করোনার দ্বিতীয় ঢেউ

‘সাইট লকডাউন’ করে চলছে পদ্মা সেতুর কাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

কর্মী-প্রকৌশলীদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ এড়াতে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা লকডাউন করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে গত সোমবার থেকে কার্যকর হয়েছে লকডাউন। কর্মরত শ্রমিক কিংবা প্রকৌশলী কারোরই প্রকল্প এলাকার বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই। বাইরে থেকেও কেউ ভেতরে যেতে পারছেন না। যারা নতুন করে কাজে যোগ দেবেন, তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকার পর প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষাতেই উত্তীর্ণ হতে হবে। বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার বেড়ে যাওয়ায় এখন থেকে এভাবেই সেতুর কাজ চালানোর কথা জানিয়েছেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা।

পদ্মা সেতুতে স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বরে। এখন চলছে স্প্যানের ওপর সড়ক আর ভেতরে রেলপথ নির্মাণকাজ। কম-বেশি আড়াই হাজার শ্রমিক-প্রকৌশলী বর্তমানে প্রকল্প এলাকায় কর্মরত রয়েছেন। তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রকল্প এলাকায় আরোপ করা হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ।

এসব বিধিনিষেধ সম্পর্কে জানতে চাইলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের বণিক বার্তাকে বলেন, সংক্রমণ এড়াতে পুরো প্রকল্প এলাকা দু-তিনদিন আগে লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। পদ্মা সেতুর প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তায় শুরু থেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়োজিত। সম্প্রতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

তিনি জানান, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকেই শ্রমিকদের কাজে যোগ দেয়ার আগে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কোয়ারেন্টিন শেষে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তারা যোগ দিতেন। এখনো তেমন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকার একটি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, লক্ষণ-উপসর্গ থাকা কর্মীরা সহজেই নমুনা পরীক্ষা করাতে পারবেন।

পদ্মায় মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির সদর দপ্তর চীনের উহানে। গত বছর শহরেই প্রথম বিস্তার লাভ করে করোনাভাইরাস। কারণে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর আগেই তার বিরূপ প্রভাব পড়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজে। চীনে ছুটি কাটাতে গিয়ে আটকা পড়েন অনেক শ্রমিক-প্রকৌশলী। আর দেশে ভাইরাসটির প্রকোপ শুরুর পর শ্রমিক নির্মাণ উপকরণের অপ্রতুলতার কারণে কাজে ধীরগতি তৈরি হয়।

তবে এবার এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের বিরূপ প্রভাব নির্মাণকাজে পড়েনি বলে দাবি করছেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, প্রথমে চীনে পরে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই আমরা সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করেছি। কারণে গত বছরের মার্চের পর থেকে সেতুর নির্মাণকাজের গতি কিছুটা কমে এলেও তা একদিনের জন্যও বন্ধ ছিল না। সম্প্রতি আবার করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আমরা প্রকল্প এলাকা লকডাউন করে দিয়েছি। প্রকল্প এলাকায় আড়াই হাজার শ্রমিকের থাকার জন্য ডরমিটরি বানানো হয়েছে। শ্রমিক-প্রকৌশলীরা সেখান থেকেই কাজে যোগ দিচ্ছেন। আর নতুন করে যারা কাজে যোগ দিচ্ছেন, তারা বাংলাদেশের হোন কিংবা বিদেশেরসবার জন্যই কোয়ারেন্টিন প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এখন পর্যন্ত আমাদের কাজে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, আমরা আশা করছি সময়মতোই সেতুর কাজ শেষ করতে পারব।

পদ্মা সেতু প্রকল্প কার্যালয়ের তথ্য বলছে, নির্মাণকাজের সার্বিক অগ্রগতি ৮৪ দশমিক শতাংশ। এর মধ্যে মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি ৯২ দশমিক ৫০ শতাংশ, নদীশাসন কাজের অগ্রগতি শতকরা ৮০ শতাংশ। আগামী বছরের জুনের মধ্যে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি ২০০৭ সালের আগস্টে প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছিল তত্কালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই সময় প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেতুর সঙ্গে রেলপথ যুক্ত করে প্রথম দফায় ব্যয় সংশোধন করে। বর্তমানে প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন