প্রযুক্তি জায়ান্টরা কি বাসা থেকে কাজ বাতিলের দিকে এগোচ্ছে?

বণিক বার্তা ডেস্ক

করোনা মহামারীর শুরুতে লকডাউন ঘোষণার পর বিশ্বের বেশির ভাগ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের ঘরে বসে অফিস করার সুযোগ করে দেয়। প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে বাড়িতে বসে কাজ করেও যে প্রতিষ্ঠান চালিয়ে নেয়া যায়, সেটি তখনই বেশ ভালোভাবে প্রমাণ হয়েছে। ধীরে ধীরে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই সুযোগ করে দেয়, যা এখনো চলমান। তবে গত বছরের শেষ থেকে কভিড-১৯ রোগের প্রকোপ কমতে থাকায় বিশ্বব্যাপী টিকাদান কার্যক্রম শুরু হওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠানই চাইছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মীদের অফিসে ফিরিয়ে আনতে।

আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম দিন থেকে কর্মীদের অফিসে ফিরিয়ে নিতে চায় গুগল। তবে কর্মীদের কেউ যদি ১৪ দিনের বেশি সময় বাড়িতে বসে কাজ করতে চায়, তাহলে তাকে আবেদন করতে হবে।

গত বছর সিলিকন ভ্যালির কর্মকর্তারা অফিস থেকে দূরে বসে বা বাড়িতে বসে কাজ করার নানা উপকারিতা সম্পর্কে বলছিলেন। তখন ধারণা করা হয়েছিল, করোনা মহামারীর পর নিউ নরমাল জীবনে সিলিকন ভ্যালির বেশির ভাগ অফিস কর্মীদের দূরে থেকে কাজ করার সুযোগ দেবে। বিশেষ করে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো খুব সীমিতসংখ্যক লোকবল দিয়ে অফিস চালাবে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে এখন আর তা মনে হচ্ছে না।

গত বছর মে মাসে টুইটারের জ্যাক ডরসি ঘোষণা দিয়েছিলেন, এখন থেকে সারাজীবনের জন্য টুইটারের কর্মীরা বাড়িতে বসে কাজ করতে পারবেন। কিন্তু তিনি এটাও যুক্ত করেছিলেন যে যদি কর্মীরা এমন অবস্থায় বা ভূমিকায় থাকেন, যেটি তাদের বাড়িতে বসে কাজ করার অনুমতি দেয়। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ হলো যদি অর্থাৎ, প্রতিষ্ঠান যদি মনে করে যে একজন কর্মীর ভূমিকা অনুযায়ী তাকে অফিসে এসেই কাজ করতে হবে, তাহলে তিনি সেটি করতে বাধ্য। মাইক্রোসফট মনে করে, ৫০ শতাংশের কম সময় বাড়িতে বসে কাজ করাই মানদণ্ড হিসেবে সঠিক। এখন কথা হলো, ৫০ শতাংশের কম বাক্যটিরও অনেকগুলো অর্থ হতে পারে।

অন্যদিকে অ্যামাজন এক বিবৃতিতে বলেছে, আমাদের পরিকল্পনা হলো অফিসকেন্দ্রিক কাজের সংস্কৃতিতে ফিরে যাওয়া। আমরা বিশ্বাস করি, একসঙ্গে অফিসে বসে কাজ করলে আমাদের উদ্ভাবন শক্তি বাড়বে, আমরা সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে পারব এবং একসঙ্গে অনেক কিছু শিখতে পারব। সমস্যা হলো, দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে বসে কাজ করার পর অনেক কর্মীই আরো বেশি শৈথিল্য আশা করছেন। সে কারণে এখন বোঝা যাচ্ছে না যে, নতুন মডেল আদৌ কাজ করবে কিনা। তবে কাজের বিষয়ে এখনো কিছু সিদ্ধান্ত নেয়নি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক।

স্পটিফাইয়ের মতো প্রতিষ্ঠান এখনো তাদের কর্মীদের অফিসে গিয়ে কাজের জন্য চাপ দেয়নি। তারা বলছে, কর্মীরা নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী বাড়িতে বসে, অফিসে বসে বা দুই জায়গাতেই বসে কাজ করার পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবেন। কীভাবে তারা কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন, সেটি তিনি তার ঊর্ধ্বতন মিলে ঠিক করবেন। কাজের ক্ষেত্রে কিছু সমন্বয় প্রয়োজন হলে সেটিও করতে হবে।

হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক পৃথ্বীরাজ চৌধুরী বলেন, অফিস থেকে দূরে বসে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরেই অগ্রদূত হিসেবে কাজ করছিল। তারা বাড়িতে বসে বা অফিসে না এসে কাজ করার যে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিল, সেটি অনেকেই গ্রহণ করেছে। এর ফলে অনেক তরুণই কাজ করতে আগ্রহী হয়েছেন। কোনো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানই নিশ্চয় তার কর্মীদের কেবল অফিসে এসে কাজ করতে বাধ্য করার কারণে হারাতে চাইবে না।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যখন নিয়ম অনুযায়ী ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে অফিস খুলতে বলা হবে, তখন পরিস্থিতি হয়তো কিছুটা জটিল হতে পারে। কারণ কিছু মানুষ জুমে মিটিং করবেন আর বাকিরা অফিসে, তখন কাজের গতি ঠিক থাকবে তো? কিংবা যারা বাড়িতে বসে কাজ করবেন, তারা কোনো সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন কি?

আইবিএম সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, তাদের কর্মীদের ৮০ শতাংশকে অন্তত তিনদিন অফিসে গিয়ে কাজ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী অরবিন্দ কৃষ্ণ বলেন, যারা বাড়িতে বসে কাজ করছেন, তাদের ক্যারিয়ারের গতিপথ নিয়ে আমি চিন্তিত। যদি তারা পিপল ম্যানেজার হতে চান, যদি তারা বেশি দায়িত্ব নিতে চান বা যদি তারা দলের সদস্যদের সঙ্গে সংস্কৃতি বিনিময় করতে চান, তাহলে অফিস থেকে দূরে বসে সেটি কীভাবে সম্ভব?

বিবিসি অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন