পাম অয়েল শিল্প রক্ষায় যূথবদ্ধ ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়া

বণিক বার্তা ডেস্ক

নিজেদের পাম অয়েল শিল্প রক্ষায় যূথবদ্ধ হলো পাম অয়েল উৎপাদনকারী দুই শীর্ষ দেশ ইন্দোনেশিয়া মালয়েশিয়া। পাম অয়েলের বিরুদ্ধে ইউরোপজুড়ে চলা ক্যাম্পেইনের বিরুদ্ধে এমন উদ্যোগ নিল দেশ দুটি। খবর মঙ্গাবে ডটকম।

গত ফেব্রুয়ারিতে জাকার্তায় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের সঙ্গে একজোট হয়ে পাম অয়েলের বৈষম্য সৃষ্টির বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো। বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত পাম অয়েলের ৮৫ শতাংশই দেশ দুটিতে উৎপাদন হয়।

মূলত পাম অয়েলের উৎপাদন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রেইন ফরেস্ট, জলাভূমি, বিপন্ন প্রাণীর আবাস আদিবাসীদের জমির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কারণে ইকোসিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জন্য দায়ী করে পাম অয়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রচারণা চালানো হচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা থেকে।

সম্প্রতি পাম অয়েলভিত্তিক বায়োডিজেলকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ২০৩০ সালের মধ্যে এটিকে বায়োফুয়েলের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার পরিকল্পনা করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইইউর এমন প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইন্দোনেশিয়া মালয়েশিয়া।

মালয়েশিয়ার প্লানটেশন মন্ত্রী মোহাম্মদ খাইরুদ্দিন আমান রাজিলি জানান, পাম অয়েলের উন্নয়নে উভয় দেশ যৌথভাবে কাজ করবে।

সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, উভয় দেশই ইউরোপে চলমান পাম অয়েলবিরোধী প্রচারণার বিরুদ্ধে পাল্টা প্রচারণা চালাতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করার চিন্তা করছে। ইউরোপের এমন পদক্ষেপের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ইউরোপে উৎপাদিত জলপাই তেল, সরিষা, সূর্যমুখী অন্যান্য উদ্ভিজ্জ তেলকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ইন্দোনেশিয়ায় পাম অয়েল-সংক্রান্ত সরকারি তহবিল বিপিডিপি-কেএস।

তহবিলের পরিচালক ইদি আব্দুর রহমান বলেন, আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছি তা পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে নেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, যদি তারা (ইইউ) পাম অয়েলকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত করে তবে আমরা তাদের সরিষা নিয়েও পদক্ষেপ নিতে পারি। তাদের সার ব্যবহার সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

ইন্দোনেশিয়ান ফোরাম ফর দি এনভায়রনমেন্টের নির্বাহী পরিচালক নূর হেদায়াতি বলেন, যে পরিমাণ অর্থ শক্তি প্রচারণার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে তা পাম অয়েল শিল্পের স্থায়িত্ব উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা হলে বরং ফলপ্রসূ হতো। সরকারের প্রচারণা ইন্দোনেশিয়ার পরিবেশ জনগণের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না। সেই সঙ্গে সরকারকে পাম অয়েলের সুনাম বৃদ্ধিতে অর্থ খরচ বন্ধ করে প্রাকৃতিক বনাঞ্চলে পাম গাছ লাগানো বন্ধ করতে আহ্বান করেন তিনি।

অবশ্য সরকারের এমন উদ্যোগের প্রতি বেশ ইতিবাচক স্বাগত জানিয়েছে পাম অয়েল শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

ইন্দোনেশিয়ার বায়োডিজেল উৎপাদনকারী সমিতির প্রধান মাস্টার পারুলিয়ান টুমানগর বলেন, এনজিওগুলো পাম অয়েল শিল্পের ওপর তাদের ইচ্ছামতো অভিযোগ আনে। বিশেষ করে তারা বন্যার জন্য পাম অয়েলকে দায়ী করে।

তবে পরিবেশবিদরা বলছেন, বন উজাড় করে পাম অয়েল গাছ বৃদ্ধি কয়লা খনিগুলো মাটির ভারী বৃষ্টিপাত শোষণ করার ক্ষমতাকে কমায়, যা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণকে ত্বরান্বিত করে।

তবে ইন্দোনেশিয়ার পরিবেশমন্ত্রী সিটি নূরবায়া বাকের এমন তথ্যকে ভুল বলে মন্তব্য করেছেন।

পাম অয়েল শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, অন্যান্য উদ্ভিজ্জ তেলের চেয়ে পাম গাছ ১০ গুণ বেশি তেল দেয়। পরিবেশবাদী এনজিও মাদানির নির্বাহী পরিচালক টেগু সুরিয়া বলেন, উচ্চফলন কখনো পরিবেশ নষ্ট করার মতো খারাপ চর্চার পক্ষে যুক্তি হতে পারে না। সরকার ব্যবসায়ীদের উচিত পরিবেশ রক্ষার প্রতি তাদের দায়বদ্ধতার কথা ভাবা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন