বগুড়ায় সূর্যমুখীর আবাদ বাড়ছে

এইচ আলিম, বগুড়া

বগুড়ায় সূর্যমুখী ফুলের আবাদ বেড়ে গত কয়েক বছরে দিগুণ হয়েছে। এক সময় শুধু ধুনট সারিয়াকান্দি উপজেলায় সূর্যমুখীর আবাদ হলেও বর্তমানে বগুড়া সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় চাষীরা ফুলের আবাদ করছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফুল থেকে উৎপাদিত তেলের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা লাভের মুখ দেখছেন। ফলে অন্য রবিশস্যের তুলনায় সময় ব্যয়সাশ্রয়ী ফুল আবাদে জেলার কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে। সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তৈরি তেল বাজারের অন্যান্য তেলের চেয়ে ভালোমানের। কোলেস্টেরলমুক্ত হওয়ায় এটির পুষ্টিগুণও বেশি বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, শুরুর দিকে যমুনা নদীর চরাঞ্চলে সূর্যমুখীর আবাদ হতো। পর্যায়ক্রমে এটি অন্যান্য উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে। সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তেল খৈল হয়। ফুলের ক্ষেতে মৌচাক বসিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মধু সংগ্রহ করা যায়। এছাড়া শুকিয়ে যাওয়া গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। সূর্যমুখী বীজ বপণের ৯০-১০৫ দিনের মধ্যেই কৃষকরা ফুল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারেন। এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে প্রায় সাত মণ বীজ পাওয়া যায়। বাজারে পরিমাণ বীজ বিক্রি হয় ১০-১২ হাজার টাকায়।

বগুড়া জেলা সদরের শাখারিয়া ইউনিয়নের গোপালবাড়ী গ্রামের কৃষক পান্না মিয়া প্রথমবার সুর্যমূখী ফুল চাষ করেছেন। সদর উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় ৩৬ শতক জমিতে তিনি সূর্যমুখী ফুল চাষ করেন।

পান্না মিয়া বলেন, সব গাছেই প্রচুর পরিমাণ ফুল ফুটেছে। নতুন করে কলি এসেছে। সেগুলোও ফোটার অপেক্ষায় আছে। বীজ তৈরি হতে সব মিলিয়ে ছয় মাস সময় লাগবে।

বগুড়ার সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী ফুল চাষে খরচ কম। এতে সার ওষুধ কম লাগে। খুব বেশি পরিচর্যাও করতে হয় না। তাছাড়া অন্যান্য তেলবীজের তুলনায় বেশি তেল পাওয়া যায়। পুষ্টিচাহিদা পূরণে সূর্যমুখী তেলের বীজ আমদানি করতে হয়। চাষ বৃদ্ধি পেলে বীজ আমদানি করতে হবে না।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বগুড়া সদরে ২০ জনকে এক বিঘা জমিতে চাষের জন্য প্রণোদনা হিসেবে সূর্যমুখী ফুলের বীজ সার দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজনের জমিতে সূর্যমুখী ফুল দৃশ্যমান হয়েছে। অন্যদের জমিতেও কিছুদিনের মধ্যে ফুল ফুটবে। এখন অনেক কৃষক সূর্যমুখী ফুলের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে আসছেন। ফুলের প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তেল উৎপাদন করা যায়। শতকপ্রতি জমিতে আট কেজি বীজ উৎপাদন করা সম্ভব। এতে তেল উৎপাদন হবে সাড়ে তিন থেকে চার লিটার। প্রতি লিটার তেলের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ২৫০ টাকা। প্রতি শতক জমিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ ২০০ টাকা। এবার ধুনটের নয়টি ইউনিয়নে প্রায় ১০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুল চাষ হয়েছে।

বগুড়ার সূর্যমুখী ফুলচাষীরা জানান, গত পৌষ মাসে কৃষি অফিস থেকে বিনা মূল্যে বীজ সার সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেন তারা। একটি পরিণত গাছ ৯০ থেকে ১১০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়েছে। এরই মধ্যে ফুলে বীজ আসতে শুরু করেছে।

বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান সফিক জানান, কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে বিনা মূল্যে সূর্যমুখীর বীজ, সার এবং অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। চাষের বিভিন্ন দিক কৃষকদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া নিয়মিত খোঁজ রাখা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে এলাকায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ আরো বৃদ্ধি করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন