অধিকার নিশ্চিতে যোগ্যতর হতে হবে নারীদের : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের নারী সমাজকে নিজ নিজ অধিকার আদায়ে নিজেদের যোগ্যতর হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের সমাজকে যদি আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, তাহলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন তিনি। মহিলা শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি নারীদের একটা কথাই বলবনারীদের অধিকার দাও, অধিকার দাও বলে চিত্কার করা, বলা আর বক্তৃতা দেয়াএতে কিন্তু অধিকার আদায় হয় না। অধিকার আদায় করে নিতে হবে। অধিকার আদায়ের মতো যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, সেই যোগ্যতা আসবে শিক্ষা-দীক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। যে কারণে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরই দেশে নারী শিক্ষা বাধ্যতামূলক অবৈতনিক করে দেন জাতির পিতা।

সরকার কোটি লাখ ছেলে-মেয়েকে বৃত্তি-উপবৃত্তি দিচ্ছে, যার মধ্যে বেশির ভাগই নারী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজকে যদি গড়ে তুলতে হয়, তবে নারী-পুরুষ সবাইকে শিক্ষা দিতে হবে। যে কারণে আমরা প্রতিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।

শেখ হাসিনা অতীত স্মরণ করে বলেন, তিনি ৯৬ সালে সরকারে এসে দেখেছেন কোনো নারীই ডিসি, এসপির কোনো পদ পেত না, উপজেলায় কোনো ইউএনওর পদ পেত না কিন্তু তার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন সব পদে নারীরা আসীন হয়েছেন।

তিনি উদাহরণ দেন, জাতীয় সংসদের স্পিকারসংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদীয় উপনেতা সবাই মহিলা। এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন।

দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমাজের অর্ধেক অংশ যদি অকেজো থাকে। সমাজটা তাহলে খুঁড়িয়ে খুড়িয়ে চলবে। প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার ৫৪ সালের চীন সফর নিয়ে লেখা আমার দেখা নয়াচীন বইয়ের কয়েকটি বিশেষ লাইন উদ্ধৃতি দেন। জাতির পিতা বলেন, নয়াচীনের মেয়েরা আজকাল জমিতে, ফ্যাক্টরিতে, কল-কারখানায়, সৈন্যবাহিনীতে দলে দলে যোগদান করছে। তাদের সংখ্যা স্থানে স্থানে শতকরা ৪০ জনের উপরে।

তিনি সময় দেশের স্বাধীনতা অর্জনে প্রধানমন্ত্রী তার মা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিবের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তার মায়ের মতামতকে বঙ্গবন্ধু সব সময়ই অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোনো অর্জনের পেছনে একজন নারীর যে অবদান থাকে, সেটাই এখানে সব থেকে বড় কথা। নারীদের অবগুণ্ঠনমুক্ত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য সময় উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।

বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে জীবন সংগ্রামে জয়ী নারীদের সম্মাননা দেয়ার জন্য বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ শীর্ষক কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য প্রতি বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসে পাঁচজন জয়িতাকে জাতীয় পর্যায়ে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

এবার জয়িতা সম্মাননায় ভূষিতরা হলেনঅর্থনৈতিকভাবে সফল নারীর ক্যাটাগরিতে হাছিনা বেগম নীলা, শিক্ষা চাকরির সাফল্যের ক্যাটাগরিতে মিফতাহুল জান্নাত, সফল জননী নারী ক্যাটাগরিতে মোসাম্মাৎ হেলেন্নেছা বেগম, নির্যাতিতা-বিজয়ী নারী ক্যাটাগরিতে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা রবিজান এবং সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য অঞ্জনা বালা বিশ্বাস।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মহিলা শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুননেসা ইন্দিরা বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার হিসেবে লাখ টাকার চেক, সম্মাননা ক্রেস্ট সনদ তুলে দেন।

মহিলা শিশু প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুননেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য দেন। জয়িতা পদকপ্রাপ্তদের পক্ষে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন জয়িতা হাছিনা বেগম নীলা। মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, পদস্থ সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশন দূতাবাসের প্রতিনিধি এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ১৮৫৭ সালের মার্চ নিউইয়র্ক শহরের একটি পোশাক কারখানায় নারী পোশাক শ্রমিকরা পুরুষের সমান ন্যায্য মজুরি দৈনিক ঘণ্টা শ্রমের দাবিতে আন্দোলন করলে পুলিশ নির্যাতন চালায় অনেককে গ্রেফতার করে। দাবিতে আন্দোলন হয় ১৯০৮ সালের মার্চও। দিনটিকে স্মরণ করে ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন