গ্লোবাল ব্রিটেন

জনসনের সামনে বাধা ডিঙানোর চ্যালেঞ্জ

বণিক বার্তা ডেস্ক

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মতো এত বড় প্রভাবশালী একটি জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়াটা মুখের কথা নয়। ব্রিটেন সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুদূরপ্রসারী একটি লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে। আর তা হলো একটি প্রচ্ছন্ন ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে বৈশ্বিক বাণিজ্যে স্বকীয় অবস্থান তৈরি করে নেয়া। ব্রেক্সিটের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে সেই লক্ষ্য পূরণে এক ধাপ এগিয়েছে যুক্তরাজ্য। কিন্তু বন্ধুর পথের বড় বাধাগুলো এখনো পড়ে রয়েছে দেশটির সামনে। গ্লোবাল ব্রিটেন গড়ে তোলার যে স্বপ্নের বীজ নাগরিকদের মনে বপন করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এসব প্রতিবন্ধকতা ডিঙানোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে তার জন্য। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণাপত্রে এমনটাই বলা হয়েছে। খবর দ্য ন্যাশনাল নিউজ।

বরিস জনসন যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন তখন তার প্রথম প্রতিশ্রুতি ছিল যুক্তরাজ্যকে এমন এক অবস্থানে নিয়ে যাওয়া, যেখানে বসে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ছড়ি ঘোরাতে পারবে দেশটি। আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে ইইউর প্রভাবমুক্ত হয়ে অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে স্বতন্ত্র বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে ব্রিটেনকে। বিদ্যমান বাজারগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন বাজারও তৈরি করতে হবে তাদের। কিন্তু অংশীদাররা তো আর এমনি এমনি চুক্তি করতে চাইবে না দেশটির সঙ্গে। তাদের সঙ্গে বাণিজ্যে লাভ আছেব্রিটেনকে এমন ভাবমূর্তি তৈরি করতে হবে। জনসন প্রশাসনের জন্য এটিই এখন অগ্রাধিকারের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উদ্ভূত নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জনসনকে দলমত নির্বিশেষ বিজ্ঞজনদের সহায়তা নিতে হবে বরিস জনসন তার প্রশাসনকে। সেই কাজে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে রাজনীতি, অর্থনীতি কূটনীতিতে বিশেষজ্ঞ একটি প্রভাবশালী গ্রুপ। কীভাবে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করতে হবে, যার সুবাদে দেশটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পরবর্তী পরাশক্তি হয়ে উঠতে সক্ষম হবে, সে বিষয়ে একটি ব্যবস্থাপত্র তুলে ধরেছেন তারা। আর তা প্রকাশ হয়েছে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ফাইন্ডিং গ্লোবাল ব্রিটেন শীর্ষক গবেষণাপত্রে।

রাজনীতি অর্থনীতি বিষয়ে ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় চিন্তাবিদদের একজন এড বলস। গবেষণায় নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি। বলস বলেছেন, ক্ষমতায় আসার সময় গ্লোবাল ব্রিটেন স্লোগানটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন বরিস জনসন। সে হিসেবে এটি একটি রাজনৈতিক স্লোগান। এখন সময় এসেছে সেই রাজনৈতিক স্লোগানকে অর্থনৈতিক বাস্তবতায় রূপ দেয়ার। আর জনসন সরকারের সামনে সেটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ইইউতে যোগ দেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের সামনে এত ব্যাপক পরিসরে অর্থনৈতিক নীতি পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ আর আসেনি। ব্রেক্সিটের পাশাপাশি কভিড-১৯ মহামারী, জলবায়ু এবং চীন, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার মধ্যে চলমান উত্তেজনা ব্রিটেনকে সুযোগ করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেদের শক্তিমত্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর। ইইউ জোটের বাইরে গিয়ে তারা যে নেতৃত্ব দেয়ার সক্ষমতা রাখে, তা প্রমাণের সুবর্ণ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে যুক্তরাজ্যের সামনে।

কভিড-১৯ মহামারীর শুরুর দিকে এটি প্রতিরোধে যুক্তরাজ্যের চরম ব্যর্থতা দেশটির ওপর আস্থায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। তবে ভ্যাকসিন তৈরিতে সাফল্য সেই দৃশ্যপটে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। এখন ব্রিটেনকে দেখা হচ্ছে বন্ধুবৎসল প্রগতিশীল বৈশ্বিক নেতৃত্ব হিসেবে। বিষয়টি বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রেক্ষাপটে শক্ত অবস্থান তৈরিতে বিশেষভাবে সহায়ক হবে যুক্তরাজ্যের জন্য। তবে দেশটিকে একই সঙ্গে ইইউ দেশগুলোর সঙ্গেও সুসম্পর্ক ধরে রাখতে হবে।

বিরোধী দল লেবার পার্টির মুখপাত্র এমিলি থোর্নবেরি বলেছেন, বরিস জনসন বলেছেন, যদি আমরা সবাই এক হয়ে নিজেদের প্রতি বিশ্বাস রাখি, তাহলে গ্লোবাল ব্রিটেন স্বপ্নের বাস্তবায়ন পলকেই হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমাদের সামনে বেশকিছু ঝুঁকি রয়েছে। কারণ ইউরোপে আমাদের বিরোধীরা বাণিজ্যে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে।

এখন এসব প্রতিবন্ধকতা জনসন প্রশাসন কতটা দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে পারবে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্রিটেনের নেতা হয়ে ওঠা তার ওপরই নির্ভর করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন