ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানমুখী করতে চায় সিভিসি ফাইন্যান্স

দেশে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যপরিধি দিন দিন বড় হচ্ছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠান সাধারণত করপোরেট গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে থাকে। চিত্র বদলে দিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানমুখী করে তুলতে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয় সুবিধা দিচ্ছে সিভিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড। সম্প্রতি বণিক বার্তার সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে এমনটি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মিনহাজ আহমেদ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আল আমিন হুসাইন

বণিক বার্তা: সিভিসি ফাইন্যান্সের যাত্রা কখন?

সৈয়দ মিনহাজ আহমেদ: ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নিয়ে সিভিসি ফাইন্যান্স আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা করে। আমানতের পাশাপাশি ঋণ লিজ ফাইন্যান্সিংসহ নানা ব্যতিক্রমী সুবিধা দিয়ে সিভিসি ফাইন্যান্স এরই মধ্যে দেশের দ্রুত বর্ধনশীল আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।

সিভিসি ফাইন্যান্সের কার্যপরিধি এখন কেমন?

সিভিসি ফাইন্যান্স গ্রাহকদের লোন সঞ্চয়ভিত্তিক সেবা দিয়ে থাকে। লোন পোর্টফোলিওতে বৃহৎ, মাঝারি ক্ষুদ্র লোন রয়েছে। বর্তমানে আমাদের লোন পোর্টফোলিওর আকার ৪০০ কোটি টাকা। যাত্রা শুরুর পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের আমানত পোর্টফোলিওর আকার ১৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আমরা বিস্তর পরিসরে সঞ্চয় সুবিধা দিয়ে থাকি। এর মধ্যে আমানত দ্বিগুণ তিন গুণ করারও সুবিধা যুক্ত রয়েছে। গ্রাহকরা চাইলে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী আমানতের বিপরীতে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন।

আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রে সিভিসি ফাইন্যান্স কতটা গ্রাহকবান্ধব?

সিভিসি ফাইন্যান্স সাধারণ মেয়াদি আমানতের পাশাপাশি গ্রাহকদের সঞ্চয় মানসিকতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে মাসিক কিস্তিতে জমা করে ছোট ছোট সঞ্চয় থেকে দীর্ঘমেয়াদে মিলিয়নেয়ার/মাল্টি মিলিয়নেয়ার হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। এভাবে সঞ্চিত অর্থ গ্রাহকদের সুন্দর সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। আজকের ছোট ছোট সঞ্চয় দিয়ে গ্রাহকরা আগামী দিনে তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষা, স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপনের জন্য বাড়ি/ফ্ল্যাট ক্রয়, গাড়ি ক্রয়, ভ্রমণের স্বপ্নপূরণ করতে পারবেন। শুধু তা- নয়, সঞ্চয়মুখী মানসিকতা তাদের আগামী দিনগুলোকে আরো সুনিশ্চিত করে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। এছাড়া সিভিসি ফাইন্যান্সে পেনশনারদের জন্য নির্দিষ্ট সময় পরপর মুনাফা উত্তোলনের সুবিধাযুক্ত সঞ্চয় স্কিম রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ে আগ্রহীরা নির্দিষ্ট স্কিমে বিনিয়োগ করে আমানত দ্বিগুণ তিন গুণ করার সুযোগ নিতে পারেন। ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের জন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদি ডিপিএস সুবিধা রয়েছে।

করোনা-উত্তর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সিভিসি ফাইন্যান্স কী ভূমিকা রাখছে?

কভিড-১৯-এর প্রভাবে অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে সাধারণ জনগণের অসহায়ত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। চাকরি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো যে ক্ষতির মুখে পড়েছে তা থেকে উত্তরণের জন্য সিভিসি ফাইন্যান্স বর্তমানে ব্যক্তিগত ক্ষুদ্রঋণের ওপর বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। আমাদের লোন ফাইন্যান্সিং লিজ ফাইন্যান্সিংয়ের পণ্যগুলো বেশ সমৃদ্ধ। আমাদের বৃহৎ মাঝারি আকারের গ্রাহক মিলিয়ে বর্তমানে করপোরেটে ৮৫ শতাংশ ঋণ রয়েছে। আমরা যন্ত্রপাতি যন্ত্রাংশ ক্রয়ে লিজ ফাইন্যান্স, ব্যবসা বাড়ানোর জন্য মেয়াদি ঋণ, বিএমআরই, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে করপোরেট গ্রাহকদের ঋণ সুবিধা দিচ্ছি।

এছাড়া গ্রাহকদের চাহিদা পূরণে আমরা যৌক্তিকভাবে আমাদের লোন পোর্টফোলিওকে আরো যুগোপযোগী করে সাজানোর জন্য কাজ করছি। আমরা সম্ভাবনাময় নারী উদ্যোক্তাদের এসএমই লোন লিজ ফাইন্যান্সিংয়ের সুবিধা দিচ্ছি। এর বাইরে সিভিসি ফাইন্যান্স গ্রাহকদের গৃহ নির্মাণ লোন, অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়ের জন্য লোন, কার লোন এবং পারসোনাল লোনের সুবিধাও দিচ্ছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিভিসি ফাইন্যান্স কতটা সফল?

সিভিসি ফাইন্যান্স দীর্ঘমেয়াদে প্লাস স্বল্প মেয়াদে এসটি-টু রেটিং অর্জন করেছে। আমাদের এনপিএল বর্তমানে শতাংশের নিচে, যা আর্থিক খাতের গড় এনপিএলের চেয়ে কম। এছাড়া আমাদের ১১৫ কোটি টাকার শক্তিশালী মূলধন ভিত্তি রয়েছে। সাফল্যের মূল কারণ পেশাজীবী এবং ব্যবসায়ীদের নিয়ে গঠিত আমাদের অভিজ্ঞ পর্ষদ। আমাদের পর্ষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হোসেনের বিশ্বব্যাংক, ডয়েচে ব্যাংক এবং সিটিগ্রুপ ইউকেসহ বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দুই দশকের বেশি সময় ধরে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমরা সেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম, যারা বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের অধীনে ঋণ বিতরণ করেছে। সিভিসি ফাইন্যান্স অক্সফাম এবং ডিএফআইডির মতো আন্তর্জাতিক সংস্থায় যুক্ত হয়ে গ্রামীণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কৃষি, মাছ চাষ পোলট্রি খাতে ঋণ বিতরণ করেছে।

সিভিসি ফাইন্যান্স কতটা কর্মিবান্ধব এবং বিনিয়োগের তালিকায় কারা রয়েছে?

অভিজ্ঞ তরুণদের সমন্বয়ে সিভিসি ফাইন্যান্স দক্ষ কর্মিবাহিনী গড়ে তুলেছে। সাধারণ বীমা করপোরেশন, আইসিবির রাষ্ট্রায়ত্ত এবং প্রতিষ্ঠিত করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততার ভিত্তিকে আরো শক্তিশালী করেছে। এর সুবাদে খান ব্রাদার্স শিপ বিল্ডিং লিমিটেড, আমানত শাহ ওয়েভিং প্রসেসিং লিমিটেড, মুন রেডি ওয়্যারস লিমিটেড, পদ্মা গ্লাস লিমিটেড, হংকংয়ের কাউলুন ক্যাপিটালের মতো দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠান সিভিসি ফাইন্যান্সে বিনিয়োগ করেছে।

সিভিসি ফাইন্যান্সের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে আমরা সেবা প্রযুক্তিনির্ভর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠার পরিকল্পনা করছি। গ্রাহকদের দোরগোড়ায় আরো দ্রুত এবং উত্তম সেবা দিতে আমরা বেশকিছু পদক্ষেপও নিয়েছি। সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব করপোরেট গভর্ন্যান্স নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে আমরা গ্রাহকদের উন্নত সেবা প্রদানে বদ্ধপরিকর। অধিকতর সেবানির্ভর কিছু নতুন লোন ডেপোজিট প্রডাক্ট আমরা চালু করতে যাচ্ছি। নিকট ভবিষ্যতে আরো উন্নত গ্রাহকসেবা প্রদান করাই সিভিসি ফাইন্যান্সের লক্ষ্য। এছাড়া বর্তমান সরকারের ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের যথাযথ সহযোগিতায়, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার জন্য সিভিসি ফাইন্যান্স ফিনটেক প্রযুক্তির সাহায্যে ডিজিটাল ফাইন্যান্স শুরু করতে চায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন