বাংলা চলচ্চিত্রের আলোচিত ফোক ফ্যান্টাসি

ফিচার প্রতিবেদক

ফোক ফ্যান্টাসি ঘরানার চলচ্চিত্র একসময় বাংলা চলচ্চিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা ছিল। ছবিগুলো ছিল দারুণ ব্যবসাসফল। বিভিন্ন রূপকথা, উপকথা, ঠাকুরমার ঝুলির নানা কাহিনী মিশ্রিত ছবিগুলোতে থাকত বিনোদনের পাশাপাশি সামাজিক বার্তা। সময়ের পরিক্রমায় ঘরানার ছবিগুলো আজ আর তেমন চোখে পড়ে না। পুরনো দিনের আলোচিত ব্যবসাসফল কয়েকটি ফোক ফ্যান্টাসি ঘরানার ছবি নিয়ে টকিজের আজকের আয়োজন।

সেকালের আলোচিত ব্যবসাসফল ফোক ফ্যান্টাসি ঘরানার ছবিগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে যে ছবিগুলোর নাম চলে আসে তার মধ্যে রূপবান অন্যতম। ১৯৬৫ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। সেলুলয়েডের পর্দায় রূপকথানির্ভর ছবি দেখার আগ্রহ আজও কম নয় দর্শকদের। লোকজ কাহিনীর সরলতা সৌন্দর্যের চিত্রায়ন ছিল রূপবান ছবিতে জনপ্রিয় রূপবান চরিত্রে সুজাতা, রহিম বাদশাহর চরিত্রে মনসুর রাজকন্যা তাজেলের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন চন্দনা। সে সময় দারুণ ব্যবসাসফল ছবি ছিল এটি। ছবি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে পরে ১৯৬৬ সালে সফদার আলী ভূঁইয়া পরিচালনা করেন রহিম বাদশাহ রূপবান ছবিটিও ব্যবসাসফল হয়।

জহির রায়হানের মতো নির্মাতাও নির্মাণ করেছিলেন ফোক ফ্যান্টাসি ঘরানার চলচ্চিত্র। তার নির্মিত বেহুলা, সুয়োরানী দুয়োরানী ছবিগুলোর নাম বাংলা চলচ্চিত্রে আজও অক্ষয়। বেহুলা মুক্তি পায় ১৯৬৬ সালে। জহির রায়হানের পরিচালনা চিত্রনাট্যে ছবিটি নির্মিত হয়েছিল বাংলার প্রচলিত লোককাহিনী, মনসামঙ্গল কাব্যের বেহুলা লখিন্দরের উপাখ্যান অবলম্বনে। ছবির মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিল সুচন্দা-রাজ্জাক জুটি। বেহুলা শুধু লোককাহিনীর ছবি নয়, এটি বাঙালি নারীর চিরন্তন আবেগ আত্মত্যাগের বহিঃপ্রকাশ। গ্রামবাংলার জীবনের অনেক ঐতিহ্য ফুটে উঠেছিল ছবিটিতে। জহির রায়হানের সুয়োরানী দুয়োরানী ছবিটিও ছিল অনবদ্য এক সৃষ্টি।

রাজার ঘরে জন্ম নেয়া কিন্তু ঘটনাক্রমে বেদের ঘরে বেড়ে ওঠা দুই ভাই এক বোনের গল্প নিয়ে নির্মিত হয় অরুণ বরুণ কিরণমালা চলচ্চিত্র। ছবিটি ঠাকুরমার ঝুলি থেকে অনুপ্রাণিত। স্বনামখ্যাত পরিচালক খান আতাউর রহমানের চিত্রনাট্য পরিচালনায় কিরণমালা চরিত্রে অভিনয় করেন কবরী। আরো অভিনয় করেন আজিম, খান আতাউর রহমান, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। ষাটের দশকের অন্যতম ব্যবসাসফল একটি ছবি অরুণ বরুণ কিরণমালা

আমি তোমারি প্রেম ভিখারী’—সৈয়দ আব্দুল হাদীর কণ্ঠে জনপ্রিয় গানটি চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা ছবির। ইবনে মিজান পরিচালিত সুপারহিট একটি ছবি। এক রাজকন্যার প্রেমের কাহিনী নিয়ে নির্মিত ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন অঞ্জু ঘোষ ওয়াসিম। ছবির সংগীত পরিচালক ছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল।

রূপকথা সাত ভাই চম্পা গল্পটি সবার কাছে অতি পরিচিত। রূপকথার গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয় সাত ভাই চম্পা চলচ্চিত্র। সাত ভাইয়ের এক বোন পারুলের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী কবরী। পুরো সিনেমায় দেখা যায় রাজকন্যা পারুল তার প্রেমিক রাজপুত্রের নানা কাহিনী। ১৯৬৮ সালে ছবিটি দারুণ ব্যবসাসফল হয়। ছবির সাত ভাই চম্পা জাগো রে গানটি আজও জনপ্রিয়।

১৯৮০ সালের দিকে আরব্য রজনীর আলিবাবা, আলাদিন সিন্দাবাদ তিন জনপ্রিয় চরিত্রকে এক সুতোয় গেঁথে নির্মিত হয় আলাদিন আলিবাবা সিন্দাবাদ চলচ্চিত্র। ছবিটি নির্মাণ করেন শফি বিক্রমপুরী। তিন জনপ্রিয় চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সোহেল রানা, ওয়াসিম জাভেদ। তাদের বিপরীতে ছিলেন রোজিনা, নূতন অঞ্জনা। ছবিটি দারুণ ব্যবসা করেছিল।

১৯৮৯ সালে নির্মিত বেদের মেয়ে জোসনা বাংলা চলচ্চিত্রে ব্যবসাসফল ছবির অন্যতম উদাহরণ। ছবিটিতে বেদে সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা তুলে ধরা হয়। এটি নির্মাণ করেছিলেন সে সময়ের নবীন নির্মাতা তোজাম্মেল হক বকুল। এতে অভিনয় করেন ইলিয়াস কাঞ্চন অঞ্জু ঘোষ। ছবিটির বিপুল জনপ্রিয়তা দেখে পরে কলকাতায় এর রিমেক তৈরি হয়। এতে অঞ্জু ঘোষের বিপরীতে ইলিয়াস কাঞ্চনের পরিবর্তে অভিনয় করেন কলকাতার চিরঞ্জীব।

ফোক ফ্যান্টাসি ঘরানার ছবির তালিকায় আপন দুলাল, পাতালপুরীর রাজকন্যা, কাঞ্চনমালা, নরম-গরম, গাজী কালুর চম্পাবতী, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের কমল রানীর দীঘি, কাজলরেখা ছবিগুলো উল্লেখযোগ্য। সাম্প্রতিক সময়ের খায়রুন সুন্দরী ফোক ফ্যান্টাসি ঘরানার একটি ছবি। ছবির খায়রুন লো তোর লম্বা মাথার কেশ গানটি বেশ জনপ্রিয়। কে সোহেল পরিচালিত ছবিটিতে লোকজ জীবনের নানা অনুষঙ্গ তুলে ধরা হয়। ২০০৭ সালে নির্মিত খায়রুন সুন্দরী ব্যবসাসফল একটি ছবি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন