সৌরবিদ্যুৎ ও বস্ত্র খাতের প্রকল্পে অর্থায়ন

৩ হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ড ছাড়বে বেক্সিমকো লিমিটেড

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো) লিমিটেড সুকুক বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করবে। অর্থ কোম্পানিটির দুটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি বস্ত্র খাতের সম্প্রসারণে ব্যয় করা হবে। সুকুক বন্ডটি দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জেও তালিকাভুক্ত করা হবে। গতকাল বেক্সিমকো লিমিটেডের পর্ষদ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বেক্সিমকো লিমিটেডের পর্ষদ সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে, সুকুক আল ইসতিসনা নামে হাজার কোটি টাকার শরিয়াহভিত্তিক বন্ডটির মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ কোম্পানিটির সাবসিডিয়ারি তিস্তা সোলার লিমিটেড করতোয়া সোলার লিমিটেডের নির্মাণকাজে ব্যয় করা হবে। এছাড়া বেক্সিমকোর বস্ত্র খাতের ব্যবসা সম্প্রসারণে যন্ত্রপাতি সরঞ্জামাদি সংগ্রহে বন্ডের অর্থ ব্যয় করা হবে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদন সাপেক্ষে বন্ড ইস্যুর জন্য একটি স্পেশাল পারপাস ভেহিকল গঠন করবে বেক্সিমকো লিমিটেড। ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের ৫০টি সুকুক বন্ড নিয়ে একটি লট নির্ধারণ করা হয়েছে। বন্ডটির একটি লট কিনতে বিনিয়োগকারীদের হাজার টাকা ব্যয় হবে। বন্ডটির ৫০ শতাংশ প্রাইভেট প্লেসমেন্ট, ২৫ শতাংশ বেক্সিমকো লিমিটেডের বিদ্যমান বিনিয়োগকারী এবং ২৫ শতাংশ পাবলিক অফারের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে বিক্রি করা হবে।

এই সুকুকের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। শতাংশ ভিত্তিমূল্যের সঙ্গে মার্জিন যোগ করে ছয় মাস অন্তর বন্ডটিতে বিনিয়োগের বিপরীতে রিটার্ন দেয়া হবে। বেক্সিমকো লিমিটেডের আগের বছরের বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) ঘোষিত লভ্যাংশ ভিত্তিমূল্যের ব্যবধানের ১০ শতাংশ মার্জিন হিসেবে নির্ধারণ করা হবে। যদি লভ্যাংশের হার ভিত্তিমূল্যের সমান বা কম হয় তাহলে সেক্ষেত্রে ভিত্তিমূল্যের হিসাবে রিটার্ন প্রদান করা হবে।

সুকুকে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের শতভাগ বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারে রূপান্তরের সুযোগ থাকবে। এক্ষেত্রে প্রতি বছর ২০ শতাংশ হারে সুকুক শেয়ারে রূপান্তর করা যাবে। গুণিতক হারে অর্থাৎ , ১০, ১৫ ২০ শতাংশ রূপান্তরের সুযোগ থাকছে। কোনো বছর শেয়ারে রূপান্তরের সুযোগ গ্রহণ না করলে সেটি পরবর্তী বছরের করা যাবে। রূপান্তরের মূল্য নির্ধারিত হবে রেকর্ড তারিখের আগের ২০ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেক্সিমকোর শেয়ারের গড় মূল্যের ৭৫ শতাংশ। যদি কোনো বিনিয়োগকারী সুকুককে শেয়ারে রূপান্তর করতে না চান, তাহলে পাঁচ বছরে ওই সুকুকের অবসায়ন হবে।

জানতে চাইলে বেক্সিমকো লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, বেসরকারি খাতে এত বড় অংকের সুকুক বন্ড ইস্যুর ঘটনা এটিই প্রথম। বন্ড ইস্যু করার কারণ হচ্ছে আমরা যখন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য দেশের পাশাপাশি মালয়েশিয়া দুবাইয়ের ইসলামী ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করলাম, তখন তারা জানাল যে প্রচলিত বন্ড ইস্যু করা হলে সেখানে তাদের পক্ষে বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে না। কিন্তু যদি সুকুক বন্ড ইস্যু করা হয় তাহলে তারা সেখানে বিনিয়োগ করতে পারবে। সুকুক বন্ড ইস্যুর সুবিধা হচ্ছে এতে ইসলামী ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোও বিনিয়োগ করতে পারবে। আমাদের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের সরঞ্জামাদি আনা ছাড়া অন্যান্য কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। সুকুকের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ আমাদের বস্ত্র কোম্পানির সম্প্রসারণ দুটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করা হবে। আশা করছি আগামী এক বছরের মধ্যেই বস্ত্র বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে মূল কোম্পানিতে আয় যোগ হবে।

সম্প্রতি বেক্সিমকো লিমিটেড একই গ্রুপের বিদ্যুৎ কোম্পানি বেক্সিমকো পাওয়ার লিমিটেডের (বেক্সপাওয়ার) সাড়ে তিন কোটি শেয়ার কিনেছে। ১০ টাকা ফেসভ্যালুতে ৩৫ কোটি টাকায় বেক্সিমকো হোল্ডিংসের কাছ থেকে  শেয়ার কিনেছে বেক্সিমকো লিমিটেড। তিস্তা সোলার লিমিটেড করতোয়া সোলার লিমিটেডের ৮০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে বেক্সপাওয়ারের কাছে।

সাড়ে তিন কোটি শেয়ার কেনার পর বেক্সপাওয়ারে বেক্সিমকো লিমিটেডের মোট শেয়ার সংখ্যা সাড়ে কোটিতে উন্নীত হয়েছে। ফলে বেক্সপাওয়ারে কোম্পানিটির মালিকানা ৪০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বেক্সপাওয়ারের বাকি ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে এএসএফ রহমান, সালমান এফ রহমান, নাজমুল হাসান এবং . কে. চৌধুরীর হাতে।

উল্লেখ্য, তিস্তা সোলার লিমিটেড গাইবান্ধায় ২০০ মেগাওয়াট করতোয়া সোলার লিমিটেড পঞ্চগড়ে ৩০ মেগাওয়াট সক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্দেশ্যে এরই মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে বাস্তবায়ন চুক্তি (আইএ) করেছে। চীনা কারিগরি অংশীদারের কাছে সোলার কোম্পানি দুটির বাকি ২০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে।

চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো) লিমিটেডের মোট রাজস্ব আয় হয়েছে হাজার ৬৫৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির আয় হয়েছিল ৯৩১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়েছে ৭২৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বা ৭৮ শতাংশ। গতকাল কোম্পানিটির পর্ষদ সভায় অনুমোদিত দ্বিতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন থেকে তথ্য জানা গেছে।

অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ১৬৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে টাকা ৯২ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৫৪ পয়সা।

দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বেক্সিমকো লিমিটেডের মোট আয় হয়েছে হাজার কোটি ১৬ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৪৩৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছে ১৫৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ২০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ইপিএস হয়েছে টাকা ৭৮ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ২৩ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৭৩ টাকা ২৯ পয়সা।

৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেড। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৫১ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল টাকা ৬৩ পয়সা। ৩০ জুন প্রতিষ্ঠানটির এনএভিপিএস দাঁড়ায় ৬৯ টাকা ৩৩ পয়সা, আগের হিসাব বছর শেষে যা ছিল ৬৯ টাকা ৮৩ পয়সা।

সর্বশেষ ঋণমান অনুসারে, বেক্সিমকো লিমিটেডের সার্ভিল্যান্স রেটিং দীর্ঘমেয়াদে ডাবল বি প্লাস স্বল্পমেয়াদে এসটি-ফোর ২০১৯ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে প্রত্যয়ন করেছে ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড (ইসিআরএল)

২০১৯ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল বেক্সিমকো লিমিটেড। তার আগের হিসাব বছরে শতাংশ নগদের পাশাপাশি শতাংশ স্টক লভ্যাংশ পেয়েছিলেন কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারের সর্বশেষ সমাপনী দর ছিল ৮৫ টাকা ৪০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির দর ১১ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৯৮ টাকার মধ্যে ওঠানামা করেছে।

১৯৮৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো লিমিটেডের অনুমোদিত মূলধন হাজার কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৮৭৬ কোটি ৩১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে হাজার ২৪৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৩০ দশমিক ৫৫ শতাংশ উদ্যোক্তা-পরিচালক, ১৩ দশমিক ৭০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, দশমিক ৫১ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগকারী বাকি ৫২ দশমিক ২৪ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।

সর্বশেষ নিরীক্ষিত ইপিএস বাজারদরের ভিত্তিতে শেয়ারের মূল্য-আয় (পিই) অনুপাত ১৬৭ দশমিক ৪৫, হালনাগাদ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যা ২২ দশমিক ২৪।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন