কর্মীদের প্রাপ্য পরিশোধে ডিএসই-সিডিবিএলকে নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতিষ্ঠানের মুনাফার নির্দিষ্ট অংশ হিসেবে কর্মীদের প্রাপ্য প্রায় সাড়ে ২২ কোটি টাকা পরিশোধ করেনি দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) বাণিজ্যিক অডিট অধিদপ্তরের একটি নিরীক্ষায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে শোকজ করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দেয়া -সংক্রান্ত এক চিঠিতে ডিএসই, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সিডিবিএলকে কর্মীদের মুনাফার অংশ বণ্টন বিষয়ে যথাযথ কার্যক্রম সম্পাদন করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে অবহিত করতে বলেছে বিএসইসি। সে হিসাবে ডিএসই সিএসইকে মঙ্গলবারের মধ্যেই কর্মীদের প্রাপ্য পরিশোধ করতে হবে।

বিএসইসির উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ডিএসই সিএসই ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন, ২০১৩ সিডিবিএল ডিপোজিটরি আইন, ১৯৯৯-এর অধীনে পরিচালিত হয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম সম্পাদন করছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী পর্যালোচনায় দেখা যায়, শ্রম আইন, ২০০৬ অনুযায়ী মুনাফার শতাংশ কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের বিধান থাকলেও তা পরিপালিত হয়নি। বিষয়ে বাণিজ্যিক অধিদপ্তরের একটি অডিট আপত্তি হাতে পেয়েছে বিএসইসি।

এদিকে বাণিজ্যিক অডিট অধিদপ্তর তাদের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলেছে, ডিএসই সিডিবিএল শ্রম আইন ভঙ্গ করে কোম্পানির মুনাফার শতাংশ কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন করেনি। এর ফলে কর্মচারীরা মোট ২২ কোটি ৪২ লাখ ৭৪ হাজার ৪১২ টাকা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

অধিদপ্তর বলেছে, বিএসইসির নিয়ন্ত্রণাধীন ডিএসই, সিএসই সিডিবিএলের ২০১৭-১৮ থেকে ২০১৯-২০ হিসাব বছরের আর্থিক বিবরণী যাচাই করে দেখা গেছে, ডিএসই সিডিবিএল শ্রম আইন ভঙ্গ করে কোম্পানির মুনাফার শতাংশ কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন না করায় কর্মচারীরা ২২ কোটি ৪২ লাখ ৭৪ হাজার ৪১২ টাকা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

এক্সচেঞ্জেস ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন-২০১৩ অনুসারে ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর ডিএসই, সিএসই সিডিবিএল অলাভজনক প্রতিষ্ঠান থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়। এর মধ্যে ডিএসই লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৮-১৯ হিসাব বছর পর্যন্ত শ্রম আইনের ধারা ২৩২-২৫২ পরিপালন করে কোম্পানির মুনাফার শতাংশ কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন করে এসেছে। এটি ডিএসইর ২০১৯-২০ হিসাব বছরের আগের সব আর্থিক বিবরণীতে ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) খাতে খরচ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু ২০১৯-২০ হিসাব বছরের আর্থিক বিবরণীতে দেখা গেছে, কোম্পানির মুনাফার ডব্লিউপিপিএফ খাতে কোটি ৬৫ লাখ ৯১ হাজার ৪৬২ টাকা আইন অনুযায়ী কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন না করে উল্লিখিত আইনের ব্যাখ্যা চেয়ে শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেয় ডিএসই। এরই ধারাবাহিকতায় কোম্পানির মুনাফার শতাংশ কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন স্থগিত রাখে, যা শ্রম আইনের ধারা ২৩২-২৫২-এর পরিপন্থী।

অধিদপ্তর বলছে, ২০০৬ সালের শ্রম আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা রয়েছে, স্টক এক্সচেঞ্জ শ্রম আইনের ১৫ নম্বর অধ্যায় পরিপালন করবে অর্থাৎ কোম্পানির মুনাফার শতাংশ কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন করবে। ডিএসই আইনটি লঙ্ঘন করলেও বিএসইসির অধীন সিএসই ২০১৯-২০ হিসাব বছর পর্যন্ত শ্রম আইনের ধারা ২৩২-২৫২ পরিপালন করে আসছে।

বাণিজ্যিক অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষায় উঠে এসেছে, সিডিবিএল শ্রম আইন পরিপালন না করে মুনাফার শতাংশ অর্থাৎ ১৯ কোটি ৭৬ লাখ ৮২ হাজার ৯৫০ টাকা কর্মীদের মধ্যে বণ্টন করেনি। ডিএসই সিডিবিএল কেন কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট আইন লঙ্ঘন করে মুনাফার নির্দিষ্ট অংশ কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন করেনি তার ব্যাখ্যা বিতরণের জন্য কী কী কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তা নিরীক্ষককে জানাতে বলা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন