কর্মসংস্থান ব্যাংক

সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই ২৯তলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ

মেসবাহুল হক

ঢাকার দৈনিক বাংলায় কর্মসংস্থান ব্যাংকের জরাজীর্ণ ভবনটিকে ২৯ তলাবিশিষ্ট নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২৩১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। ভবনে কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর প্রধান কর্যালয় করা হবে। তবে মতিঝিলের মতো যানজটপ্রবণ ব্যস্ততম এলাকায় নতুন করে এত বড় ভবন নির্মাণে যথাযথ ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা যাচাই) করা হয়নি। তাই চটেছে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) এছাড়া একই ভবনে কয়েকটি ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্য থাকলেও এর নাম কর্মসংস্থান ব্যাংক ভবন প্রস্তাব করাতেও দেখা দিয়েছে বিতর্ক। এসব বিতর্কের অবসানে যথাযথভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করে নতুন প্রস্তাব পাঠাতে বলেছে পিইসি।

সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে কর্মস্থান ব্যাংক ভবন নির্মাণ শীর্ষক বিনিয়োগ প্রকল্পের ওপর অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এতে আরো সিদ্ধান্ত হয় যে, বৈদেশিক শিক্ষা সফর, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব, ডিপিপি প্রস্তুতকরণ ছাপানো, দরপত্র, ভবন উদ্বোধন জ্বালানি খরচ, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন স্থাপনা অপসারণ খাতগুলো ব্যয় প্রাক্কলন থেকে বাদ দিতে হবে। সভার কার্যপত্র সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) ডা. মো. মহিউদ্দিন ওসমানী বণিক বার্তাকে বলেন, মতিঝিলের মতো ব্যস্ততম এলাকায় নতুন করে ধরনের ভবন নির্মাণ কতটুকু যুক্তিযুক্ত তার যথাযথ ফিজিবিলিটি স্টাডি হওয়া প্রয়োজন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন হচ্ছে, সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া ধরনের প্রকল্প একনেকসহ অন্যান্য জায়গায় অনুমোদন করা যাবে না। গত সভায় সংশ্লিষ্টদের এটিই আমরা জানিয়ে দিয়েছি।

প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় বলা হয়, একটি প্রকল্পের সুষ্ঠু সুন্দর বাস্তবায়ন যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সভাকে ডা. মো. মহিউদ্দিন ওসমানী জানান, ডিপিপির সঙ্গে দুই পৃষ্ঠার ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট যুক্ত করা হয়েছে, যা পর্যালোচনায় যথাযথভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয় না। প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত স্থানটি মতিঝিলের ব্যস্ততম এলাকা, যেখানে প্রায় সব সময় যানজট লেগে থাকে। প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত ভবনটি ভিতসহ ২৯ তলাবিশিষ্ট হবে। প্রকল্পের স্থান, যানবাহন চলাচল, ভবনের আকার-আয়তনসহ সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে যথাযথভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডির অনুরোধ জানান তিনি।

সভায় বলা হয়, প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য ভবনে কর্মসংস্থান ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকসহ অন্যান্য বিশেষায়িত ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা করা হবে বলে ডিপিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে। কর্মসংস্থান ব্যাংক ভবনে অন্যান্য ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জন্য স্থান সংস্থানের বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন রয়েছে কিনা জানতে চাইলে সভাকে কর্মসংস্থান ব্যাংকের চেয়ারম্যান কানিজ ফাতেমা এনডিসি জানান, প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে যাদের নিজস্ব প্রধান কার্যালয় ভবন নেই (যেমন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক ইত্যাদি), তাদের সবার জন্য একটি বহুতলবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুশাসন প্রদান করেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে কর্মসংস্থান ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের স্থানে নির্মিতব্য বহুতল ভবনে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকসহ অন্যান্য বিশেষায়িত ব্যাংকের জন্য স্থান বা ফ্লোর প্রদানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে বিষয়ে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।

সভায় আরো আলোচনা হয়, প্রস্তাবিত ভবনে কর্মসংস্থান ব্যাংক ছাড়াও অন্যান্য বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয় থাকবে। তাই ভবনের নাম কর্মসংস্থান ব্যাংক ভবন রাখা যৌক্তিক হবে কিনা বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তাজুল ইসলাম জানান, ভবনের জন্য প্রস্তাবিত স্থানটি প্রধানমন্ত্রী কর্মসংস্থান ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অনুকূলে ১৯৯৮ সালে ৯৯ বছরের জন্য দীর্ঘমেয়াদে বন্দোবস্ত প্রদান করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আলোচ্য প্রকল্প নিয়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সভায় ভবনটির নাম কর্মসংস্থান ব্যাংক ভবন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব বিবেচনায় ভবনটির নাম কর্মসংস্থান ব্যাংক ভবন রাখা যুক্তিযুক্ত হবে। বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ যথাযথ পর্যালোচনা করে ভবনটির নাম নির্ধারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

বিষয়ে গতকাল কর্মসংস্থান ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. তাজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ভবন সরকারি টাকায় হওয়ার কথা রয়েছে। বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এক বছর ধরে এটা নিয়ে বেশ কয়েকটা বৈঠক হয়েছে। কিন্তু এখনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। এখন পিইসি বলছে, নতুন করে ফিজিবিলিটি স্টাডি করে প্রস্তাব আবার জমা দিতে হবে। গণপূর্ত অধিদপ্তর বিষয়ে কাজ করছে। ঢাকা শহরের লোভনীয় জায়গায় ভবনটা খুব সুন্দর করে নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ভবনটা যেন সুন্দর হয়, জনগণের উপকার হয় আর আমাদের লাভ হয় বিষয়গুলো দেখা হচ্ছে। মতিঝিলের বাইরে ভবন করা যায় কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বাইরে তো আমাদের জমি নেই। এত পরিমাণ জমি আমাদের কে দেবে?

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন