ওয়াল স্ট্রিটে নারীর পদচারণা বাড়ছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

গ্ল্যামার আর স্থূল রসিকতা ব্যবসায়িক জগতের দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি। তবে জগতের দ্বার ধীরে ধীরে নারীদের জন্যও উন্মুক্ত হচ্ছে। অন্তত ওয়াল স্ট্রিটের ব্যাংকিং ফ্ল্যাগশিপ প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের শীর্ষ পদে জেন ফ্রেজারের আসীন হওয়ার ঘটনা নতুন করে সেটিই মনে করিয়ে দিচ্ছে। গত সোমবার থেকে নানা মাধ্যমেই এটি আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে এমন একটি সংস্থার নাম ক্যাটালিস্ট। সংস্থাটির পরিচালক লরেন হ্যারিটনের মতে, জেন ফ্রেজারের এই অর্জন নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক। তবে আরো অনেক দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে, সেকথাও মনে করিয়ে দেন হ্যারিটন।

কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যানগুলো দেখলে বোঝা যায়, আর্থিক সেবা খাতে পুরুষ নারীর অংশগ্রহণে সমতা আনতে এখনো জগদ্দল পাহাড় ডিঙাতে হবে।

ব্রিটিশ বহুজাতিক পেশাদার সেবা নেটওয়ার্ক ডেলয়েটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সেবা খাতে ৫০ শতাংশেরও বেশি কর্মী ছিলেন নারী। তবে শীর্ষ পদ বাদ দিলে পরিচালক সমপদমর্যাদায় ছিলেন মাত্র ২২ শতাংশ।

বর্তমান প্রবণতাগুলো থেকে অনুমান করা যায়, ২০৩০ সালের মধ্যে এই অনুপাতটি ৩১ শতাংশে উন্নীত হবে।

স্বনামধন্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নারী কর্মীরা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, নারীদের একটা মর্যাদাপূর্ণ পদে যেতে পুরুষদের চেয়ে অনেক কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। সব ধরনের তিরস্কারকে উপেক্ষা করে চলতে হয়।

মর্যাদাপূর্ণ পেশা এবং সবচেয়ে বেশি বেতন-ভাতা দেয় এমন খাত, যেমন বিনিয়োগ ব্যাংক, এগুলো এখনো কিন্তু শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের দুর্গ। এসব খাতে এখনো মাঝেমধ্যেই যৌনতাবাদী মন্তব্য করা হয় এবং সেগুলো প্রকাশ্যে আসে।

তবে সেকেলে ধারণা বদলাতে শুরু করেছে।  কর্মী নিয়োগের বৈচিত্র্য আনার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে বিশ্বব্যাপী অস্পষ্ট প্রতিশ্রুতিগুলো ধীরে ধীরে কিছুটা হলেও বাস্তবায়নের দিকে এগোচ্ছে।

এক্সিকিউটিভ কনসালট্যান্সি ফার্মের মুরিয়ে উইলকিনস বলেন, আস্তে আস্তে আরো ব্যবসায়িক নেতারা সংস্কার থেকে বেরিয়ে বরং প্রতিষ্ঠানের কিসে আরো ভালো হয়, সেটিকেই সর্বাগ্রে বিবেচনা করছেন। ফলে একজন কর্মীকে শুধু নারী হিসেবে ভাবার চর্চাটি ক্রমেই আবেদন হারাচ্ছে।

মোট সম্পদের পরিমাণের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ব্যাংক জেপি মরগান চেজে দীর্ঘদিন ধরে নারী কর্মীদের একটি অনানুষ্ঠানিক নেটওয়ার্ক রয়েছে।

২০১৩ সালে জ্যেষ্ঠ পদে থাকা নারীরা বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়িক ট্যুরের কেবল নারীদের আলাদা বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন, যাতে তারা নারী কর্মীদের চিন্তাভাবনা বক্তব্য শুনতে পারেন।

 কোম্পানির প্রধান জেমি ডিমন এই উদ্যোগকে আনুষ্ঠানিক করতে চেয়ছিলেন এবং সে লক্ষ্যে ২০১৮ সালে উইমেন অন দ্য মুভ কর্মসূচি চালু করেন। জেপি মরগানের প্রকল্প পরিচালক ম্যানেজার স্যাম স্যাপারস্টেইন এমনটিই জানিয়েছেন।

উদ্যোগটি কোম্পানির সব নারীর জন্য একটি ক্যারিয়ার বিকাশ কর্মসূচির আয়োজন করে। গত বছর প্রথম অধিবেশনে প্রায় ৫০০ জন অংশ নিয়েছিলেন এবং দ্বিতীয়বারের জন্য দুই হাজার জন আবেদন করেছেন।

বিশ্বব্যাপী সম্পদ ব্যবস্থাপনার দুর্গটি এখনো পুরুষ প্রহরীদের হাতে। সেখানে নারীদের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় গার্লস হু ইনভেস্ট ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী মোট তহবিল বিনিয়োগের ৩০ শতাংশ নারীদের ব্যবস্থাপনায় আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সংগঠনটি।

সংগঠনের হিসাবে বর্তমানে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সংস্থাগুলোয় পরিচালক পর্যায়ে রয়েছে মাত্র শতাংশ আর  হেজ ফান্ডে মাত্র শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করেন নারী।

সংগঠনটি জনপ্রিয় সংস্কারের বিপরীতে এটি প্রমাণ করতে চায় যে নারীরা মোটেই চাকরিতে আটকে যাওয়ার কর্মী নন। সংস্থাগুলোকে শুধু তাদের দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে গিয়ে তাদের খুঁজে নিতে হবে। সূত্র: এএফপি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন