বঙ্গবন্ধু ছিলেন ‘রাজনীতির কবি’। তার আপসহীন সংগ্রামী জীবন, বজ্রকণ্ঠ নিঃসৃত নান্দনিক ভাষণ বাঙালিকে পথ দেখিয়েছে। আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যুগান্তকারী ঐতিহাসিক ভাষণের স্মারক হিসেবে দিনটি অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’-এর অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সময়ে সময়ে বিভিন্ন চলচ্চিত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের ব্যবহার লক্ষ করা গেছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দেয়া স্লোগানও শোনা যায় বড় পর্দায়
স্লোগানে মুজিব
ওরা এগারোজন চলচ্চিত্রের ১৪ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের সময় মিছিলের দৃশ্য দেখানো হয়। মিছিলে স্লোগান শোনা যায়, ‘জয় বাংলা, জয় বাংলা,’ ‘তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব শেখ মুজিব।’
আবার চলচ্চিত্রের ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডে গিয়ে ‘জয় বাংলা’;
তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব শেখ মুজিব’;
‘পদ্মা মেঘনা যমুনা তোমার আমার ঠিকানা’;
‘তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ’—ঐতিহাসিক স্লোগানগুলোর সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে। ওরা এগারোজন চলচ্চিত্রে দুবার স্লোগানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উচ্চারিত হয়।
অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী চলচ্চিত্রের শুরুতে সিনেমা-সংশ্লিষ্ট শিল্পী ও কলাকুশলীদের নাম প্রদর্শন শেষ হলে একজন নারীকে দেখানো হয়। কোমরে কলসি, চুল ছেড়ে দেয়া। দৃশ্য দেখে বোঝা যায় তিনি বীরাঙ্গনা। ব্যাকগ্রাউন্ডে স্লোগান ভেসে আসে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ। জয় বাংলা জয় বাংলা।’ চলচ্চিত্রের ৬ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডে গিয়ে এ স্লোগান প্রদর্শন করা হয়। এর মিনিট তিনেক পর ৯ মিনিট ৫ সেকেন্ড বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে স্লোগান ভেসে আসে ‘জয় বাংলা জয় বাংলা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ।’ আরেকবার স্লোগানে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করা হয়। ১ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের সময় ‘জয় শেখ মুজিব’ বলে স্লোগান দেয়া হয়। এর বাইরে শুধু ৪ মিনিটের সময় একবার স্লোগান প্রদর্শিত হয়। সেখানে শেখ মুজিবকে নিয়ে কোনো স্লোগান দেয়া হয়নি।
আমার জন্মভূমি চলচ্চিত্রের ১ ঘণ্টা ২৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের সময় মিছিল দেখানো হয়। মিছিলের স্লোগানে বলা হয় ‘জয় বাংলা জয় বাংলা। তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব শেখ মুজিব।’
সংগ্রাম চলচ্চিত্রের শুরু হয় মিছিল ও স্লোগান দিয়ে। ‘জয় বাংলা। জয় বাংলা। তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ। তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ। তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব শেখ মুজিব। তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব শেখ মুজিব।’
শেখ মুজিব নামটি প্রথম উচ্চারিত হয় চলচ্চিত্রের ২ মিনিট ১৭ সেকেন্ডে এসে। ১২ মিনিট পর ১৪ মিনিটের সময় পুনরায় ‘জয় বাংলা। জয় বাংলা। জয় বাংলা। জয় বাংলা। জয় বাংলা। তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব শেখ মুজিব। আমার নেতা তোমার নেতা শেখ মুজিব শেখ মুজিব। সব কথার শেষ কথা বাংলার স্বাধীনতা। সব কথার শেষ কথা বাংলার স্বাধীনতা। জয় বাংলা জয় বাংলা’
স্লোগানে মুখরিত হয় বড় পর্দা।
চলচ্চিত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ
গবেষণায় দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর পরই। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ মহাকাব্যিক ব্যঞ্জনাস্নাত। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বিভিন্ন চলচ্চিত্রে ব্যবহার ও উপস্থাপন করা হয়েছে।
ওরা এগারোজন ছবির ১৪ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে প্রদর্শিত মিছিল শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ দেখানো হয়। ভাষণে বলা হয়, ‘ভাইয়েরা আমার, তোমাদের আমার উপর বিশ্বাস আছে? আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই। সাত কোটি মানুষকে দাবায় রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবাতে পারবে না। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেবো, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের ভিডিওচিত্রের ৪৫ সেকেন্ডে দেখানো হয়।
অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী চলচ্চিত্রের ১ ঘণ্টা ৩ মিনিট ২০ সেকেন্ডে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চ ভাষণ প্রচারিত হয়। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ থেকে শোনা যায়, ‘আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোকদের উপর হত্যা করা হয়, তোমাদের প্রতি আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।’
১ ঘণ্টা ৮ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চ ভাষণের অংশবিশেষ আবারো শোনা যায় ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।’
সূত্র: লেখক ও চলচ্চিত্র সমালোচক অনুপম হায়াৎ রচিত গ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু ও চলচ্চিত্র’
