৭ মার্চের ভাষণ ছিল প্রকৃত অর্থেই স্বাধীনতার ঘোষণা : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ছিল প্রকৃত অর্থেই স্বাধীনতার ঘোষণা। এতে একদিকে যেমন ছিল গেরিলা যুদ্ধের নির্দেশনা, অন্যদিকে জনগণকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতের রণকৌশলও ছিল।

গতকাল ঐতিহাসিক মার্চ উদযাপন উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে গণভবন থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার মার্চের ভাষণে এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম দুইবার কথাটা বলেছেন এবং শেষের বার সব থেকে জোর দিয়ে বলেছেন। অর্থাৎ এটা যে স্বাধীনতা সংগ্রাম বা যুদ্ধটা যে স্বাধীনতা যুদ্ধ হবে তা তিনি স্পষ্ট বলে গেছেন। কাজেই একভাবে বলতে গেলে মার্চের ভাষণই ছিল প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মার্চের ভাষণে বাঙালির অত্যাচার-নির্যাতন এবং বঞ্চনার ইতিহাস এবং সব থেকে বড় কথা ভাষণের মধ্য দিয়ে একটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার সঠিক দিকনির্দেশনা জাতির পিতা দিয়ে গেছেন। কারণ একটা গেরিলা যুদ্ধ হবে, সেই যুদ্ধ করতে হলে কী কী করতে হবেসংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলা থেকে শুরু করে যার যা কিছু রয়েছে, তা নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে তিনি বলেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা জানতেন, যে সময় স্বাধীনতার ঘোষণাটা অফিশিয়ালি তিনি দেবেন, সে মুহূর্তে তিনি হয়তো বেঁচে না- থাকতে পারেন। সেজন্য তার ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্যেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাটা দিয়ে গেলেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকে সে সময়ের পূর্ব পাকিস্তান কীভাবে চলবে, জাতির পিতা তার সব দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সব থেকে ঐতিহাসিক ব্যাপার হলো তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে যে ঘোষণা দিতেন, সে নির্দেশনাতেই দেশ চলত। অফিস-আদালত থেকে শুরু করে ট্রেজারি চালান সবকিছু বন্ধ, সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তখন ৩২ নম্বরে। কেমন ছিল সেই নিয়ন্ত্রণ? এর উদাহরণ হিসেবে তিনি স্মৃতি রোমন্থনে বলেন, সে সময় ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশে এলে কোনো বাবুর্চি বাবুর্চিখানায় কাজ করতে চায়নি। বাধ্য হয়ে তখন প্রেসিডেন্ট হাউজ থেকে টেলিফোন আসে, ৩২ নম্বর থেকে বলে দেয়া হয় রান্নাঘরে যেন বাবুর্চিরা কাজ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ধরনের অসহযোগ আন্দোলন পৃথিবীতে আর কোথাও হয়েছে বলে তার জানা নেই। কেননা জাতির পিতা যা যা নির্দেশনা দিয়েছেন, তা দেশের মানুষ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা জনগণের ম্যান্ডেট পেয়ে জনগণের নেতায় পরিণত হন এবং তার কথাই দেশের মানুষ মেনে নিয়েছেন।

যুদ্ধের আন্তর্জাতিক সমর্থনের ক্ষেত্রে কে আক্রমণকারী হবে, আর কে আক্রান্ত হবে, সেটা সমর্থনের ক্ষেত্রে একটা বড় ইস্যু হওয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের জীবনটা ঝুঁকিতে ফেলে বাংলাদেশের মানুষ যেন স্বাধীনতা পায়, সেদিকে লক্ষ রেখেই রণকৌশল হাতে নেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ঠিক যে মুহূর্তে পাকিস্তানি শাসকরা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল, সেই মুহূর্তেই তিনি তার স্বাধীনতার ঘোষণাটা প্রচার করা শুরু করালেন এবং যেহেতু বাঙালিরা পাকিস্তানিদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, সেহেতু পরবর্তী সময়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে কোনো বেগ পেতে হয়নি। তখন বিশ্বজনমত তার পক্ষে (জাতির পিতার)

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক এবং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব বদরুল আরেফিন স্বাগত ভাষণ দেন। জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদযাপন বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন।

সময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, পদস্থ সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন দূতাবাস এবং কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন