গুরুত্বপূর্ণ আরো উপাত্ত শেয়ারের জন্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করতে যাচ্ছে চীন সরকার। ই-কমার্স থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, সব প্রযুক্তি কোম্পানিকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত শেয়ার করতে বলা হচ্ছে। খবর ব্লুমবার্গ।
আগামী পাঁচ বছরের জন্য অধিকতর তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করা অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেছে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি। সাধারণ জনতা ও সরকারি উপাত্ত সরবরাহের জন্য বেইজিং একটি আলাদা প্লাটফর্ম চালু করছে বলেও জানা গেছে।
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সরকার দীর্ঘদিন ধরে ডাটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করলেও সম্প্রতি বেসরকারি কোম্পানির ডাটার দিকে হাত বাড়াতে শুরু করেছে। বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া অবস্থানের বিরুদ্ধে গত নভেম্বর থেকে কড়া অবস্থান নেয়া শুরু করে চীন সরকার। নিজেদের নিয়ন্ত্রণে অধিক পরিমাণে তথ্য-উপাত্ত থাকার কারণে প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো জনমনে ব্যাপক প্রভাব রাখতে পারে এ আশঙ্কা করছিল তারা।
চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট আলিবাবা, টেনসেন্ট এবং নতুন প্রতিযোগী বাইটডান্স এবং মেইতুয়ার মতো কোম্পানিগুলোর হাতে বড় অংকের ডাটা রয়েছে। কারণ তাদের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে লাখো কোটি গ্রাহক কেনাকাটা করে। উইচ্যাট ও দুয়ির মতো সোস্যাল মিডিয়া অ্যাপ ব্যবহার করে কেনাকাটা করে ওই গ্রাহকরা। সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় উপাত্ত হস্তান্তরের কারণে বাজার অবস্থান হারাতে পারে চীনা প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো। আগে ক্ষুদ্র প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোকে বাজারে যেভাবে চাপের মুখে রাখতে পারত, সরকার কর্তৃক উন্মুক্ত প্লাটফর্মে উপাত্ত সরবরাহের কারণে তা করা কঠিন ঠেকবে।
প্রযুক্তি খাতে একচেটিয়া অবস্থান ঠেকাতে গত নভেম্বরে নতুন নীতিমালা ঘোষণা করেছেন চীনের অ্যান্টি-ট্রাস্ট নীতিনির্ধারকরা। ভোক্তাদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও তা ব্যবহারে আরো ভালো নীতিমালা প্রণয়নের চেষ্টা চালাচ্ছে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির গুরুত্বপূর্ণ এ অংশটি। কীভাবে কোম্পানিগুলো তাদের ডাটা শেয়ার করবে—এ বিষয়টি গত শুক্রবার প্রকাশিত চীনের চতুর্দশ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় স্পষ্ট নয়।
বেইজিংভিত্তিক ট্রাইভিয়াম চায়নার হেড অব ডিজিটাল রিসার্চ কেন্দ্রা শেফার বলেন, ডাটা পলিসিতে চীনের নীতি একেবারে খোলনলচে পাল্টে ফেলেছে। ধীরে ধীরে চীনের নীতিনির্ধারকরা এটা অনুধাবন করেছেন যে ডাটার বাজারজাতে প্রয়োজনীয় আইনি ও কৌশলগত অবকাঠামো নির্মাণ ভালো কোনো পদক্ষেপ না হলেও ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে তা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা ছাড়া তাদের সামনে সহজ কোনো বিকল্প নেই।
ডাটার মালিকানা এবং নিরাপত্তা চীন ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর দীর্ঘদিনের বিরোধের বিষয় হিসেবে উপস্থিত রয়েছে। বিশেষ করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে এ নিয়ে বেশ তিক্ততা দেখা দিয়েছিল। বাইটডান্স ও টেনসেন্টের সেবা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল ওয়াশিংটন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ওই প্লাটফর্মগুলোতে থাকা লাখো মার্কিন ব্যবহারকারীর উপাত্ত চীন সরকারের সঙ্গে শেয়ার করা হচ্ছে।
২০১৭ সালের সাইবার নিরাপত্তা আইনের আওতায় যেকোনো অপরাধ বা জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে এমন কিছু ইস্যু তদন্তে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তায় বাধ্যবাধকতা রয়েছে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর।