চুয়াডাঙ্গা পরিবার-পরিকল্পনা উপপরিচালকের কার্যালয়

অনিয়ম ধরা পড়ায় ৩ বছর বন্ধ ভবন নির্মাণকাজ

রিফাত রহমান, চুয়াডাঙ্গা

সিডিউল টেম্পারিং করে নির্মাণকাজে পাথরের বদলে ইটের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছিল। সে অনিয়ম ধরা পড়ায় তিন বছর ধরে চুয়াডাঙ্গা পরিবার-পরিকল্পনা উপপরিচালকের নতুন কার্যালয় ভবন নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো শেষ হয়নি। কোটি ৬০ লাখ টাকার কাজে অনিয়ম করলেও এরই মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিলের কোটি ১৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী গণেশ চন্দ্র সিংহ (বর্তমানে নড়াইল জেলায় কর্মরত) বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে চুয়াডাঙ্গা পরিবার-পরিকল্পনা উপপরিচালকের নতুন কার্যালয় নির্মাণকাজের অনুমোদন পাওয়া যায়। এরপর মাটি ভরাট চারদিকে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। চারতলা ভবনের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করার সব প্রক্রিয়া শেষ করে ২০১৮ সালের মার্চ সিরাজগঞ্জ জেলার মেসার্স পিয়াস কনস্ট্রাকশনকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। সে মোতাবেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে।

চুয়াডাঙ্গার স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদ আলম জানান, ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদ ঢালাইয়ের পর গোপনে অভিযোগ পেয়ে ঢাকার প্রধান কার্যালয় খুলনা থেকে তদন্ত দল এসে নিশ্চিত করে যে ঢালাই কাজে পাথরের বদলে ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া ওই কাজে আরো অসংগতির প্রমাণ পায় তদন্ত দল। এরপর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন ঠিকাদার জানান, চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর জেলার দায়িত্ব পালনকারী তত্কালীন কুষ্টিয়া স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমানে দিনাজপুর জেলায় কর্মরত) এএফএম আনিসুর রহমান উপসহকারী প্রকৌশলী গণেশ চন্দ্র সিংহ আর্থিক সুবিধা দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাথরের পরিবর্তে ইটের খোয়ার ব্যবহার লিখে নেয়। ওই সিডিউলের ফটোকপি ব্যবহার করে ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করতে থাকে তারা। ভবনটির প্রায় সবকিছুই ত্রুটিপূর্ণ অবস্থায় নির্মাণ করা হয়েছে, যা তদন্ত দলের কাছে ধরা পড়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর্থিক সুবিধার বিষয়টি অস্বীকার করেন নির্বাহী প্রকৌশলী এএফএম আনিসুর রহমান উপসহকারী প্রকৌশলী গণেশ চন্দ্র সিংহ। তারা বলেন, প্রভাবশালী হওয়ার কারণে অনেক সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হয় না। কারণেই সমস্যাটি হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী হাসান আল মামুন জানান, সম্প্রতি একটি দল এসেছিল অর্ধনির্মিত ভবন পরিদর্শন করতে। তাতে বোঝা গেছে খুব তাড়াতাড়ি ভবন নির্মাণকাজ শুরু হবে।

কুষ্টিয়া স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জলিলুর রহমান বলেন, কাজ শুরু হওয়ার বিষয়টি এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কোটি ১৫ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এটার ২৫ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়েছে।

ডে টু ডে প্রকল্পের ২০ লাখ টাকা ভাগবাটোয়ারা

এদিকে চুয়াডাঙ্গার কয়েক জন ঠিকাদার প্রমাণসহ অভিযোগ করেছেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ডে টু ডে প্রকল্পের ২০ লাখ টাকার কোনো কাজ না করেই ভাগবাটোয়ারা করে নেয়া হয়েছে। ভাগবাটোয়ারা হয়েছে কুষ্টিয়া নির্বাহী প্রকৌশলী চুয়াডাঙ্গার তত্কালীন উপসহকারী প্রকৌশলী গণেশ চন্দ্র সিংহর মধ্যে।

সূত্র জানায়, কুষ্টিয়া স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জলিলুর রহমান, ২০ লাখ টাকার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর জেলায় লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে নিজে ১২ লাখ টাকা রেখে দেন। টাকা মূলত হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ প্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় হওয়ার কথা। কিন্তু চুয়াডাঙ্গা জেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয় থেকে তার ঘনিষ্ঠ কয়েক জন ঠিকাদারের প্যাড ব্যবহার করে বিলের টাকা উঠিয়ে নেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই উঠিয়ে নেয়া বিলের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জনের দপ্তরে নতুন এয়ারকন্ডিশন সরবরাহের বিলও রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন এএসএম মারুফ হাসান বলেন, দপ্তরে কোনো নতুন এয়ারকন্ডিশন লাগানো হয়নি। প্রসঙ্গে উপসহকারী প্রকৌশলী গণেশ চন্দ্র সিংহ বলেন, কোনো কারণে এটা একটা ভুল হয়েছিল। সিভিল সার্জন বলার পরে সেটা অন্যভাবে সমাধান করে দেয়া হয়েছে। সমাধানের কথা বলার পরও ওই দপ্তরে কোনো নতুন এয়ারকন্ডিশন লাগানো হয়নি।

ব্যাপারে কুষ্টিয়া স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জলিলুর রহমান বলেন, কাজ না করে বিলের টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেয়ার বিষয়টি ঠিক নয়। বিলের টাকা ওঠাতে হলে কাজ তো করতেই হবে। চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ না করে বিলের টাকা উঠিয়ে নেয়ার প্রমাণের ব্যাপারে জানালে তিনি বলেন, এটা কীভাবে সম্ভব বুঝতে পারছি না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন