ফ্রান্সে করোনার প্রভাব

আবাসন সংকট নিরসনে ফাঁকা অফিস ব্যবহারের পরিকল্পনা

বণিক বার্তা ডেস্ক

বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বেশির ভাগ দেশ লকডাউনসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। এর মধ্যে বেশকিছু দেশে স্থিতিশীলতা এলেও সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েকটি দেশ আবার নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করছে। করোনার ধাক্কা ব্যবসায়িক অঞ্চল কর্মস্থলগুলো এক রকম ফাঁকা করে দিয়েছে। পাল্টে গেছে কাজের স্থান ধরন। মহামারীতে বাসায় বসে কাজ করার বিষয়টি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইউরোপের অন্যতম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ফ্রান্সেও বাড়ি থেকে অফিস করার বিষয়টি বিস্তৃত হয়েছে। আর এর মাধ্যমে ৩০ শতাংশ আবাসন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। খবর এএফপি।

করোনার ফলে ফাঁকা হওয়া অফিসের জায়গা আবাসন কার্যক্রমে ব্যবহারের কথা ভাবছে ফ্রান্স। তবে তাদের উদ্যোগ সংকট সমাধানে কতটা কার্যকর, তা নিয়ে চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সাধারণ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারলেও রিয়েল এস্টেটসহ অন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হবে না। এছাড়া পুরনো ভবনের নির্মাণশৈলী, অবস্থান এতে ব্যবহার করা উপাদানের কারণেও বিল্ডিং ভেঙে নতুন আবাসন করায় অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

দেশটির গৃহায়ণ-বিষয়ক মন্ত্রী ইমানুয়েল ওয়ারগন বলেছেন, এরই মধ্যে বাসা থেকেই কাজ করার বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে দিয়েছে ফ্রান্স। রিমোট ওয়ার্কিংয়ের গুরুত্ব ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সংকট উত্তরণে পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আবাসনের প্রয়োজনীয়তা এবং শহরমুখিতা রোধ করতে সরকার উদ্যোগ হাতে নিয়েছে বলে জানান তিনি।

ইনস্টিটিউট ডি এলপার্গনে ইমোবিলিয়ার এট ফনসিয়ার (আইইআইএফ)-এর এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, ফ্রান্সের এক-পঞ্চমাংশ চাকরিজীবীর বাসা অফিসের খুব কাছাকাছি। গবেষণা বলছে, ৪০ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যদি করোনার পরে তাদের কর্মীদের বাসা থেকে কাজ (রিমোট ওয়ার্কিং) করানোর উদ্যোগ নেয়, তাহলে তারা তাদের অফিসের জায়গা কমিয়ে আনতে পারবে। এভাবে আসছে দশকের মধ্যেই প্রায় ৩০ শতাংশ অর্থাৎ ৩৩ লাখ স্কয়ার মিটার জায়গা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

উদ্যোগকে বাণিজ্যিক রিয়েল এস্টেট শিল্পের জন্য দুঃস্বপ্ন বলে মনে করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের মনোবল হারাবে, বিশেষ করে যারা সময়মতো ব্যবসায়িক শেয়ারের অর্থ পরিশোধ করেন না। এছাড়া ক্লায়েন্টদের অপরিশোধিত বিল তুলতে হিমশিম খেতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

তবে অফিসের জায়গা কমিয়ে আবাসনে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশকিছু অসুবিধাও রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিসংখ্যান বলছে, করোনার আগেই প্যারিসে অফিস ফাঁকা ছিল শতাংশেরও বেশি। এজন্য এটাকে কাল্পনিক উদ্যোগ বলে সমালোচনা করেছেন তারা। আইইআইএফের চেয়ারম্যান ক্রিস্টিয়ান ডি কারাঙ্গল বলেন, বহুবার আলোচনার পরেও বিষয়টি কোনো বাস্তবতা পায়নি। আর বর্তমান পরিস্থিতি তো আরো আলাদা। রিমোট ওয়ার্কিংয়ের বিষয়টি আমাদের কাছে এখনো অস্পষ্ট। অফিসগুলোকে আবাসনে রূপান্তরের উদ্যোগকে সরকারের পক্ষ থেকে উৎসাহিত করা হলেও কিছু ভবন আছে যেগুলোকে তাদের নির্মাণশৈলীর কারণেই পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।

আবাসন নির্মাণ সংস্থা গামবেটা পরিচালন নরবার্ট ফ্যানকন বলেছেন, ১৯৭০-এর দিকে নির্মিত ভবনে অ্যাসবেসটসের মতো ক্ষতিকর উপাদান ছিল, যা সরাতে কোটি কোটি ডলার খরচ হবে। অফিসকে আবাসিক ভবনে রূপান্তরের প্রক্রিয়াকে সেকেলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটা হলো বাস্তবতার মধ্যে একটি উদ্ভট বিষয়ের সন্নিবেশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন