রাজাপাকসেকে বিশেষ বন্ধু হিসেবে দেখছেন ইমরান খান

বণিক বার্তা ডেস্ক

দুদিনের শ্রীলংকা সফর শেষে বুধবার ইসলামাবাদে ফিরেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সদ্যসমাপ্ত সফরে কলম্বোর আন্তরিক প্রশংসনীয় আতিথেয়তার জন্য লংকান প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসেকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন তিনি। দ্বিপক্ষীয় বিশেষ বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করে ইমরান খানের আশাবাদ, সম্পর্ক সামনের দিনগুলোয় আরো দৃঢ় গভীর হবে।

পাকিস্তান শ্রীলংকার মধ্যে সম্পর্ক আগে থেকেই বেশ গভীর। কারণে শ্রীলংকায় ইমরান খানের অভ্যর্থনাও ছিল অনেক উষ্ণ। কলম্বোয় এসে পৌঁছার পর শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে তাকে অভ্যর্থনা জানান। ইমরান খানকে বরণ করে নেয়া হয় গার্ড অব অনার দিয়ে। রাষ্ট্রীয় এসব আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনার বাইরে ইমরান খানের সফর নিয়ে মাহিন্দা রাজাপাকসের ব্যক্তিগত উচ্ছ্বাসও ছিল অনেক বেশি। নিয়ে একের পর এক টুইট করেছেন তিনি। এমনকি নিয়ে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দুতেও বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন রাজাপাকসে। শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রীর ছেলে নামাল রাজাপাকসে এখন দেশটির যুব ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর সফর চলাকালে কলম্বোয় ইমরান খান হাই পারফরম্যান্স স্পোর্টস সেন্টার স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনিও।

উচ্ছ্বাস দেখিয়েছেন ইমরান খানও। যদিও শ্রীলংকায় এটিই তার প্রথম সফর ছিল না। পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক সাবেক ক্রিকেটার আগেও অসংখ্যবার শ্রীলংকা সফরে গিয়েছেন। বিশেষ করে ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান জাতীয় দলের সঙ্গে বেশ কয়েকবার শ্রীলংকায় ক্রিকেট খেলতে গিয়েছেন তিনি। তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খানের এটিই প্রথম শ্রীলংকা সফর। একই সঙ্গে করোনা-উত্তরকালে কলম্বো সফরকারী প্রথম বিদেশী সরকারপ্রধানও তিনি।

এসব উচ্ছ্বাসের বাইরে শ্রীলংকার কাছে ইমরান খানের সফরের গুরুত্ব অন্যখানে। সফরেই স্পষ্ট হয়ে যায়, প্রতিরক্ষা খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে যাচ্ছে পাকিস্তান শ্রীলংকা। কলম্বোয় ইমরান খান ঘোষণা দিয়েছেন, শ্রীলংকার জন্য প্রতিরক্ষা লাইন অব ক্রেডিট আরো কোটি ডলার সম্প্রসারণ করবে ইসলামাবাদ।

এছাড়া সময় আঞ্চলিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাস সংঘটিত অপরাধ মোকাবেলা এবং মাদক নেশাদ্রব্য চোরাচালান মোকাবেলায় একযোগে কাজ করারও ঘোষণা দেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে ঘোষণা দেয়া হয় গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগিরও।

নিয়ে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা স্থিতিশীলতা রক্ষায় পাকিস্তান শ্রীলংকা উভয়ই অঙ্গীকারবদ্ধ। দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার বর্তমান মাত্রা উভয়ের জন্য সন্তোষজনক। এছাড়া দুই দেশের নিরাপত্তা কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা সংলাপের মাত্রা এখন বেড়েছে, যা নিরাপত্তা খাতে পারস্পরিক সম্পর্কের গভীরতা বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।

ইমরান খানের সফর শ্রীলংকার ক্ষমতাসীন রাজাপাকসে পরিবারের সঙ্গে তার সম্পর্ককে আরো উষ্ণ করে তুলেছে। তার পরও বিষয়টিকে পাকিস্তানের কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখার সুযোগ নেই বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

সফরের নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ইমরান খানের শ্রীলংকান পার্লামেন্টে ভাষণ দেয়ার কথা ছিল। যদিও তার সফর শুরুর আগে গত সপ্তাহেই তার সফরসূচি থেকে বিষয়টি বাদ দেয় কলম্বো। নিয়ে শ্রীলংকা সরকারের বক্তব্য হলো, সময়স্বল্পতা কভিড-১৯-এর কারণে তার সফরসূচি থেকে এটি বাদ দেয়া হয়েছে।

শ্রীলংকা সরকারের বক্তব্যকে মেনে নিতে নারাজ কোনো কোনো পর্যবেক্ষক। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে তারা দাবি করছেন, কলম্বোর আশঙ্কা ছিল, পার্লামেন্টে দেয়া বক্তব্যে ইমরান খান ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের বিষয়টি টেনে আনতে পারেন। এক্ষেত্রে কাশ্মীর ইস্যুসহ নানা বিষয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কের টানাপড়েনগুলো সামনে নিয়ে আসতে পারেন তিনি। শ্রীলংকার পার্লামেন্টে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ধরনের বক্তব্য রাখলে তা কলম্বোকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিতে পারত। মুহূর্তে শ্রীলংকা চাচ্ছে না ভারতের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক আরো খারাপের দিকে যাক। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে বন্দর নির্মাণের চুক্তি বাতিলের ঠিক পর পরই ধরনের পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যেতে চাইছে কলম্বো।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেয়া নানা বক্তব্যে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইমরান খানের কলম্বো সফরকে সাধারণ এক রাষ্ট্রীয় সফরের চেয়ে বেশি কিছু হিসেবে দেখা ঠিক হবে না পাকিস্তানের। কারণে দেশটির সাবেক পররাষ্ট্র সচিব রিয়াজ খোখারও ইমরান খানের সফরসূচি থেকে লংকান পার্লামেন্টে ভাষণ দেয়ার কর্মসূচি বাদ দেয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, পাকিস্তান শ্রীলংকার সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই বেশ ভালো। তামিল বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে কলম্বোর বিজয়ে পাকিস্তান বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। মুহূর্তে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বাইরে অন্য কোনো ইস্যুতে না গিয়ে শ্রীলংকাকে বিপদে না ফেলাই উত্তম।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন