পদ্মা সেতুর কাজে করোনার প্রভাব

অব্যয়িত থাকছে ২৯০১ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হয় মার্চ। তবে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজে ভাইরাসটির নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে তারও আগে। নববর্ষের ছুটি কাটাতে গিয়ে চীনে গিয়ে আটকা পড়েন প্রকল্পের বিপুল সংখ্যক প্রকৌশলী-কর্মী। ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি শুরু হলে সেতুর কাজের গতি আরো কমে যায়। এসবের প্রভাব পড়েছে চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) বাজেট বরাদ্দে। বরাদ্দের সিংহভাগই অব্যয়িত থাকছে। বাজেটে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয় হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেট বরাদ্দে এটি হাজার ৯৯ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করেছে সেতু বিভাগ। অব্যয়িত থাকছে হাজার ৯০১ কোটি টাকা।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের বরাদ্দ সংশোধনের বিষয়ে জানতে চাইলে সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সেতুর কাজ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি গত বছর বন্যা নদীভাঙনের কারণেও নির্মাণকাজে বিঘ্ন ঘটেছে। কারণে প্রকল্পের বরাদ্দ সংশোধন করতে হয়েছে বলে জানান তিনি।

একাধিকবার সংশোধনের পর পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় গিয়ে ঠেকেছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকায়। এরমধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ২৪ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। চলতি অর্থবছর বরাদ্দের মোটা অংকের অর্থ সংশোধন করলেও ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য সাড়ে হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রক্ষেপণ করেছে সেতু বিভাগ। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ প্রক্ষেপণ করা হয়েছে হাজার ১৭১ কোটি টাকা।

প্রকল্প কার্যালয়ের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৮৪ শতাংশ। এর মধ্যে মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি ৯২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে নদীশাসনের কাজ শেষ হয়েছে ৭৮ শতাংশের মতো। ২০২২ সালের জুনে সেতুটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা জানিয়েছেন সরকারের দায়িত্বশীলরা।

সেতুটি চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীসহ সারা দেশে যাতায়াতে সময় কমবে অন্তত ঘণ্টা। সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা সেতু দেশের জিডিপি শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। পদ্মা সেতুকে ঘিরে গড়ে তোলা হচ্ছে এক্সপ্রেসওয়ে, রেলপথ। সেতুর কাজ যত এগোচ্ছে, ততই বাড়ছে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যতটা প্রাক্কলন করা হয়েছিল, দেশের অর্থনীতিতে তারও বেশি ভূমিকা রাখবে পদ্মা সেতু।

শুধু পদ্মা সেতু প্রকল্পে নয়, করোনার কারণে বাজেট বরাদ্দ সংশোধন করতে হচ্ছে সেতু বিভাগের সবকটি প্রকল্পে। সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৪৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। বরাদ্দ সংশোধন করে ২৫৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেছে সেতু বিভাগ।

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেন টানেল সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে সেতু বিভাগের মাধ্যমে। টানেলটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রকল্পটির জন্য হাজার ৫৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এটি সংশোধন করে হাজার ৪২৫ কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

সেতু বিভাগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ। এখনো ভৌত কাজ শুরু না হলেও প্রাথমিক কাজগুলো গুছিয়ে নেয়ার জন্য চলতি বছরের বাজেটে ৭৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। বরাদ্দ সংশোধন করে ৬১০ কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

ঢাকা শহরে সাবওয়ে (আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো) নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করছে সেতু বিভাগ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রকল্পটির জন্য ১৪০ কোটি বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল, যা সংশোধন করে ১০৫ কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

সবমিলে সেতু বিভাগের উন্নয়ন ব্যয়ের জন্য চলতি অর্থবছরের বাজেটে হাজার ৯৫২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ হাজার ৪৯৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকার প্রস্তাব করেছে সেতু বিভাগ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন