানপ্রধান আলফ্রেড খোকন বলেন, বিষয়টা হচ্ছে এখন পর্যন্ত আমাদের চ্যানেল থেকে ঈদের আয়োজনকে কেন্দ্র করে ৮০ ভাগ অনুষ্ঠানের শুটিং শেষ হয়ে গেছে। আর বাকি আছে ২০ ভাগ। এখন যদি কভিডের কারণে আবার লকডাউনে শুটিং বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে তেমন একটা ক্ষতি হবে না আমার দিক থেকে। কারণ আমরা গত বছর লকডাউন থেকে শিক্ষা নিয়েছি। যার জন্য আগে থেকেই বিশেষ অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে শুটিং সম্পূর্ণ করে রেখেছি। তবে যদি ওভারঅল চিন্তা করি, বাজার ব্যবস্থ্যার ক্ষেত্রে বিষয়টা চিন্তাজনক। এতগুলো মানুষের ইন্ডাস্ট্রি। এটা ভাবলে খুব খারাপ লাগে। সেজন্য কভিডের নিয়মনীতি মেনে যতটা সচেতন থেকে কাজ করা যায়। এর চেয়ে বেশি এখন আর কিছু বলার ভাষা জানা নেই। একটা যুদ্ধের মধ্য দিয়েই সবাই যাচ্ছি। আমি, আপনি, আমরা সবাই এর অংশীদার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরোপুরি লকডাউনে যদি শুটিং বন্ধ হয়ে যায় তাহলে বিপর্যস্ত হবে দেশের বিনোদন ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত থাকা লাখো মানুষ। সবাই সচেতন থেকে যদি শুটিং অন্যান্য কাজ চালিয়ে নেয়া যায় তাহলে হয়তো আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচার পাশাপাশি কভিড মোকাবেলায়ও সফল হওয়া যাবে।



এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন