আমাকে ষড়যন্ত্র করে অন্যায়ভাবে ফাঁসানো হয়েছে : সামিয়া রহমান

গবেষণা প্রবন্ধে জালিয়াতির অভিযোগে পদাবনতির শাস্তি পাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান ‘ষড়যন্ত্রে শিকার’ বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাকে ষড়যন্ত্র করে অন্যায়ভাবে ফাঁসানো হয়েছে– বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে।’ 

আজ সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সামিয়া রহমান এসব কথা বলেন। 

সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ বিষয়ে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কঠোর নির্দেশ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি আইনিব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেও আছেন বলে জানিয়েছেন। 

সামিয়া রহমান বলেন, যে গবেষণার লেখার জন্য তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেটা তিনি লেখেননি, জমাও দেননি। এ সংক্রান্ত প্রমাণও তার কাছে আছে বলে দাবি করেন।  

সামিয়া রহমান বলেন, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার নামে অভিযাগ করা হয়। তাতে বলা হয়, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সোস্যাল সায়েন্স জার্নালে আমার এবং সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের নামে প্রকাশিত ‘অ্যা নিউ ডাইমেনশন ইন কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: অ্যা কেস স্টাডি অব কালচারাল ইম্পেরিয়ালিজম’ প্রবন্ধটি শিকাগো জার্নালে প্রকাশিত মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ প্রবন্ধটির অংশ বিশেষ অনুকরণ করে রচিত। প্লেজারিজমের অভিযোগে জার্নালের অ্যাডমিনিস্ট্র্যাটিভ অ্যাসিসটেন্ট অ্যালেক্স মার্টিন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন বলে জানানো হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

তিনি বলেন, শিকাগো জার্নালের যে চিঠির ভিত্তিতে আমার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে দীর্ঘ ৪ বছর ধরে মিডিয়া ট্রায়াল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে শাস্তির সুপারিশ করেছে। ডিমোশন দিয়েছে -সেই চিঠিটিই আদতে সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভুয়া, বানোয়াট।

শিকাগো জার্নাল থেকে অভিযোগ করে এ ধরনের কোনও চিঠি কখনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পাঠানো হয়নি দাবি করে সামিয়া রহমান বলেন, অ্যালেক্স মার্টিন বলে শিকাগো জার্নালে কেউ কখনও কাজ করেনি। এমনকি শিকাগো ইউনিভার্সিটি এবং শিকাগো প্রেসেও অ্যালেক্স মারটিন বলে কেউ নেই। শিকাগো জার্নালের এডিটর ক্রেইগ ওয়াকার নিজে জানিয়েছেন অ্যালেক্স মার্টিন বলে কেউ কখনও শিকাগো জার্নালে কেউ ছিল না, কেউ নেই। চিঠিটি যে সম্পূর্ণ বানোয়াট, তৈরি করা বা মিথ্যা- চিঠিটির বিভিন্ন অংশ পড়লেই দেখতে পাবেন। এসময় তিনি শিকাগো জার্নালের কাছ থেকে প্রাপ্ত ই-মেইলের ছবি তুলে ধরেন।

আত্মপক্ষ সমর্থন করে তিনি বলেন, প্রত্যেকটা বিদেশি জার্নাল বা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ডোমেইন থাকে। এখানে কথিত অ্যালেক্স মার্টিন সেই ডোমেইনও ব্যবহার করেননি। নিজস্ব ব্যক্তিগত মেইল থেকে তিনি এই চিঠি পাঠিয়েছেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ পর্যন্ত চিঠিটির কোনও সফট কপিও আমাকে পাঠায়নি।

তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল পর্যন্ত এই চিঠিটি এবং অ্যালেক্স মার্টিনকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। ট্রাইব্যুনালের সদস্য ড. জিনাত হুদা গণমাধ্যমকেই বলেছেন, অ্যালেক্স মার্টিন চরিত্রটি সন্দেহজনক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফলাইন জার্নালের কপি কীভাবে অ্যালেক্স মার্টিনের কাছে পৌঁছালো? কিন্তু তদন্ত কমিটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে (যে তদন্ত কমিটি চার বছর ধরে মিডিয়াকে আমার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছেন) এই বিষয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চুপ থেকেছে। চিঠিটি ম্যানুফ্যাকচার করা সেটি গুরুত্বপূর্ণ অধিদফতরগুলোই বলছে। আপনারা নিজেরাও যাচাই করতে পারেন।

সামিয়া আরো জানান, একটি মিথ্যা চিঠির ওপর ভিত্তি করে তদন্ত হলে, শাস্তি দেয়া হলে, সেই তদন্তের কার্যকারিতা কি ষড়যন্ত্রমূলক নয়? এটি কি অপরাধ নয়? উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়? দীর্ঘ চার বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে হয়রানি করে শাস্তি দিয়েছে। চিঠির অস্তিত্বই তো মিথ্যা।

এ ‘ষড়যন্ত্রের’ পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ কেউ এবং কিছু শিক্ষক জড়িত রয়েছেন বলে মনে করেন তিনি। তবে তাদের নাম তিনি না বলে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে তা বের করতে সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানান।

এ ঘটনার জন্য জার্নালের রিভিউয়ার ও বোর্ডের শাস্তির সুপারিশ ছিল উল্লেখ করে ঢাবির এ শিক্ষক বলেন, তাদের শাস্তি হয় না।কারণ তারা প্রতিষ্ঠিত বলে বিশ্ববিদ্যালয় তা সুকৌশলে এড়িয়ে যায়, আর বলির পাঁঠা হই আমি। প্রতিহিংসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাজনীতির নোংরামির চরম শিকার হলাম আমি।

প্রসঙ্গত ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান ও অপরাধ বিজ্ঞান (ক্রিমিনোলজি) বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’র ডিসেম্বর সংখ্যায় ‘এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: এ কেস স্টাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’- শীর্ষক একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। 

এ সময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ এবং আইনজীবী তুরিন আফরোজ উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন