কভিড-১৯ মহামারীর কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায় গত বছরের মে মাসে জ্বালানি তেল উত্তোলন কমানোর ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ওপেক প্লাস। সে অনুযায়ী তেল রফতানিকারক দেশগুলোর জন্য উত্তোলনের সর্বোচ্চ সীমাও বেঁধে দেয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় জোটভুক্ত দুই দেশ রাশিয়া ও কাজাখস্তানকে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ—দুই মাস উত্তোলনের পরিমাণ বাড়ানোর অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু গত মাসে রাশিয়া সেই অনুমোদিত মাত্রা অনুযায়ী তেল উত্তোলন করতে পারেনি। গত মে মাসের পর এই প্রথমবারের মতো অন্যতম শীর্ষ জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশটির উত্তোলনের পরিমাণ ওপেক প্লাস কোটার চেয়ে কম দেখা গেল। খবর ব্লুমবার্গ।
রাশিয়ার জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক উপাত্ত অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে অপরিশোধিত ও কনডেনসেট মিলিয়ে মোট ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার টন জ্বালানি তেল উত্তোলন করেছে দেশটি। টনপ্রতি ৭ দশমিক ৩৩ ব্যারেল হিসাবে গত মাসে দেশটির দৈনিক উত্তোলনের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৯৫ হাজার ব্যারেল।
প্রাকৃতিক গ্যাসের উপজাত হিসেবে পাওয়া কনডেনসেট ওপেক প্লাস চুক্তির আওতাধীন নয়। এদিকে রাশিয়ার জ্বালানি মন্ত্রণালয় কনডেনসেট ও অপরিশোধিত তেলের কোনটি কী পরিমাণ উত্তোলন করেছে, তা পৃথকভাবে জানায়নি। সুতরাং গত মাসে দেশটি কী পরিমাণ অপরিশোধিত তেল উত্তোলন করেছে এবং তা ওপেক প্লাসের কোটার কত অংশ, তা সুনির্দিষ্টভাবে নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে এর পরিমাণ যদি জানুয়ারিতে উত্তোলনের কাছাকাছিও হয়, তবে বলা যায় গত মাসে দৈনিক আনুমানিক ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি উত্তোলন করেছে রাশিয়া। আর এ আনুমানিক হিসাব সত্য হলে তা হবে ওপেক প্লাসের নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে দৈনিক প্রায় ৩০ হাজার ব্যারেল কম।
অর্গানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক) ও এর অংশীদার দেশগুলোর মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি ও মার্চে রাশিয়া ও কাজাখস্তানের জন্য উত্তোলনের কোটা বাড়ানো হয়েছিল। গত মাসে রাশিয়ার জন্য এ সীমা দৈনিক ৬৫ হাজার ব্যারেল বেড়েছিল। চলতি মাসেও দেশটি একই পরিমাণ অপরিশোধিত তেল বাড়তি উত্তোলনের সুযোগ পাবে।
ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল উত্তোলন নির্ধারিত কোটার চেয়ে কম থাকার নেপথ্যে রয়েছে অস্বাভাবিক ঠাণ্ডা আবহাওয়া। দেশটির ক্রুড পাইপলাইন অপারেটর ট্রান্সনেফট মাসজুড়েই কিছু সাইবেরিয়ান ইনটেক পয়েন্টে ফ্লো কম থাকার তথ্য জানিয়েছে। এর কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি তীব্র শীতের কথা উল্লেখ করেছে।
ওপেক প্লাসভুক্ত অন্য দেশগুলো তাদের উৎপাদন অপরিবর্তিত রাখলেও সৌদি আরব স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দৈনিক উত্তোলনের পরিমাণ বাড়তি ১০ লাখ ব্যারেল কমিয়েছে। এদিকে চলতি মাস শেষে উত্তোলনের মাত্রা কেমন হবে, তা নির্ধারণের জন্য চলতি সপ্তাহে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে ওপেক প্লাস জোটের।
উল্লেখ্য, জ্বালানি তেল সরবরাহ কমালে ওপেক প্লাস দেশগুলোর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার খড়্গ নেমে আসতে পারে এমন কড়া হুঁশিয়ারি থাকার পরও গত বছরের মে মাসে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সরবরাহ কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় জোটের সদস্যরা।
এর আগে প্রতিকূল আবহারওয়ার কারণে রাশিয়ার তেল উৎপাদন সর্বশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ২০১৭ সালের শুরুর দিকে। সে সময় মাত্রই ওপেকের সঙ্গে সহযোগিতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল রাশিয়া। দেশটির জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, সে বছরের জানুয়ারিতে তাদের অপরিশোধিত তেল উত্তোলন কমেছিল দৈনিক ৫ থেকে ১০ হাজার ব্যারেল।