খরা ও হঠাৎ উষ্ণ বাতাস

হাওরে বোরো ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ

হঠাৎ করে শুরু হওয়া গরম বাতাসে সুনামগঞ্জের শাল্লায় হাওর এলাকায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। খরা পোকার আক্রমণের প্রভাবও রয়েছে। কয়েক দিন আগে শিলাবৃষ্টির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এমন ক্ষতির শিকার হয়েছেন অঞ্চলের কৃষকরা। চলতি মৌসুমে উৎপাদন ব্যয়ই উঠে আসবে না বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

গত রোববার বিকাল থেকে দিনে - ঘণ্টা স্থায়ী উষ্ণ বাতাসে হাওরের ধানের ছড়া নষ্ট হয়ে যায়। এতে কৃষকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ পড়ে। অন্যদিকে হাওর এলাকায় বেড়েছে শীষ কাটা লেদা পোকার উপদ্রব। পোকার আক্রমণে বোরো ধানের শীষ শুকাতে শুরু করে। এরই মধ্যে পোকার আক্রমণে হাওরে ক্ষেতের পর ক্ষেত ধানের শীষ শুকিয়ে গেছে। তবে কৃষি বিভাগ বলেছে, শাল্লার হাওরে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।

হাওরের কৃষকরা জানান, কিছুদিন আগে বোরো ধান শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই নতুন করে দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। কয়েক দিন ধরে শুরু হওয়া দমকা গরম বাতাসে শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওরে বেশির ভাগ জামির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই হাওরের একটি অংশ ঘাতুয়া হাওর। এখানে পোকার উপদ্রবে ধান সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

এছাড়া বাহাড়া ইউনিয়নের খলার হাওর, ভেড়াডহর ছাগলনাইয়া, হবিবপুর ইউনিয়নের ভাণ্ডারবিল উদ্গল হাওরে ধানের ক্ষতি হয়েছে। পুরো হাওরে শীষ কাটা লেদা পোকায় ৫০ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে।

ছায়ার হাওরের কৃষক প্রবোধ সরকার জানান, চলতি মৌসুমে ছায়ার হাওরে নয় একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন তিনি। এর মধ্যে তিন একর জমিতে বোরো ধানের শীষ কাটা লেদা পোকার আক্রমণে নষ্ট হয়ে গেছে।

কৃষক শান্ত কুমার দাস বলেন, বেশি ফলনের আশায় হাইব্রিড জাতের ধান রোপণ করেছিলাম হাওরে। গত রোববার বিকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত উষ্ণ ঝড় ওঠে। সকালে রোদ ওঠার পর হাওরে গিয়ে দেখি শীষ আসা বোরো ধান মরে শুকিয়ে যাচ্ছে। ঋণ করে ধানের আবাদ করেছি। এখন কী করে ঋণ শোধ করব। আমার সংসার চালাব কী করে। কী খেয়ে বাঁচব সে দুশ্চিন্তায় আছি।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, শাল্লা উপজেলায় ২১ হাজার ৯৩৫ হেক্টর জমিতে এবার বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশি হাইব্রিড জাতের ধান। কয়েক দিন আগে হাওরে হঠাৎ দমকা উষ্ণ বাতাস বয়ে যায়। এতে হাওরে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া শীষ কাটা লেদা পোকার আক্রমণে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, যাতে পোকার আক্রমণ দমন করা যায়।

শাল্লা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম মবিউজ্জামান চৌধুরী জানান, গরম বাতাসে হাওরের মোটামুটি ক্ষতি হয়েছে। আমাদের মাঠকর্মীরা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। তবে লোকবল সংকট থাকায় শতভাগ কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। পোকার আক্রমণ থেকে বোরো ধান রক্ষায় আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছি। তাদের বিকালে সোনালী মিস নামের কীটনাশক ১০ লিটার পানির সঙ্গে ১০ মিলি মিশিয়ে অথবা মার্শাল নাইট্রো ১০ লিটার পানির সঙ্গে ২০ মিলি মিশিয়ে ছিটানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। লোকবল সংকট থাকায় পরামর্শ প্রদানে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফরিদুল হাসান বলেন, জেলায় বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কিছুদিন আগে শিলাবৃষ্টিতে কিছু ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর কয়েক দিন আগে সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা দিয়ে গরম দমকা বাতাসে ধানের কিছু ক্ষতি হয়। তবে বাতাস সুনামগঞ্জের শাল্লার হাওরগুলোর মধ্যে ১০ হেক্টর জায়গা দিয়ে যায়। বাতাসে পয়েন্ট হেক্টর জমির ক্ষতি হয়েছে। তার পরও আমরা জমিতে কীটনাশক দেয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। আর শীষ কাটা লেদা পোকায় সামান্য ক্ষতি হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন