হালুয়াঘাটের দুই সেতু

ভেঙে পড়ার সাত মাসেও হয়নি সংস্কার

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ

গত বছর জুলাইয়ে বন্যার পানির তীব্র স্রোতে ভেঙে যায় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নে কন্যাপাড়া গ্রামের প্রেসিডেন্ট বাড়িসংলগ্ন আন্দাইরা খালের ওপর নির্মিত সেতুটি। ওই বছর সেপ্টেম্বরে ভেঙে যায় একই ইউনিয়নের উত্তর রামনগর এলাকায় একই খালের ওপর নির্মিত অন্য সেতুও। ভেঙে পড়ার পর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও সংস্কার করা হয়নি সেতু দুটি। এতে চলাচলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ২০ গ্রামের মানুষকে। বিশেষ করে অসুস্থ রোগী নিয়ে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। সেতু দুটি সংস্কারে একাধিকবার প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নে কন্যাপাড়া গ্রামের প্রেসিডেন্ট বাড়িসংলগ্ন খালের ওপর ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি ২০১৬ সালের জুনে নির্মাণ করা হয়। সেতু-কার্লভাট নির্মাণ কর্মসূচির আওতায় ৩২ লাখ ৫২ হাজার ৬৫৩ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের কিছুদিন পরই বন্যায় সেতুর নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর ২০২০ সালের বন্যায় সেতুটি ভেঙে যায়। এরপর থেকেই আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বর্ষায় নৌকা শুষ্ক মৌসুমে হাঁটুপানি মাড়িয়ে যাতায়াত করতে হয় তাদের।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে অবস্থা চললেও সেতুটি পুনর্নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন চলাচলকারী জৈতক, গুইংগাজুড়ি, কন্যাপাড়া, রামনগর, দক্ষিণ রামনগর, বনপাড়া, ঝাউগড়া, ধুরাইল, পাবিয়াজুড়িসহ ১০ গ্রামের বাসিন্দাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

অন্যদিকে পাশের গ্রামের উত্তর রামনগর আন্দাইরা খালের ওপর ইউএসএআইডির অর্থায়নে বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ড ভিশন ২০০৫ সালে প্রায় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ করে। সেতুটি ২০২০ সালে বন্যায় ভেঙে যায়। এতে আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষও চরম দুর্ভোগে পড়েছে। সেতুর পাশে দুটি গোরস্তান, দুটি ঈদগাহ মাঠ একটি মসজিদ রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, সেতু না থাকায় আমরা কী কষ্টে আছি বুঝাতে পারব না। শুধু ভাঙা সেতুর কারণে আমাদের অন্য এলাকার মানুষ আগের মতো মূল্যায়ন করে না। আত্মীয়তা করতে চান না। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় আমরা কৃষিপণ্যেও ন্যায্যমূল্য পাই না। রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতে পারি না। আগে ভাঙা সেতু দিয়ে যান না চললেও হেঁটে চলতে গিয়ে অনেকে অনেক সময় দুর্ঘটনায় পড়েছেন। ফলে এখন আর কেউ ভাঙা সেতু দিয়ে হেঁটেও পার হন না। আমরা এর দ্রুত সংস্কার বা নতুন সেতু চাই।

রামনগর গ্রামের স্বপন মিয়া বলেন, করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকলেও মাদ্রাসা খোলা থাকায় প্রতিদিন ছাত্ররা মাদ্রাসায় যায়। ভাঙা সেতুর পাশ দিয়ে শিশুদের খুবই সাবধানে চলাচল করতে হয়। অভিভাবকরা খুব দুশ্চিন্তায় থাকি।

আব্দুল্লাহ নামে একজন মাদ্রাসার ছাত্র বলেন, আগে আমরা মাদ্রাসায় সাইকেল নিয়ে চলাচল করতাম। এখন আমাদের হেঁটে চলাচল করতে হয়। আমরা এখানে সেতু চাই।

ধুরাইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ওয়ারিছ উদ্দিন সুমন জানান, দুটি সেতুই এলাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্থানীয় সংসদ সদস্যকে অবহিত করেছি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আলাল উদ্দিন বলেন, আমি সেতুর বিষয়ে অবগই নই। খোঁজ নিয়ে দেখি। সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান, দুটি সেতু নির্মাণ নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসারের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন