ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ

‘সরকারের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ মানেই রাষ্ট্রদ্রোহ নয়’

বণিক বার্তা ডেস্ক

জম্মু কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনতে চেয়ে দায়েরকৃত এক পিটিশন খারিজ করে দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের অধীনে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের সমালোচনা করায় তার বিরুদ্ধে পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল। মামলার শুনানি চলাকালে সরকারের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলেই তা রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে গণ্য করা যায় না বলে অভিমত দেন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, জম্মু কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তের সমালোচনার অভিযোগ এনে ফারুক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে পিটিশনটি দায়ের করা হয়েছে। এতে আরো অভিযোগ করা হয়েছে, পাকিস্তান চীনের ইন্ধনে মোদি সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন ফারুক আব্দুল্লাহ।

বিচারপতি কিষাণ কাউল হেমন্ত গুপ্তার সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ গতকাল রায় ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে পিটিশনকারী অভিযোগের সপক্ষে বাস্তব কোনো প্রমাণ আনতে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে ৫০ হাজার রুপি জরিমানা করা হয়েছে।

রায় ঘোষণাকালে দেয়া পর্যবেক্ষণে বিচারপতিদ্বয় বলেন, সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মতবিরোধ ভিন্নতা থাকলেই তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ বলে সংজ্ঞায়িত করা যায় না।

এর আগে ফারুক আব্দুল্লাহ গত বছর ইন্ডিয়া টুডেকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, চীনের সহযোগিতায় জম্মু কাশ্মীর বিশেষ মর্যাদা ফিরে পাবে বলে আশা করছেন তিনি। তার বক্তব্য ছিল, তারা (চীনারা) লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় যা করছে, তা প্রধানত ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের জেরেই করছে। সিদ্ধান্ত তারা কখনই মানেনি। আমার প্রত্যাশা, তাদের সহযোগিতা পেলে ৩৭০ অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের মাধ্যমে জম্মু কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ফিরে পাওয়া যাবে।

ফারুক আব্দুল্লাহর বক্তব্য ভারতে মোদি সরকারের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। অন্যদিকে তার দল দ্য ন্যাশনাল কনফারেন্স তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করে বলে, দলের প্রেসিডেন্ট ফারুক আব্দুল্লাহ কখনই সীমান্তে চীনের কার্যকলাপের বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেননি। তিনি যা বলেছেন, তা ছিল গত বছরের আগস্ট পার্লামেন্টে নেয়া ৩৭০ ৩৫- অনুচ্ছেদ বাতিলের প্রতিবাদে জনগণের মনে জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তার বক্তব্যে তিনি জোর দিয়েই বলেছেন, জম্মু কাশ্মীরের কেউই ধরনের পরিবর্তন মেনে নিতে রাজি নয়।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গত বছরের আগস্টে তত্কালীন জম্মু কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে জম্মু কাশ্মীরকে আলাদা দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করারও ঘোষণা দেয় নয়াদিল্লি। ঘোষণার পর ভারত সরকার ওই অঞ্চলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। ঘোষণা করা হয় সান্ধ্য আইন। গ্রেফতার করা হয় অন্তত কয়েক হাজার মানুষকে। পাশাপাশি ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার মাধ্যমে অঞ্চল দুটিকে বাইরের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন