সব স্তর থেকে আগামী বাজেটে করপোরেট করহার কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য ডিসিসিআইয়ের প্রস্তাবনায় এ আহ্বান জানানো হয়েছে। গতকাল এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের কাছে এ প্রস্তাবনা তুলে ধরেন ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। এ সময় ডিসিসিআইয়ের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি এনকেএ মবিন, সহসভাপতি মনোয়ার হোসেন ও এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা চেম্বারের পক্ষ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের জন্য এনবিআরের কাছে মোট ৩৭টি আয়কর, মূসক ও শুল্কসংক্রান্ত প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। এছাড়া আগামী বাজেটে করোনা-পরবর্তী ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ পুনরুদ্ধারকরণ, সহজ ও ব্যবসাবান্ধব আয়কর ব্যবস্থা, আয়কর ও মূল্য সংযোজন করের আওতা বৃদ্ধি, রফতানি বহুমুখীকরণ ও স্থানীয় শিল্পায়ন উৎসাহিত করা এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণের ওপর জোরারোপের জন্য এনবিআরের প্রতি আহ্বান জানান ডিসিসিআই সভাপতি।
ডিসিসিআইয়ের বাজেট প্রস্তাবনায় প্রগ্রেসিভ হারে সব স্তর থেকে করপোরেট করহার ২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পর্যায়ক্রমে ২ দশমিক ৫ শতাংশ, ৫ শতাংশ ও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে হ্রাস করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া করপোরেট ডিভিডেন্ডের আয়ের ওপর বিদ্যমান ২০ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ কর নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে করে হ্রাসকৃত করপোরেট ট্যাক্স পুনর্বিনিয়োগ করা হলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ কর আহরণের নতুন উৎস সৃষ্টি করা সম্ভব হয়।
প্রস্তাবনা উত্থাপনকালে ঢাকা চেম্বার সভাপতি বলেন, এনবিআর কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী টিনধারী করদাতার সংখ্যা ৫০ লাখ হলেও নিয়মিত ২৪ লাখ টিনধারী রিটার্ন দাখিল করে। এ অবস্থায় করের আওতা বাড়ানোর লক্ষ্যে আয়কর প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও সম্পূর্ণ অটোমেটেড অনলাইন ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেয়ার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করেন তিনি। এর ফলে দেশের কর প্রদান ব্যবস্থা সহজ হবে এবং ব্যবসার পরিবেশ সূচক উন্নয়নে এটি কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া সেবা খাতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রদানের পরও উেস মূসক কর্তন থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি। পাশাপাশি কাঁচামাল ও ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি করার ক্ষেত্রে অগ্রিম কর বিলুপ্ত করার আহ্বান জানান।
ঢাকা চেম্বারের পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারে গ্রিনফিল্ড অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে পাঁচ বছরের জন্য কর অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া স্থানীয় বাজারে পাটপণ্য বিক্রয়ে এনবিআর থেকে মূসক রহিতকরণের সুযোগ আরো পাঁচ বছর বৃদ্ধি করা এবং চামড়া খাতে রফতানি বহুমুখীকরণের জন্য পোশাক খাতের ন্যায় চামড়া শিল্পের করপোরেট করহার ও গ্রিন কোম্পানির জন্য করপোরেট করহার হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে।
চেম্বার সভাপতি তার বাজেট প্রস্তাবনায় চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের বন্ড লাইসেন্সপ্রাপ্তির দীর্ঘসূত্রতা হ্রাস করা ও তৈরি পোশাক খাতের ন্যায় চামড়া খাতেও বন্ড লাইসেন্স প্রতি তিন বছরের জন্য নবায়ন করার দাবি জানান। তিনি ইলেকট্রিক গাড়ি চার্জিং স্টেশন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের ওপর কর অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করেন। এর মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব যানবাহন ব্যবহার করা জনগণের জন্য সহজতর হবে এবং ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গড়ে উঠবে।
এ সময় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, দেশের কর এবং শুল্ক কাঠামা ও আহরণ প্রক্রিয়া সহজীকরণ করতে হবে। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ী সমাজের ভোগান্তি কমবে ও রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বাড়বে। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণের ওপর বেশি মাত্রায় গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। এর ফলে রাজস্ব আহরণের পরিধি বৃদ্ধি পাবে। এ সময় তিনি ব্যবসায়ী ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার মধ্যকার সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করার জন্য শিল্প-কারখানাগুলোকে আরো বেশি হারে কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
