বাংলাদেশের
অর্থনীতি এখন
রূপান্তরের মধ্য
দিয়ে যাচ্ছে।
এরই মধ্যে
বাংলাদেশ পূর্ণ
উন্নয়নশীল দেশ
হওয়ার সুপারিশ
পেয়েছে, স্বাধীনতার
সুবর্ণজয়ন্তীতে জাতির
জন্য নিঃসন্দেহে
এটি একটি
বড় অর্জন।
কিন্তু এ
অর্জন যেমন
আনন্দের, তেমনই
অনেক প্রতিবন্ধকতা
ও প্রত্যাশা
নিয়ে আসছে।
এ মুহূর্তে
একটি শক্তিশালী
অর্থনৈতিক খাত
গড়ে তুলতে
হবে, আর
অর্থনীতির সবচেয়ে
সম্ভাবনাময় খাত
হচ্ছে বীমা
শিল্প। কারণ
বীমা শিল্পই
পারে অর্থনৈতিক
সুরক্ষা দিতে।
বিগত ৫০
বছরে বাংলাদেশের
অর্থনীতি যেভাবে
এগিয়েছে বীমা
শিল্পের অগ্রগতি
সেভাবে লক্ষণীয়
নয়। বাংলাদেশে
বর্তমানে সাধারণ
ও জীবন
বীমা খাতে
৭৮টি কোম্পানি
রয়েছে। তার
মধ্যে সরকারি
দুটি সাধারণ
বীমা ও
জীবন বীমা
করপোরেশন এবং
ব্যক্তি খাতে
৪৬টি সাধারণ
ও ৩২টি
জীবন বীমা
কোম্পানি রয়েছে।
এখনো অনেক
বীমা কোম্পানি
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত
নয়। অতএব,
বাংলাদেশের বীমা
শিল্প এক
কথায় ক্ষুদ্র
পরিসরের। বাংলাদেশের
বীমা শিল্প
বৈশ্বিক বীমা
বাজারের তুলনায়
খুবই নগণ্য।
পুনর্বীমা প্রতিষ্ঠান
সুইস রি
প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড
ইকোনমিক আউটলুক
২০১৯’-এর
প্রতিবেদন অনুসারে
বাংলাদেশের বীমা
খাতে জিডিপি
অনুপাতে বীমা
প্রিমিয়াম প্রায়
দশমিক ৫
শতাংশ। এশিয়া
প্যাসিফিক অঞ্চলের
উদীয়মান অর্থনীতির
অন্যান্য দেশের
তুলনায় যা
খুবই কম,
যেখানে ভারতে
৪ শতাংশ,
শ্রীলংকায় ১.২৫
শতাংশ, ভিয়েতনামে
২.২৫
শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায়
২ শতাংশ
এবং ফিলিপাইনে
১.৭২
শতাংশ। বাংলাদেশে
মাথাপিছু বীমা
ব্যয় এখনো
১০ মার্কিন
ডলারের নিচে।
প্রায় সাড়ে
১৬ কোটি
জনসংখ্যার তুলনায়
যা খুবই
নগণ্য, আবার
একই সঙ্গে
অনেক সম্ভাবনার।
কারণ এখনো
বৃহৎ জনগোষ্ঠী
বীমা আওতার
বাইরে।
টেকসই
অর্থনৈতিক ব্যবস্থা
গড়ে তোলার
জন্য একটি
শক্তিশালী বীমা
খাত গড়ে
তোলার এখনই
সময়। এজন্য
বীমা খাতের
সংস্কার, আমূল
পরিবর্তন ও
সময়োপযোগী পদক্ষেপ
নেয়া খুবই
প্রয়োজন। এরই
মধ্যে বর্তমান
সরকার নানাবিধ
পদক্ষেপ নিয়েছে
যেমন বীমা
শিল্পের প্রচার
ও প্রসারের
জন্য প্রতি
বছর ১
মার্চকে বীমা
দিবস হিসেবে
পালন করা
হচ্ছে। এছাড়া
বীমা উন্নয়ন
ও নিয়ন্ত্রণ
কর্তৃপক্ষ প্রতি
বছর বীমা
মেলার আয়োজন
করছে। কিন্তু
সরকার ও
বীমা নিয়ন্ত্রণ
সংস্থাকে আরো
কার্যকর ভূমিকা
পালন করতে
হবে। বীমা
আইন সময়োপযোগী
করে তা
বাস্তবায়নের ব্যবস্থা
করতে হবে।
বীমা
উন্নয়ন ও
নিয়ন্ত্রণ সংস্থা
সম্প্রতি বীমা
প্রতিনিধির জন্য
কমিশন শূন্য
শতাংশে নামিয়ে
এনেছে, যা
কার্যকর হবে
১ মার্চ,
২০২১, নিঃসন্দেহে
এটি একটি
যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
কারণ এর
মাধ্যমে বীমা
কোম্পানিগুলোর মধ্যে
কমিশনের প্রতিযোগিতা
বন্ধ হয়ে
বীমা কোম্পানিগুলোর
নিট মুনাফা
বাড়বে।
সব
বীমা কোম্পানিকে
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত
করতে হবে।
বীমা কোম্পানিগুলোর
পরিশোধিত মূলধন
বাড়াতে হবে,
যা বীমা
কোম্পানিগুলোকে বৈদেশিক
বীমা বাজারে
প্রতিযোগিতা করতে
সহায়তা করবে।
এছাড়া বাংলাদেশ
সরকারের অনেক
মেগা প্রজেক্ট
চলমান। ওই
মেগা প্রজেক্টগুলোর
বীমার জন্য
অনেক সময়ই
বৈদেশিক বীমা
কোম্পানির শরণাপন্ন
হতে হয়।
যানবাহনের জন্য
সম্প্রতি সর্বাঙ্গীণ
বীমা বাধ্যতামূলক
করা হয়েছে।
কিন্তু এখনো
জীবন বীমার
আওতার বাইরে
থাকছেন যাত্রী
বা চালক।
তবে সর্বাঙ্গীণ
বীমার বাস্তবায়ন
নিশ্চিত করা
গেলে সাধারণ
বীমা কোম্পানির
আয় বৃদ্ধি
পাবে। কারণ
সর্বাঙ্গীণ বীমার
প্রিমিয়াম তুলনামূলকভাবে
বেশি।
বীমার
আওতা বাড়াতে
হবে, যেমন
উৎপাদন খাতে
নিয়োজিত শ্রমিকদের
ঝুঁকি বীমা,
সম্পদ বীমা,
কৃষি ও
পশুসম্পদ বীমা
এবং দেশের
সব মানুষের
জন্য স্বাস্থ্য
বীমা। বীমা
কোম্পানিগুলোকে প্রতিনিয়ত
নতুন বীমা
সেবা উদ্ভাবনের
জন্য কার্যকর
পদক্ষেপ নিতে
হবে। এছাড়া
বিটিআরসির তালিকাভুক্ত
মোবাইল সেটগুলো
বীমার আওতাভুক্ত
করার উদ্যোগ
নিতে হবে।
একক
ব্যাংক হিসাবের
মাধ্যমে বীমা
কোম্পানিগুলো তাদের
কার্যক্রম যাতে
পরিচালনা করে
এ ব্যাপারে
কার্যকরী ব্যবস্থা
গ্রহণ করতে
হবে। এ
বিষয়ে বীমা
উন্নয়ন ও
নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে
আরো কার্যকর
ভূমিকা পালন
করতে হবে
এবং নিয়মিত
বাংলাদেশ ব্যাংক
থেকে তথ্য
হালনাগাদ করতে
হবে, যা
বীমা কোম্পানিগুলোর
আর্থিক স্বচ্ছতা
নিশ্চিত করবে।
ব্যাংক
অ্যাসিউরেন্স চালু
করতে হবে।
এতে ব্যাংক
ও বীমা
কোম্পানি অংশীদারিত্বের
মাধ্যমে বীমা
সেবা বিক্রি
করতে পারবে।
এতে সহজে
সর্বসাধারণের মধ্যে
বীমা সেবা
পৌঁছানো সম্ভব
হবে। ফলে
বীমা সম্পর্কে
মানুষের সচেতনতা
বৃদ্ধি পাবে
এবং বীমা
দাবি পূরণ
দ্রুততম সময়ের
মধ্যে সম্ভব
হবে। বীমা
শিল্পের দীর্ঘদিনের
একটি সমস্যা
আস্থার সংকট।
আশা করা
যায় ব্যাংক
অ্যাসিউরেন্স এটা
বহুলাংশে দূর
করবে।
বীমা
শিল্পের আধুনিক
প্রযুক্তির ব্যবহার
নিশ্চিত করতে
হবে। ইন্স্যুরটেক
বাস্তবায়ন করতে
হবে। এটি
একটি ফিনটেক
প্লাটফর্ম, যার
মাধ্যমে উন্নত
দেশগুলো দক্ষতার
সঙ্গে বীমা
সেবাকার্য পরিচালনা
করে। এছাড়া
বীমা শিল্পে
দক্ষ জনশক্তি
আকৃষ্ট করার
লক্ষ্যে বীমা
কোম্পানিগুলোকে আকর্ষণীয়
বেতন কাঠামো
তৈরি করতে
হবে। বীমা
কোম্পানিতে কর্মরত
কর্মকর্তা ও
কর্মচারীদের জন্য
নিয়মিত প্রশিক্ষণের
ব্যবস্থা করতে
হবে। সরকারি
বীমা কোম্পানিগুলোতে
পেশাদারিত্ব বাড়ানোর
লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের
ব্যবস্থা করতে
হবে। বীমা
খাতের উন্নয়নের
লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংক
কর্তৃক প্রদত্ত
সুপারিশ দ্রুততার
সঙ্গে বাস্তবায়ন
করতে হবে।
বীমা কোম্পানির
প্রসারের লক্ষ্যে
বিভিন্ন প্রিন্ট
ও টেলিভিশন
মিডিয়ায় বীমার
প্রয়োজনীয়তা ও
সচেতনতামূলক প্রচার
করতে হবে।
বাংলাদেশের
সমাজ ও
অর্থনীতি এগিয়ে
যাচ্ছে। বীমা
কোম্পানিগুলো এ
এগিয়ে নিয়ে
যাওয়ার ক্ষেত্রে
একটি সহায়ক
ভূমিকা পালন
করতে পারে।
২০৩১ সালের
মধ্যে উচ্চ-মধ্যম
আয়ের দেশের
মর্যাদা এবং
২০৪১ সালের
মধ্যে উন্নত
দেশের মর্যাদা
অর্জনের যে
লক্ষ্য নিয়ে
বর্তমান সরকার
কাজ করে
যাচ্ছে তা
একটি শক্তিশালী
বীমা শিল্প
প্রতিষ্ঠায় অনেকটাই
সহজতর করবে।
উন্নত বিশ্বে
বীমা সরকারের
আয় অর্জনের
অন্যতম বৃহৎ
খাত। এর
জন্য বীমা
কোম্পানিগুলোকে প্রস্তুত
হতে হবে
এবং দেশের
জিডিপিতে অবদান
বাড়াতে হবে।
এর মাধ্যমেই
একটি উন্নত,
সমৃদ্ধ, ক্ষুধামুক্ত
ও স্থিতিশীল
অর্থনীতির বাংলাদেশ
গড়ে তোলা
সম্ভব।
ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সহযোগী অধ্যাপক, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়